নিজস্ব প্রতিবেদক, মণিরামপুর :
যশোরের মণিরামপুরে প্রেমিকাকে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার অপরাধে ধরে এনে পারভেজ হোসেন (২২) নামে এক যুবককে গাছে বেঁধে নির্যাতনের পর ওই যুবক বিষপানে আত্মহত্যা করেছেন এমন অভিযোগ করেন যুবকের স্বজনরা। গত শনিবার রাতে মারপিট ও আত্মহত্যার প্ররোচণার অভিযোগে প্রেমিকার বাবাসহ পাঁচ জনের নামে থানায় মামলা করেন পারভেজের নানা সিদ্দিক ব্যাপারি। এরপর রোববার সকালে মেয়ের বাবা পল্লি চিকিৎক ইমরান হোসেন ও নানা সিরাজুল ইসলামকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ। এ দিন বিকেলে তারা জামিনে ছাড়া পান। সোমবার সকালে মামলার অপর তিন আসামি রোহিতা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান, মেয়ের দাদা আব্দুল করিম ও চাচা কামরুল ইসলাম আদালতে হাজিরা হয়ে জামিন নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
থানায় করা মামলায় সিদ্দিক ব্যাপারি উল্লেখ করেন, তার নাতী বাগডোব গ্রামের পারভেজ হোসেন প্রেমের সূত্র ধরে একাদশ শ্রেণিতে পড়ুয়া প্রেমিকাকে নিয়ে এক সপ্তাহ আগে পালিয়ে যান। ঘটনার দুদিন পর মেয়ের পরিবার ঝিকরগাছা থেকে তাদের (প্রেমিক-প্রেমিকা) দুজনকে ধরে এনে রোহিতা বাজার সংলগ্ন মিজানুর চেয়ারম্যানের বাড়িতে গাছের সাথে বেধে পারভেজকে মারপিট করেন। টের পেয়ে স্বজনরা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে চিকিৎসা করান। এরপর মেয়ের বাবা নানা রকম হুমকি দিতে থাকলে অপমানে গত শুক্রবার দুপুরে বিষপান করে পারভেজ। পরে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসারত অবস্থায় রোববার সকালে তার মৃত্যু হয়।এদিকে মৃত্যুর কিছুক্ষণ আগে জবানবন্দিতে পারভেজ বলেছেন, মেয়ের বাবাসহ তিনজন তাকে ফাঁকা জায়গায় নিয়ে জোর করে কিছু খাইয়ে দিয়েছে। যার ২০ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।
সোমবার সকালে এ বিষয়ে পারভেজের নানা সিদ্দিক ব্যাপারি বলেন, প্রথমে আমি বিষয়টি জানতে পারিনি। পারভেজ আগে কিছু বলেনি। মরার আগে ও সব বলে গেছে। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে পারভেজ রোহিতা বাজারে গেলে ওরে আবার মাইরে বিষ ঢাইলে দেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার আসামি সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, আমার বাড়ি সালিশে ওই ছেলেকে কেউ মারেনি। এখন ভিডিওতে যে মারধর ও বিষ খাওয়ানোর কথা উঠেছে আগে এ ব্যাপারে কিছু শুনিনি। মূলত, ওই ছেলের মা তাকে বকাঝকা করেছে। আবার মেয়েটিও ছেলেটিকে উপেক্ষা করেছে। এসব কারণে ছেলেটি বিষ খেয়েছে।
চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, রোববার দুজনের জামিন হয়েছে। সোমবার আমরা তিনজন জামিন নিয়েছি।
খেদাপাড়া ক্যাম্প পুলিশের ইনচার্জ ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক সমেন বিশ্বাস বলেন, ছেলেটির জবানবন্দির বিষয়ে তদন্ত চলছে। এখনো কোন প্রমাণ পাইনি। আসামিদের জামিনের বিষয়টি শুনেছি। মৃত্যুকালীন জবানবন্দির সতত্যা পেলে মামলায় নতুন ধারা যুক্ত হবে। তখন আসামিদের জামিন বাতিল হবে।
মনিরামপুর থানার ইনচার্জ শেখ মনিরুজ্জামান বলেন, ডাক্তারি রিপোর্ট হাতে না পেলে ভিডিওর বিষয়ে সত্যতা জানা যাচ্ছে না। ছেলেটি স্বেচ্ছায় বিষ খেয়েছে না জোর করে মুখে বিষ ঢেলে দেয়া হয়েছে এটা ময়নাতদন্তের রিপোর্টে জানা যাবে। তবে বাদী মামলায় বলেছে মারপিট ও হুমকি ধামকির পর ছেলেটি বিষ খেয়েছে।