এম আর মাসুদ, ঝিকরগাছা
যশোরের ঝিকরগাছায় মহাসড়ক থেকে রেলস্টেশনে যাওয়ার পথটি কাউন্সিল রোড নামে পরিচিত। এ রাস্তাটিই তরকারি ও মাংসের বাজারে প্রবেশের প্রধান পথ। রাস্তাটি একটি ট্রাক চলাচলের উপযোগী চওড়া করে তৈরি করা হলেও মোটরসাইকেল অথবা পায়ে হেঁটে চলাচলে আধা মিনিটের জায়গায় কতো সময় লাগবে তা বলা মুশকিল। কারণ পুরো সড়কের দু’পাশজুড়ে দোকানপাটের মালামালে ঠাসা। শুধু কাউন্সিল সড়ক না, বাজারের সকল রাস্তা, এমন কী মহাসড়কের জায়গা দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে ফলপট্টি। অভিযোগ রয়েছে অবৈধভাবে ইজারা দিয়ে রাস্তা দখল করে দোকান বসানোর সুযোগ করে দিয়েছে পৌরসভা।
ঝিকরগাছা বাজারের মধ্যে সকল রাস্তায় দোকানপাট, মালামাল আর কাঠ-টিনে বর্ধিত করা হয়েছে ব্যবসালয়। ফুটপাত ও সড়কে অস্থায়ী দোকানের কারণে স্বস্তিতে হাঁটার সুযোগও নেই। এছাড়া দোকানিরা সামনের জায়গায় টংদোকান বসিয়ে ভাড়া দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। ফলে মহাসড়কের দুইপাশে নগরন্নোয়ন প্রকল্পের (সিআরডিপি) ফুটপাত সম্পূর্ণ বেদখল হয়ে গেছে। ফুটপাত ছাড়িয়ে ফলের ও খাবারের দোকানগুলো মহাসড়ক দখল করে রেখেছে। তবে এসব বিষয়ে পৌরসভার কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। পাশাপাশি মাসিক মাসোয়ারায় নিরব ভূমিকা পালন করেছে হাইওয়ে পুলিশ।
সরেজমিনে দেখা যায়, যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের বাসস্ট্যান্ডে রোডের জায়গা দখল করে অবৈধভাবে ফলপট্টি গড়ে তোলা হয়েছে। বাজারের হাড়িকুড়িপট্টি, চুড়িপট্টি, কাপুড়িয়াপট্টি, মাছ বাজারসহ সকল সড়কের উপরে অস্থায়ী দোকানপাট ও দোকানের মালামাল রেখে চলাচলের পথ সংকীর্ণ করে রাখা হয়েছে। ফলে এসব রাস্তা দিয়ে হাঁটাচলার কোনো উপায় নেই পথচারীদের।
ফুটপাতে দোকান বসিয়ে কয়েক বছর ধরে ফল বিক্রয়কারী ইউনুস আলী বলেন, পৌরসভা থেকে ইজারা নেওয়া ব্যক্তিরা প্রতিদিন ৪০ টাকা নিয়ে যায়। দেশি ফল আসলে আলাদা টাকা দিতে হতো এবং দোকানপ্রতি নাভারণ হাইওয়ে পুলিশকে প্রতিমাসে ৫০০ টাকা দিতে হয়। তবে এসব কয়েকদিন ধরে বন্ধ রয়েছে।
কাউন্সিল রোড থেকে কাপুড়িয়াপট্টিতে ঢুকতেই চৌকির উপর বসে থাকা দেশিফল বিক্রেতা শেখ নাজির হোসেন বলেন, প্রতিদিন খাজনা দিতে হয় ২০ টাকা। আর যে দোকানের সামনে বসেছি সেই দোকানদারকে দেই ১৬০ টাকা।
কামাল স্টোরের মালিক ইকবাল হোসেন বলেন, আমি শুধু একটি দোকান থেকে কিছু টাকা নিই। বাকিটা মার্কেট মালিক বসিয়েছে। তবে পথচারিদের চলাচলের সুবিধার্তে এসব দোকান উঠিয়ে দেওয়া উচিত।
ভাই ভাই মার্কেটের আল্লাহর দান বস্ত্রালয়ের প্রোপ্রাটর আব্দুল কাদের বলেন, আমার দোকানে সামনে মার্কেট মালিক অস্থায়ী তরকারির দোকান বসিয়েছেন। এসব দোকান উচ্ছেদে আমরা দোকানদাররা একাধিকবার পৌরসভায় গিয়েছি। তবে কোনো সমাধান পাইনি।
মিতালী হল সড়কের কবির এন্টারপ্রাইজের মালিক ও বিএনপি নেতা হুমায়ন কবির বলেন, ঝিকরগাছা বাজারে যতো ফুটপাত আছে তা সাবেক মেয়র ইজারার নামে অবৈধভাবে টাকা উত্তোলন করে বৈধতা দিতেন। এলাকায় যারা এসব দখলবাজদের সুযোগ করে দিচ্ছে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে এসে শাস্তি দেওয়া হোক। বাজার উৎখাত করে বাসিন্দাদের নির্বিঘেœ চলাচলের জন্য ফুটপাত উন্মুক্ত করে দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
ঝিকরগাছা পৌরসভার প্রশাসক ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কেএম মামুনুর রশীদ বলেন, অবৈধ দোকানপাট ও দখলের বিরুদ্ধে আগামীতে উচ্ছেদ অভিযান চালানোর পরিকল্পনা আছে। সে সময় রাস্তাঘাট, ফুটপাত দখলমুক্ত করা হবে।
