এম আর মাসুদ, ঝিকরগাছা
বাগেরহাট থেকে ফুলের রাজধানী খ্যাত যশোরের ঝিকরগাছার গদখালী-পানিসারা-হাড়িয়া মোড়ে ফুল উৎসবে পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা সেলিম রেজা বলেন, ফুলচাষকে কেন্দ্র করে এ এলাকায় যে পরিবর্তন হয়েছে, তা এখানে না আসলে বুঝতে পারতাম না। এখানে এসে বিভিন্ন ফুল ক্ষেত দেখে ভালো লেগেছে। মিডিয়ায় ফুল উৎসবের খবর শুনে এখানে এসেছি। সাতক্ষীরার কলারোয়া থেকে আগত দর্শনার্থী আবু বকর সিদ্দিকও একই কথা জানান। তবে আবু বকর সরু সড়কের কারণে ভিড়ে ভোগান্তির কথাও বলেন।
শুক্রবার ছিল তিন দিনের ফুল উৎসবের দ্বিতীয় দিন। সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় উৎসব এলাকায় এদিন তিলঠাঁই ছিলনা। এর আগে উৎসব উপলক্ষে ফুল ক্ষেতগুলোকে দৃষ্টিনন্দন ও পানিসারা-হাড়িয়া মোড়ে অবস্থিত রেস্টুরেন্টগুলোকেও ফুল ক্ষেতের আদলে রূপ দেয়া হয়। দর্শণার্থীদের যাতায়াতের জন্য যাত্রীবাহী ভ্যান ও অটোরিকশাগুলোও ফুল দিয়ে সাজানো হয়।
ফুলের বাণিজ্যিক সম্প্রসারণের লক্ষ্যে উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে ফুল রাজ্যকে সবার সামনে তুলে ধরতে এ উৎসবে গতকাল কর্মসূচির ছিল নারী ফুলচাষীদের সাথে সরকারের উন্নয়ন দর্শন সম্পর্কে উঠান বৈঠক ও শিশুদের ফুল বিষয়ক চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দেড় শতাধিক শিশু শিক্ষার্থী এই চিত্রাঙ্কনে অংশ নেয়। কর্মসূচি অংশ হিসেবে আজ শনিবার রয়েছে, উঠান বৈঠকসহ নারী নেতৃত্বে গ্রুপ ভিত্তিক প্রশিক্ষণ কর্মশালা, কৃষক সম্মাননা ও সমাপনী অনুষ্ঠান। এর পাশাপাশি উৎসব প্রাঙ্গণে বৃহত্তর কুষ্টিয়া-যশোর অঞ্চলের কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের কৃষি প্রযুক্তি প্রদর্শনী করা হচ্ছে।
পানিসারা-হাড়িয়া ফুল মোড়ের মনোয়ার ফ্লাওয়ার পার্কের ম্যানেজার মিন্টু হাসান বলেন, শুধুমাত্র আজকে অন্তত তিন হাজার দর্শনার্থী টিকিট কেটে পার্কের (ফুল ক্ষেতে) ভেতরে ঢুকেছেন। ইসমাইল হোসেনের চন্দ্রমল্লিকার সেডের ম্যানেজার আশাদুল ইসলাম বলেন, ফুল ক্ষেত দেখতে এই সেডে আজ এক হাজার লোক টাকা দিয়ে প্রবেশ করেছেন।
ভাই ভাই ফুল বিতানের প্রোপ্রাইটার লোকমান হোসেন বলেন, আজকে শুধু ফুল দিয়ে তৈরি মাথার ব্যান্ড বিক্রি করেছি অন্তত ১০ হাজার টাকার। বুঝতে পারিনি ফুল উৎসব উপলক্ষে এত লোকের সমাগম হবে। যশোর ফুল উৎপাদন ও বিপণন সমবায় সমিতি লিমিটেডের আব্দুর রহিম বলেন, ফুল উৎসবে এলাকাবাসীর মধ্যে উৎসব বইছে।
উৎসবে ফুল উৎপাদক, ফুল ব্যবসায়ী, ফুল সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো অংশগ্রহণ করছে। ২০টি নার্সারি, ৩টি পর্যটন প্যাভিলিয়ন ও ১০টি স্টল সেজেছে উৎসবের সাজে।
ঝিকরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুবুল হক বলেন, ফুলের বাণিজ্যিক সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ফুলরাজ্যকে সবার সামনে তুলে ধরতে এ আয়োজন করা হয়। এতে ব্যাপক সাড়া পড়েছে এবং ফুল উৎসব সফল বলে মনে করছি।
প্রসঙ্গত, ঝিকরগাছার গদখালী অঞ্চলে ১২০০ হেক্টর জমিতে ১১ প্রকারের ফুল বাণিজ্যিকভাবে চাষ হয়। এ এলাকার ৬ হাজার পরিবারের দেড় লাখ মানুষ ফুল চাষের সঙ্গে জড়িত। এ অঞ্চলে প্রতি বছর সাড়ে তিনশ কোটি টাকার ফুল উৎপাদন হয়।
আরও পড়ুন: যশোরে দেশি-বিদেশি লেখকদের মিলনমেলা
২ Comments
Pingback: চৌগাছায় গ্রামের ভিতরে ঢুকে প্রাণ গেল মেছো বাঘের - দৈনিক কল্যাণ
Pingback: সাঙ্গ হলো ফুল উৎসব - দৈনিক কল্যাণ