শাহারুল ইসলাম ফারদিন
বাড়িতে ব্যবহারের জন্য একটি স্ট্যান্ড ফ্যান কিনতে এসেছিলেন গৃহিণী রহিতা সুলতানা। তিনি বলেন, এই গরমে ঘরের ছাদ প্রচন্ড গরম হয়ে উঠছে। যারজন্য বাহিরের ঠান্ডা বাতাশ ঘরে আনতে একটা স্ট্যান্ড ফ্যান দরকার; তাই কিনতে আসা। কিন্তু দাম এতো বেশি যে কিনবো কি না, সে চিন্তা করছি। যশোরে গত কয়েকদিন তীব্র দাবদাহ চলছে। যশোর বিমানবন্দর আবহওয়া অফিস বলছে, ‘জেলায় প্রচন্ড গরম ভাব বিরাজ করছে। এবস্থা থাকবে আরও কিছুদিন।’ এতে দুঃসহ হয়ে উঠেছে জনজীবন। গরমে স্বস্তি পেতে নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা ছুটছেন ফ্যান কিনতে। কোম্পানির দোহায় দিয়ে দোকানিরা ফ্যান প্রতি ১শ থেকে ২শ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছে। তবে দোকানিরা বলছেন, কোম্পানির নির্ধারিত দামেই ফ্যান বিক্রি করা হচ্ছে। তাদের দাবি এখনো পর্যন্ত চার্জার ফ্যানের দাম বাড়েনি। তবে বিদ্যুতের লোডশেডিং বাড়লেই বেড়ে যাবে চার্জার ফ্যানের চাহিদা। তখন পাইকাররা কৃত্রিম সংকট তৈরি করে তার দাম বাড়িয়ে দিবে। তবে ক্রেতারা বলছেন অন্যান্য সময়ের তুলনায় চার্জার ফ্যানের দাম অতিরিক্ত রাখা হচ্ছে।
স্থানীয় বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক্স মার্কেট ঘুরে দেখা দেখা যায়, চার্জার ফ্যান, স্ট্যান্ড ফ্যান, সিলিং ফ্যান কিনতে দোকানে ভিড় জমাচ্ছেন ক্রেতারা। তবে চার্জার ফ্যানের চাহিদা তুলনামূলক বেশি। বাজারে বর্তমানে চার্জার ফ্যান বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকা পর্যন্ত। এছাড়া ১২ ইঞ্চির স্ট্যান্ড ফ্যান ৪ হাজার ৫শ টাকা, আকারভেদে সিলিং ফ্যান বিক্রি হচ্ছে ১৮শ থেকে ৩১শ টাকায়। গত এক সপ্তাহের তুলনায় কোম্পানি ভেদে প্রতিটি ফ্যানের দাম ১শ থেকে ২শ টাকা বেড়েছে। বিক্রেতারা জানান, বেচাকেনাও ভালো। সিলিং ফ্যান, স্ট্যান্ড ফ্যানের চাহিদা বর্তমানে বেশি। বিদ্যুতের লোডশেডিং শুরু হলে চার্জার ফ্যানের চাহিদাও বেড়ে যাবে।
শহরের মাইকপট্টি এলাকার দিপন ইলেকট্রনিক্সের সত্ত্বাধিকারী স্বপন রায় বলেন, গরম আসায় ফ্যানের বিক্রি বাড়ছে। স্ট্যান্ড ফ্যান, চার্জার ফ্যান এগুলোও বিক্রি হচ্ছে। তিনি বলেন, গত বছরের তুলনায় এছর সিলিং ফ্যানের দাম কোম্পানি বাড়িয়েছে। বিআরবি ও যমুনা ৫৬ ইঞ্চি ফ্যান প্রতি বেড়েছে ১শ টাকা, ক্লিক ফ্যানে বেড়েছে ১শ ৫০ টাকা। কোম্পানির নির্ধারিত দামেই আমরা বিক্রি করছি। চার্জার ফ্যানের, বিক্রিও বেড়েছে। তিনি দাবি করে বলেন, আগের দামেই চার্জার ফ্যান বিক্রি হচ্ছে। ডিফেন্ডারের ১২ ইঞ্চির একটা চার্জার ফ্যান বিক্রি হচ্ছে ৩৪শ টাকা, ১৪ ইঞ্চি ৩৮শ টাকা ও ১৬ ইঞ্চি ৪৫শ টাকা।
আরেক ব্যবসায়ী রোকন ইলেকট্রনিক্সের বিক্রয়কর্মী শামীম হোসেন বলেন, গরমে বিভিন্ন আইটেমের ফ্যান বেচাবিক্রি ভালো হয়। ফ্যানের দাম বাড়লে লাভ কম হয়। কাস্টমার অসন্তোষ্ট হয়। অনেক সময় তর্কাতর্কিও হয়। তিনি বলেন, এখনো চার্জার ফ্যানের চাহিদা তেমন বাড়েনি। তবে বিদ্যুতের লোডশেডিং বাড়ার সাথে সাথেই চাহিদা বেড়ে যাবে। চাহিদা বাড়লে সংকট তৈরি হবে। এখন থেকেই ঢাকার পাইকাররা ফোন তুলছেন না। অর্ডার দেওয়া আছে। পণ্য পাঠাচ্ছেন না তারা। তিনিও দাবি করেন আগের দামেই চার্জার ফ্যান বিক্রি হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার শহরের মাইকপট্টি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি দোকানেই ক্রেতাদের ভিড়। কেউ কিনছেন স্ট্যান্ড ফ্যান আবার অনেকে কিনছেন সিলিং ফ্যান। স্ট্যান্ড ফ্যান কিনতে আসা রিয়াজুল ইসলাম জানান, প্রত্যেকটা ফ্যানের দাম বেড়ে গেছে। এত দামে কেনা তো আসলে আমাদের মতো নির্ধারিত আয়ের মানুষের জন্য কষ্ট হয়ে যায়। তবুও দেখছি বাজেটের মধ্যে একটা ফ্যান কিনতে পারি কি না।
চার্জার ফ্যান কিনতে আসা ওমর আলী বলেন, আইপিএসের দাম নাগালের বাইরে। তাই আর একটি চার্জার ফ্যান কিনতে এসেছি। কিন্তু চার্জার ফ্যান কিনতে এসে দেখি মাস খানেকের ব্যবধানে সাড়ে ৩শ টাকা বেশি চাচ্ছে। মাস খানেক আগে ডিফেন্ডারের ১২ ইঞ্চির একটা চার্জার ফ্যান এই মার্কেট থেকেই কিনি ৩ হাজার ৫০ টাকা দিয়ে। সেই ফ্যান এখন ৩৪শ টাকা চাচ্ছে। প্রায় সব দোকানেই একই দাম।
