মহব্বত আলী, চুড়ামনকাটি (যশোর) প্রতিনিধি: মানুষ মানুষের জন্য জীবন জীবনের জন্য কথাটি ভেবেই গত ২১ বছর যাবত অসহায় মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা পল্লী চিকিৎসক নিজাম উদ্দিন আহম্মেদ। আজ পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা ভাতা ও নিজের আয়ের একটি অংশ অসহায় মানুষের জন্য ব্যয় করে যাচ্ছেন তিনি। বাকি জীবনেও তিনি এভাবে সমাজের অসহায় দুস্থদের কল্যাণে কাজ করে যেতে চান।
শুধুমাত্র সমাজের অসহায় মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাওয়ার জন্য পিতার নামে হেকমত মোল্লা সেবা কল্যাণ নামে একটি প্রতিষ্ঠান চালু করেছেন ১৯৯২ সালে। মূলত সমাজের ছিন্নমূল মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর লক্ষ্য নিয়েই কাজ করে যাচ্ছেন সেবা কল্যাণ প্রতিষ্ঠানটি। যার সব অর্থের যোগান দেন বীর মুক্তিযোদ্ধা নিজাম উদ্দিন।
যশোর সদর উপজেলার ছাতিয়ানতলা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা পল্লী চিকিৎসক নিজাম উদ্দীন আহম্মেদ। তিনি ১৯৫৭ সালে জম্ম গ্রহণ করেন। তার পিতা ছিলেন একজন কৃষক। দেশ মাতৃকার টানে তিনি দশম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় যোগদেন মহান মুক্তিযুদ্ধে। প্রশিক্ষণ শেষে ভারত থেকে তিনি যুদ্ধে যোগদেন। যুদ্ধের পর তিনি ১৯৭৩ সালে এসএসসি পাস করেন। এরপর তিনি আর লেখাপড়া না করে ভারত থেকে এলোপ্যাথিকের ওপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে দেশে এসে ডাক্তারী শুরু করেন। বর্তমানে তিনি চুড়ামনকাটি বাজারে ডাক্তারী করেন। দেশ স্বাধীনের পর তিনি নিজেকে আবারো মানুষের কল্যাণে বিলিয়ে দেয়ার স্বপ্ন দেখেন। ধীরে ধীরে শুরু করেন মানুষের কল্যাণে কাজ। সীমিত খরচে তিনি অসহায় মানুষের চিকিৎসা সেবা শুরু করেন।
তিনি বলেন, মানুষের কল্যাণে কাজ করার জন্য নিজের পিতা হেকমত আলীর নামে ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠা করি হেকমত আলী সেবা কল্যাণ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। যার সব ব্যয় করেন নিজের আয়ের টাকা ও মুক্তিযোদ্ধার ভাতার টাকা। আমি প্রতি বছর এলাকায় এতিম, বিধবা ও প্রতিবন্ধীসহ অসহায় মানুষের মাঝে প্রায় ৩-৪ লাখ নগদ টাকা ও বিভিন্ন সামগ্রী বিতরণ করি। তিনি করোনার মধ্যেও চালিয়ে যাচ্ছেন তার সেবা মূলক কর্মকান্ড। প্রতিনিয়তই তিনি খাদ্য সামগ্রি পৌছে দিচ্ছেন অসহায় ছিন্নমূল মানুষের ঘরে ঘরে। এছাড়া তিনি অসহায় মানুষের বাড়িতে টিউবওয়েলের ব্যবস্থা করে দেন।
স্ত্রী সন্তান নিয়ে তিনি বাস করেন চুড়ামনকাটি বাজারের টিন সেটের একটি ভাড়া বাড়িতে। বাড়ি করতে যে টাকা খরচ হবে সেই টাকা দিয়ে তিনি মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চান। তার এই সকল কাজের সহযোগিতা করে থাকেন তার স্ত্রী রাহিমা বেগম ও একমাত্র মেয়ে মধুরিমা মেঘবালা।
বীর মুক্তিযোদ্ধা নিজাম উদ্দীন জানান, ছোট বেলায় তিনি খুব কষ্ট করে লেখাপড়া ও জীবন যাপন করেছেন। তাইতো মানুষের কষ্ট দেখলে তিনি বসে থাকতে পারেন না। নিজের কাছে যা থাকে তাই নিয়ে ছুটে চলেন অসহায় মানুষের কাছে। প্রতি বছর এলাকার বিধবা, এতিম, প্রতিবন্ধীদের মাঝে ৩ থেকে ৪ বার কাপড় খাদ্য সামাগ্রী, নগদ অর্থসহ বিভিন্ন সহযোগিতা করে থাকেন।
এছাড়া তিনি প্রতি বছর এলাকার অসহায় দরিদ্র শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনা মূল্যে বই খাতা কলম ও স্কুলের পোশাক বিতারণ করে থাকেন। চুড়ামনকাটি বাজারে প্রতিষ্ঠিত একমাত্র এতিম খানায় তিনি নিয়মিত উন্নতমানের খাবার ও এতিমদের পোশাক ও বই বিতারণ করেন । বানু বিবি নামের একজন ভিখারিণী জানান, নিজাম উদ্দীন আমাকে সারা বছরই খাদ্য পোশাক ও নগদ টাকা দিয়ে থাকেন। মূলত তার দেয়া অনুদান খেয়েই বেঁচে আছি।
নিজাম উদ্দিন জানান, মানুষের মুখে হাসি ফুটলেই তার ভালো লাগে। তাই তো মানুষের মুখে হাসি ফুটানোর জন্য তিনি কাজ করে যাচ্ছেন। সমাজের বিত্তবানরা যদি সবাই এগিয়ে আসেন তাহলে সবার মুখেই হাসি ফুটবে।
তিনি বলেন, দেশের মানুষের জন্য ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধা করেছিলাম। এখনো মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে যতদিন বেঁচে থাকবো ততদিন কাজ করে যাবো।