জাহিদ হাসান
আগামি ২৭ মে যশোরে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সমাবেশ না করতে দেওয়ার হুশিয়ারি দিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম মিলন। একই সাথে জনসভার দিন তিনি নেতাকর্মীদের ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে বাঁশ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকার নির্দেশনা দেন। বিএনপি নেতাকর্মীরা জনসভায় মিছিল নিয়ে উপস্থিত হলেই তাদের মাথা ফাঁটিয়ে দেওয়ারও নির্দেশ দেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শহরের গাড়িখানাস্থ দলীয় কার্যালয়ে এক আলোচনা সভায় তিনি এই হুশিয়ারি দেন। হুশিয়ারি দেওয়া এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। আগামি ২৭ মে বিএনপির জনসভাকে ঘিরে যখন সকল প্রস্তুতি চলছে; সেই মুহূর্তে যশোর আওয়ামী লীগের এই শীর্ষ নেতার হুশিয়ারিমূলক বক্তব্যে যশোরের রাজনীতি পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে তুলেছেন বলে মত রাজনীতিবিদদের।
‘গায়েবি মামলায়’ গ্রেপ্তার, নির্যাতনসহ সরকার পদত্যাগের ১০ দফা দাবিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে আগামী ২৭ মে বিক্ষোভ সমাবেশ করবে যশোর জেলা বিএনপি। এই সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সমাবেশ সফল করতে জেলা বিএনপি ইতোমধ্যে সকল উপজেলা ও ইউনিয়নে প্রস্তুতিসভা সম্পন্ন করেছে। তবে জেলা প্রশাসন এখনো সমাবেশ স্থলের অনুমতি দেয়নি।
মঙ্গলবার বিকালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘জুলিও কুরি’ পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আলোচনা সভার আয়োজন করে যশোর জেলা আওয়ামী লীগ। দলীয় কার্যালয়ে সভাপতির বক্তব্যকালে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন বলেন, ‘দেশ একটি গভীর ষড়যন্ত্রের মধ্যে দিয়ে চলছে। আওয়ামী লীগের উন্নয়ন সহ্য করতে পারছে না স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তিরা। এসব বিপক্ষের শক্তি আবারও মাথা চড়া দিয়ে উঠেছে। আজ বিএনপির এতো সাহস। আওয়ামী লীগের সভাপতিকে হত্যার হুমকি দেয়। যশোরে বিএনপির কোন প্রোগ্রাম জনসভা আর করতে পারবে না। আগামি ২৭ মে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সমাবেশ হবে না। আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ থাকতে যশোরে মির্জা ফখরুলের জনসভা করতে দেওয়া হবে না। আপনারা প্রতিটি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে সর্তক থাকবেন যশোরের মাটিতে জনসভা হতে দেওয়া হবে না। শহরের মোড়ে মোড়ে বাঁশের লাঠি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবেন। বিএনপি নেতাকর্মীরা আসা মাত্রই বাঁশের লাঠি দিয়ে মাথা ফাঁটিয়ে দিবেন। যাতে তারা জনসভায় যেতে না পারে। আমি সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার সকল মিটিংয়ের নেতৃত্ব দিবো। ফখরুল যাতে জনসভা করতে না পারে; সকল নেতৃত্ব আমরা দিবো। আপনার একত্রে থাকবেন। আপনারা এক থাকেন ইনশাল্লাহ ২৭ তারিখে যশোরে কোন জনসভা করতে দিবো না। আপনারা প্রস্তুত হন, দুর্গ তৈরি করে ফেলেন। আগামি ২৭ তারিখ যাতে সমাবেশ না করতে পারে সেই লক্ষে ভূমিকা রাখতে হবে ছাত্রলীগ, যুবলীগদের। আগামি ২৭ মে রণাঙ্গে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।
৭৫ সদস্য বিশিষ্ট যশোর জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি। উপদেষ্টা পরিষদ আরও ১৯ জনের। ৯৪ সদস্যের বিশাল বহরের কমিটি। কিন্তুদলীয় কর্মসূচিতে উপস্থিত হন গুটি কয়েকজন। বেশিরভাগ নেতা অনুপস্থিত থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন খোদ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন। তিনি বলেন, বিএনপি রাজপথে সরব হয়েছে। সেই সময়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সভা সমাবেশে উপস্থিত থাকেন না। সবাই নেতা হবেন। সভায় আসবেন না, মিছিল করবেন না। আবার নেতা হতে চাইবেন সেটা তো হতে দেওয়া যাবে না। যারা আওয়ামী লীগের দলীয় প্রোগ্রামে উপস্থিত থাকেন না; তারা যাতে পদ না পায়, তাদের সেই ব্যবস্থা করে দিবো আমি।
জেলা আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক ওহিদুল ইসলাম তরফদারের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম মনির, শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক শেখ আতিকুর বাবু, উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক লুৎফুল কবীর বিজু, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান, যশোর পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম মাহমুদ হাসান বিপু, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সামির হোসেন পিয়াস, অধ্যাপক মোয়াজ্জেম হোসেন, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রওশন ইকবাল শাহী, জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তরিকুল ইসলাম। আলোচনা শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকি দাতা রাজশাহী বিএনপিনেতা আবু সাঈদ চাঁদের শাস্তির দাবিতে প্রতিবাদ মিছিল বের করে।
এদিকে, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলনের তিন মিনিট ৩৫ সেকেন্ডের এমন হুশিয়ারি মূলক একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। আগামি ২৭ মে বিএনপির জনসভাকে ঘিরে যখন সকল প্রস্তুতি চলছে; সেই মুহূর্তে যশোর আওয়ামী লীগের এই শীর্ষ নেতার হুশিয়ারিমূলক বক্তব্যে যশোরের রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন রাজনীতিবিদরা।
এই বিষয়ে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির বক্তব্যটি শুনেছি। একটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের কাছ থেকে এধরণের বক্তব্য প্রত্যাশা করি না। রাজনীতিবিদদের কাছে অরাজনৈতিক আচরণ কাম্য নয়। রাজনীতিকে রাজনীতিকভাবেই মোকাবেলা করতে হবে। আমরা সন্ত্রাসী রাজনীতি পছন্দ করি না। আওয়ামী লীগের সভাপতির বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে তিনি তার নেতাকর্মীদের ফুসলিয়ে দিলেন। ওনারা তো সমাবেশ করতে দিবে না বলেই প্রশাসন দিয়ে এখনো সমাবেশ স্থলের অনুমতি দিতে দেয়নি। আর পুলিশ দিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠাচ্ছে। আমাদের রাজপথে প্রতিবন্ধকতা আসবেই; আমরা সেটি পার করেই সমাবেশ সফল করবো।