ক্রীড়া ডেস্ক
বেশ অদ্ভুত এক দল বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। মাঝে মাঝে নিজেরাই আশা দেখিয়ে আশার বেলুন ফুলাতে বাধ্য করেন সমর্থকদের, কখনও আবার নিজেরাই সেই আশাকে গলা টিপে হত্যা করেন। ব্যাটিংয়ে ২৪৫ রান করে কিছুটা লড়াই করার সম্ভাবনা জাগালেন ব্যাটাররা, অন্যদিকে বোলিংয়ে নেমে হতাশ করলেন বোলাররা। টাইগার বোলারদের স্বাচ্ছন্দ্যেই খেলে ৮ উইকেটের সহজ এক জয় তুলে নিয়েছে নিউজিল্যান্ড। বিশ্বকাপে কিউইদের এটি টানা তৃতীয় জয়, টাইগারদের টানা দ্বিতীয় পরাজয়।
চেন্নাইয়ের মা চিদাম্বরাম স্টেডিয়ামে টসে জিতে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ে পাঠায় নিউজিল্যান্ড। আগে ব্যাট করতে অবশ্য বিপদে পড়ে যায় বাংলাদেশ। প্রথম বলেই উইকেট ছুঁড়ে দিয়ে আসেন ওপেনার লিটন দাস। এরপর মেহেদী হাসান মিরাজ এবং তানজিদ হাসান তামিম মিলে কিছুটা প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেন। দুজনই ভালো শুরু পেলেও লম্বা হয়নি কারোর ইনিংসই। ১৭ বলে ১৬ রান করে আউট হন তানজিদ। অন্যদিকে মিরাজ খেলেন ৪৬ বলে ৩০ রানের ইনিংস। পরে শান্ত ৮ বলে ৭ রান করে আউট হয়ে গেলে ৫৬ রানের মধ্যে ৪ উইকেট হারিয়ে বেশ বেকায়দায় পড়ে যায় বাংলাদেশ।
এরপর খাদের কিনারা থেকে দলকে টেনে তোলেন সাকিব আল হাসান এবং মুশফিকুর রহিম। দুজনের সাবলীল ব্যাটিংয়ে একটু একটু করে শুরুর বিপদ কাটাতে থাকে বাংলাদেশ। সময়ের সাথে সাথে রানের গতি বাড়িয়েছেন সাকিব এবং মুশফিক। ক্রিজে দারুণভাবে জমে যান দুজনই।
ফিফটি ছুঁয়ে ফেলেন মুশফিক। অন্যদিকে ফিফটির কাছাকাছি যাচ্ছিলেন সাকিব। কিন্তু এত কাছে গিয়েও হতাশ হতে হয়েছে সাকিবকে। ৫১ বলে ৪০ রান করেন সাকিব। দলের ১৫২ রানের মাথায় ভাঙ্গে সাকিব-মুশফিকের ৯৬ রানের জুটি।
ফিফটির পর কিছু দূর এগিয়ে থামেন মুশফিকও। ৭৫ বলে ৬৬ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলে দলের ১৭৫ রানের মাথায় থামেন তিনি। এরপর কমে যায় বাংলাদেশের রানের গতি। শেষ দিকে বেশ ধীরে ধীরে এগিয়েছে টাইগারদের ইনিংস। তবে ক্রিজের এক প্রান্তে টিকে ছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। শেষ বেলায় দলের হাল ধরেছেন তিনিই। ৪৯ বলে ৪১ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলেন রিয়াদ। নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে ৯ উইকেট হারিয়ে ২৪৫ রানের সংগ্রহ দাঁড় করায় বাংলাদেশ।
নিউজিল্যান্ডের হয়ে ৩ উইকেট শিকার করেন লকি ফার্গুসন। এছাড়া ২টি করে উইকেট তোলেন ম্যাট হেনরি এবং ট্রেন্ট বোল্ট। ১টি করে উইকেট নেন মিচেল স্যান্টনার এবং গ্লেন ফিলিপস।
জবাব দিতে নেমে শুরুতে কিছুটা চাপে পড়ে নিউজিল্যান্ডও। টাইট বোলিংয়ে কিউই ব্যাটারদের চাপে ফেলে দেন টাইগার বোলাররা। দলের ১২ রানের মাথায় ওপেনার রাচিন রবীন্দ্রকে ফিরিয়ে দেন মুস্তাফিজুর রহমান। শুরুতে বাংলাদেশের ইকোনমিক্যাল বোলিং বেশ বিচক্ষণতার সাথে সামলেছেন ডেভন কনওয়ে এবং অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। অতি তাড়াহুড়া না করে দেখেশুনে এগিয়েছেন দুজন। ঝুঁকি না নিয়ে খেলেছেন কার্যকরী সব শট। রানের গতি কম হলেও মাটি কামড়ে পড়ে ছিলেন উইকেটে।
দুজনের সাবলীল ব্যাটিংয়ে ভালোভাবেই এগোচ্ছিল নিউজিল্যান্ডের ইনিংস। ফিফটির সম্ভাবনা জাগিয়েও শেষমেশ হতাশায় পুড়েছেন কনওয়ে। ৫৯ বলে ৪৫ রান করে দলের ৯২ রানের মাথায় আউট হন তিনি। এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে তাকে সাজঘরে ফেরান সাকিব আল হাসান।
তবে এরপর শক্ত করে দলের হাল ধরেন ড্যারিল মিচেল এবং টিকে থাকা উইলিয়ামসন। ক্রমেই মুগ্ধতা ছড়িয়েছে উইলিয়ামসনের ব্যাটিং। ধৈর্য্য ধরে ইনিংস গঠন করেছেন তিনি। এত দিন পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরলেও ছিল না কোনো জড়তা, কোনো অস্বস্তি। কার্যকরী সব শটে দলের বোর্ডে রান তুলতে থাকেন উইলিয়ামসন। আরেক প্রান্ত থেকে তাকে যোগ্য সঙ্গ দিয়ে যান মিচেল। একসময় ফিফটি ছুঁয়ে ফেলেন উইলিয়ামসন। ছুটতে থাকেন আরও বড় কিছুর দিকে।
পরে ফিফটির দেখা পেয়েছেন মিচেলও। দুজনের জুটিটাকে যেন কোনোভাবেই ভাঙ্গতে পারছিলেন না টাইগার বোলাররা। ১০৭ বলে ৭৮ রান করার পর উইলিয়ামসন হাতে কিছুটা আঘাত পেলে রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে মাঠের বাইরে চলে যান তিনি। এরপর গ্লেন ফিলিপসকে সাথে নিয়ে বাকি কাজটা সারতে থাকেন মিচেল। শেষমেশ দারুণ এক জয়ও তুলে নেয় কিউইরা। ৪৩ বল বাকি থাকতে ৮ উইকেটের দারুণ এক জয় পায় নিউজিল্যান্ড।
বাংলাদেশের হয়ে ১টি করে উইকেট শিকার করেন মুস্তাফিজুর রহমান এবং সাকিব আল হাসান।
এই জয়ের ফলে টানা তৃতীয় জয় পেল নিউজিল্যান্ড। অন্যদিকে প্রথম ম্যাচ জেতার পর টানা দুই ম্যাচ হারল বাংলাদেশ।