নিজস্ব প্রতিবেদক
‘১৫ বছরের অভিজ্ঞতা দাবি, সহকারী থেকে নিজেই ডাক্তার মন্টু’ সংবাদ প্রকাশের পর তার বিরুদ্ধে কমপক্ষে অর্ধশত অপচিকিৎসার শিকার রোগীর সন্ধান পাওয়া গেছে। তার ফাঁদে পড়ে অনেকেই বিপুল টাকা খুইয়েছেন। কেউ শিকার হয়েছেন অপচিকিৎসার, কেউ হয়েছেন প্রায় পঙ্গু। একাধিকবার ব্যক্তি পর্যায় ও স্বাস্থ্য বিভাগের অভিযানে জরিমানা নিয়েও বন্ধ হয়নি তার অর্থোপেডিক চিকিৎসা কার্যক্রম।
মন্টু কোনো গ্রাম ডাক্তার না বলেও নিশ্চিত করেছেন ঝিরকগাছা উপজেলা গ্রাম ডাক্তার কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল মোমিন সুমন।
সাব্বির আহমেদ নামে ভুক্তভোগী জানান, একটি দুর্ঘটনায় তার চাচার পা ভেঙে যায়। এ সময় তিনি অর্থোপেডিক ডাক্তার মনে করে ঝিকরগাছা বাজারের রাজাপট্টিতে মন্টুর চেম্বারে যান। এ সময় একটি এক্সরে করিয়ে ব্যবস্থাপত্র ও পায়ে প্লাস্টার করে দেয় মন্টু। বেশ কিছুদিন পার হলেই রোগীর ক্ষতস্থানে জ্বালাপোড়া শুরু হয়। এরপর তিনি বিশেষজ্ঞ একজন ডাক্তার দেখালে জানতে পারেন তার চাচা অপচিকিৎসার শিকার হয়েছেন। সঠিকভাবে রোগীর ব্যান্ডেস করা হয়নি। এজন্য সেখানে পচন ধরেছে। পরবর্তীতে রোগীকে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে অন্ত্রপচার করাতে হয়েছে।
হৃদয় খান নামে অপর একজন ভুক্তভোগী জানান, দুর্ঘটনায় তার শিশু সন্তানের গলার গাড় ভেঙে যায়। এ সময় তিনি স্থানীয়দের পরামর্শে চিকিৎসার জন্য মন্টুর কাছে নিয়ে যান। মন্টু রোগীর একটি এক্সরে করিয়ে জানান, কোনো সমস্যা নেই। রোগীর কোথাও ভেঙে যায়নি। এ মতে তার ব্যবস্থপত্র দেওয়া হয়। কিন্তু শিশুর কষ্ট দেখে পরবর্তীতে অর্থোপেডিক ডাক্তার রাজিবুল ইসলামের কাছে গেলে সেখানে আবারও রোগীর এক্সরে করিয়ে জানানো হয় তার গলার ডান পাশের হাড় ভেঙে গেছে। পরবর্তীতে সেখানে তার শিশুকে চিকিৎসা করাবার পর সুস্থ হয়েছে।
সাইদুল ইসলাম নামে এর ভুক্তভোগীর স্বজন জানান, এক্সরে শুকানোর আগেই মন্টু রোগীর ব্যবস্থাপত্র লিখে দেন। প্লাস্টার করাবার পর রোগীর বাড়িতে নিয়ে গেলে কিছুদিন পর জ্বালাপোড়া শুরু হয়। এরপর আবারও মন্টুর কাছে এসে প্লাস্টার খুলে দেখা যায় জোড়া লাগার পরিবর্তে হাত-পায়ে ভাঙা স্থান ত্যাড়াব্যাকা হয়ে গেছে। পরবর্তীতে বাধ্য হয়ে বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে রোগীকে উন্নত চিকিৎসা করা হয়। যাতে রোগীর বিপুল টাকা খরচ হয়ে যায়।
স্থানীয় সূত্র জানায়, প্রায় ২০ বছর আগে মন্টু ডাক্তার আব্দুর রউফের চেম্বারে সহকারী হিসেবে কাজ করতেন। সেখানে প্রায় ১৫ বছর কাজের অভিজ্ঞতার পর হঠাৎ গ্রামে প্রচার শুরু করেন যে তিনি শহর থেকে ডাক্তারি শিখে এসেছেন। এরপর থেকেই রাজাপট্টিতে নিয়মিত রোগী দেখা শুরু করেন। প্রথমদিকে নামের আগে ডাক্তার লিখে রোগী দেখলেও প্রশাসনের অভিযানে জরিমানা গুণতে হয়। তবে ডাক্তার লেখা নাম থেকে মুছে গেলেও থেমে থাকেনি প্রতারণা। বর্তমানে তিনি ‘ডক্টরস্ এক্সরে অ্যান্ড থেরাপি সেন্টার’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানে বসে চিকিৎসা দিচ্ছেন। সাইনবোর্ডে নিজের নাম লিখেছেন মন্টু (ডিএমএফ) এবং দাবি করছেন ভাঙা, জোড়া ও বাত ব্যাথা রোগে অভিজ্ঞ, ডাক্তার রউফ সাহেবের সহযোগী হিসাবে ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা। অথচ, ডিএমএফ ডিগ্রিধারীদের এক্সরে করার নিয়ম নেই। এ কাজ কেবল একজন অনুমোদিত এক্সরে টেকনিশিয়ান করতে পারেন এবং মেশিন ব্যবহার করতে হলে পারমাণবিক কেন্দ্রের অনুমোদন নিতে হয়। কিন্তু মন্টুর প্রতিষ্ঠানে কোনো অনুমোদন নেই।
ডাক্তার কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল মোমিন সুমন জানান, মন্টু কোনো ডাক্তার নন। এমনকি তিনি গ্রাম ডাক্তার কল্যাণ সমিতিরও কেউ না। মন্টুর মতো ডাক্তারের জন্য তাদের মতো গ্রাম ডাক্তারের সমাজে হেয়প্রতিপন্ন হতে হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে অতি দ্রুত প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগের ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানিয়েছে এই নেতা।
আরও পড়ুন: বিশ্বকর্মা পূজা উপলক্ষে বুধবার বেনাপোলে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ