•ঠিকাদারের অনিয়মে এক বছরেই দেয়ালে ফাটল, খসে পড়ছে প্লাস্টার
•ত্রুটিপূর্ণ পানির লাইন, ঝুঁকিপূর্ণ বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঝিনাইদহ
বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের সদস্যরা আশা করেছিলেন ‘বীরনিবাস’ নামের যে বাড়ি উপহার তারা পেয়েছেন এতে নিরাপদ বসবাস করতে পারবেন। পরবর্তী প্রজন্ম ওই বীরনিবাসে কাটিয়ে দেবে। কিন্তু অর্থলোভী কিছু ঠিকাদারের অবহেলা আর প্রভাব প্রতিপত্তির কাছে হার মেনেছে তাদের স্বপ্ন। দুই কক্ষের ওই বাড়িগুলো এখন বসবাসের অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে। দেয়ালে ফাটল ধরেছে, খসে পড়ছে সেখানকার প্লাস্টার, মাত্র কয়েকমাস আগে প্রলেপ দেয়া রং উঠে যাচ্ছে।
ত্রুটিপূর্ণ পানির লাইনের কারণে সাবমার্সিবল পাম্পের পানিও তাদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। ঝুঁকিপূর্ণ বৈদ্যুতিক ব্যবস্থার ফলে বসবাস করা অনিরাপদ মনে করছেন বীরনিবাসের বাসিন্দারা। প্রতিকার পেতে শৈলকুপার ইউএনওকে জানিয়েছেন বীরনিবাসের বাসিন্দারা। ইউএনও জানিয়েছেন লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
শৈলকুপার বেড়বাড়ি গ্রামের কয়েকটি বীরনিবাসের সদস্যদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ৬-৭ মাস আগে ওইসব বাড়ি নির্মাতা ঠিকাদার শামিম হোসেন মোল্যা তাদের বাড়িগুলো বুঝে নিতে চাপ দিলে সেগুলো বসবাসের উপযোগী হবার আগেই স্বাক্ষর করিয়ে নেয়া হয়। তারাও বাধ্য হয়ে ওঠেন বীরনিবাসে। বাড়িতে উঠেই তারা দেখতে পান ঘরের দেয়ালে ফাটল ধরেছে, সেখানকার প্লাস্টার খসে পড়ছে, মাত্র কয়েকমাস আগে প্রলেপ দেয়া রং উঠে যাচ্ছে। ত্রুটিপূর্ণ পানির লাইনের কারণে সাবমার্সিবল পাম্পের পানিও তাদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে না, এমনকি ঝুঁকিপূর্ণ বৈদ্যুতিক ব্যবস্থার ফলে পরিবার সদস্যরা অনিরাপদ মনে করছেন। বেড়বাড়ির বীর মুক্তিযোদ্ধা তোরাপ মন্ডলের ছেলে সিরাজুল ইসলাম জানালেন, তার বাবার মৃত্যুর পর শৈলকুপা উপজেলা প্রশাসন তাকে দু’কক্ষের একটি বীরনিবাস উপহার দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর ঘর পেয়ে আনন্দ পেয়েছিলেন তিনি। ভেবেছিলেন পরবর্তী প্রজন্মগুলো এ বাড়িতেই কাটিয়ে দেবে। কিন্তু সব আশায় জল ঢেলে দিয়েছে ঠিকাদারের অতিলোভী মানসিকতা। তিনি খরচ বাঁচাতে গিয়ে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করায় বড়টি বসবাসের অনুপযোগী হয়ে উঠেছে। তিনি জানালেন, বাড়ি হস্তান্তরের সময়ই বুঝতে পারেন দেয়ালে ফাটল ধরতে শুরু করেছে। কিছুদিন পর দেয়ালের প্লাস্টার খসে পড়ছে, সেখান থেকে রঙও পড়ছে ঝরে। পানি সরবরাহের জন্য যে সাবমার্সিবল পাম্প বসানো হয়েছে তাতে পর্যাপ্ত পানি পাওয়া যাচ্ছে না। ওই বাড়িতে বাস করা তাদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছেন তিনি।
ওই গ্রামের উত্তরপাড়ায় আরেকটি বীরনিবাসে বাস করছেন আরেক বীর মুক্তিযোদ্ধা গফুর মন্ডলের পরিবার। গফুর মন্ডলের ছেলে ইমরান হোসেন জানালেন, তার ঘরের চারদিকে দেয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছে। ইমরান হোসেনের স্ত্রী আরিফা খাতুন জানালেন, নিম্নমানের বৈদ্যুতিক সামগ্রী ব্যবহারের কারণে তার বাড়ির লাইনগুলো অকেজো, ঝুঁকিপূর্ণ। দিনরাত থাকেন অন্ধকারে। পানি সরবরাহের ব্যবস্থাও ভালো না, দরজার ওপর থেকে প্লাস্টার খসে পড়ছে মাথার ওপর। শিশু সন্তানদের নিয়ে দুর্ভাবনায় আছেন কখন কি হয়।
ওই গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মোবারক আলীর পরিবার পেয়েছে আরেকটি বাড়ি। তাদের জন্য ভালো কোন খবর নেই। কেননা, অন্যান্য বাড়িগুলোর মতনই সমস্যাগুলো থেকে তারা মুক্ত নন। দিনে দিনে তাদের বাড়িও বসবাসের অনুপযোগী হয়ে উঠছে বলে জানালেন মোবারক আলীর নাতি সোহেল রানা।
এবিষয়ে শৈলকুপার ইউএনও শেখ মেহেদি ইসলাম বলেন, ওই গ্রামের বীরনিবাসের এক সদস্য তাকে মোবাইলফোনে জানিয়েছেন তার বাড়িটি দিন দিন বসবাসের উপযোগী থাকছে না। তিনি এর প্রতিকার চান। ইউএনও জানালেন, বাড়িগুলোর সিংহভাগ কাজ করেছেন ঠিকাদার। আর রং ও পানির পাম্প বসানোর কাজ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় করেছে। ঠিকাদার তার কাজের বিলও তুলে নিয়েছেন। তবে লিখিত অভিযোগ পেলে সমস্যা সমাধানের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।