শাহারল ইসলাম ফারদিন
চলতি বছরের ২৮ ফেব্রয়ারি সর্বশেষ ওষুধ পেয়েছিল যশোরের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো। সেই ওষুধ দিয়ে বড় জোর একমাস রোগী সেবা করা গেছে। এরপর প্রায় সাড়ে ৪ মাস ওষুধ ছিল না। দুই-এক ক্লিনিকে দুই-এক প্রকারের সামান্য কিছু ওষুধ থাকলেও রোগীদের প্রয়োজন মেটানো যেত না। অর্থ বছরের গ্যাড়াকলে ওষুধ আসেনি। তাই ফ্রি ওষুধের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছে গ্রামের মানুষ। গত মঙ্গলবার ফের পূর্বের নির্ধারিত ২৭ প্রকার ওষুধ পেয়েছে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো। এর ফলে আগের মতোই বিনামূল্যের ওষুধের মিলছে।
জেলা সিভিল সার্জন অফিস মতে, জেলায় মোট ২৭৯টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। এর মধ্যে যশোর সদর উপজেলায় ৬০টি, মণিরামপুরে ৪৭টি, শার্শায় ৩৯টি, ঝিকরগাছায় ৩২টি, কেশবপুরে ২৯টি, অভয়নগর ও চৌগাছায় ২৬টি এবং বাঘারপাড়ায় আছে ২৬টি। বন্ধ আছে চারটি। এর মধ্যে যশোর সদরের লেবুতলায় একটি, কেশবপুরের ফুলসারায় একটি ও চৌগাছায় দুইটি কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ আছে। কমিউনিটি প্রত্যেকটিতে একজন করে কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) কর্মরত আছেন। এসব ক্লিনিক থেকে প্যারাসিটামল, মেট্রোনিডাজল, অ্যান্টাসিড, হিস্টাসিন, খাওয়ার স্যালাইনসহ ২৭ প্রকারের ওষুধ সরবরাহ করা হয়। বাড়ির পাশে এমন সুবিধায় বারবার প্রশংসিত হয়েছে কমিউনিটি ক্লিনিক। কিন্তু নতুন অর্থ বছরের শুরু হওয়ায় ওষুধ সরবরাহে বিলম্ব হয়। এতে ফ্রি ওষুধ পায়নি অনেকেই। তবে সেই সমস্যা কেটে গেছে।
রোববার সকালে সদরের লেবুতলার কাঠমারা কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি তরিকুল ইসলাম, হৈবতপুর তীরের হাট কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি খায়রুজ্জামান, হাশিমপুর কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি মারুফ হোসেন, নওয়াপাড়ার নওদাগ্রাম কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি মামুনুর রহমানসহ বেশ কয়েকটি ক্লিনিকের সিএইচসিপির সাথে কথা বলে জানা যায়, গ্রামগঞ্জের সাধারণ মানুষ এখানে চিকিৎসা নিতে আসেন। চিকিৎসাসেবা নিতে আসা রোগীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের থেকে এখানে এসে উপকৃত হন বেশি। তবে গত কয়েকমাস এখান থেকে প্রয়োজনীয় ওষুধ পাননি। তবে ওষুধ চলে আসায় গত মঙ্গলবার থেকে তারা পূর্বের মতো ফ্রি ওষুধ দিতে পারছেন।
সদরের আরবপুর বাঁশতলা কলোনির মোড়ের রেহেনা বেগম জ্বর ঠান্ডা নিয়ে সদরের ভেকুটিয়া কমিউনিটি ক্লিনিকে চিকিৎসা সেবা নিতে যান গতকাল। তিনি বলেন, মাঝে চার মাসের মতো ওষুধ পাইনি। ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে খেতে হয়েছে। গত মঙ্গলবার থেকে ৫ টাকার বিনিময়ে সেবার সাথে ফ্রি ওষুধও মিলছে।
সদরের নুরপুর গ্রামের জোৎস্না বেগম জানান, সরকারি হাসপাতালের ডাক্তাররা রোগের কথা শোনার আগেই ওষুধ লেখে ফেলেন। তবে কমিউনিটি ক্লিনিকের দায়িত্বরত সিএইচসিপি ভালো করে রোগের কথা শোনেন। আমাদের ওষুধও দেন। তবে গত কয়েক মাস এখানে শুধু সেবা মিললেও সব ওষুধ পেতাম না। আসলেই বলতো ওষুধ নেই।
কাশিমপুর ইউনিয়নের ডাকাতিয়া কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি লাবনী সুলতানা বলেন, এ ক্লিনিকের আওতায় প্রায় ছয় হাজার মানুষ রয়েছেন। প্রতিদিন গড়ে ৩০ থেকে ৪০ জন রোগী চিকিৎসা নেন। ২৭ প্রকারের যে পরিমাণ ওষুধ পাই, তার মধ্যে সিরাপ, চোখের ড্রপ, মলম, ক্যালসিয়াম দেড়-দুই মাসেই শেষ হয়ে যায়। এরপর হাত গুটিয়ে বসে থাকতে হয়। তিনি আরও বলেন, এখানে প্য্রাাসিটামলের চাহিদা রয়েছে পাঁচ হাজারের উপরে। সেখানে পাওয়া যাচ্ছে তিনহাজার। চাহিদা মতো ওষুধ না পাওয়ার কারণে এখানে রোগীদের চাহিদামতো ওষুধ বিলি করা যাচ্ছে না। চলতি বছরের ফেব্রয়ারির ২৮ তারিখের পর গত মঙ্গলবারে ওষুধ পেয়েছি। এর আগে পাশের খোজার হাট ক্লিনিক থেকে কিছু ওষুধ আনা হয়।
ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. নাজমুস সাদিক রাসেল জানান, কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সপ্তাহে ছয় দিন খোলা থাকে। আর ক্লিনিকগুলো সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত খোলা রেখে সেখানে সেবা কার্যক্রম চলে। তিনি আরো বলেন, সর্ব সাধারণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে সরকার কাজ করছে। ক্লিনিকগুলো নিয়মিত খোলা হয় কিনা, ওষুধ মেলে কিনা এবং সেখান থেকে সেবা প্রাপ্তির বিষয়ে সিভিল সার্জন অফিস মনিটরিং করছে। এজন্য একটি কমিটিও গঠন করা আছে।