জহির ইকবাল নান্নু
বাংলায় একটা প্রবাদ আছে ‘এক ঢিলে দুই পাখি মারা’। যার মানে এক সাথে দুই কাজ করা। আমার এবারের ভারত সফরে তেমনটা হয়েছে। এসেছি মূলত চিকিৎসা নিতে। যেহেতু ওয়ানডে বিশ্বকাপ চলছে এ সময়। তাই আসার আগেই চিন্তা করেছিলাম বাংলাদেশের একটা ম্যাচ মাঠে বসে দেখবো। তবে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ স্বপ্ন যাত্রায় এমন একটা দুর্দান্ত ম্যাচের সাক্ষী হতে পারবো সেটা বুঝতে পারিনি। বলছি বাংলাদেশ-আফগান বিশ্বকাপের ম্যাচের কথা। এ ম্যাচে কে কি করেছে এখন সবাই জানে। তাই ম্যাচের কোন বর্ণনা না দিলেও হবে।
মাঠে যাওয়ার পর বেশ কিছু ছবি তুলে ফেসবুক পোস্ট করি। তাই দেখে দৈনিক কল্যাণের স্পোর্টস রিপোর্টার এম এ রাজা ভাই ম্যাসেঞ্জারে মাঠে বসে খেলা দেখার অভিজ্ঞতা নিয়ে লিখতে বলেন।
মাঠে বসে খেলা দেখা আর টেলিভিশনে খেলা দেখা দুটি ভিন্ন। বল করার সময় ১১জন খেলোয়াড় মাঠে কে কিভাবে দৌড়াচ্ছে বা কিভাবে মুভ করে পুরোটা দেখা যায়। টেলিভিশনে সেটা দেখা যায় না। তবে মাঠে খেলা দেখার কিছু সমস্যা হয়। আর নতুন জায়গা হলেতো আরও। আমরা (ফ্যামিলি) এক সমস্যায় পড়েছিলাম। আগে থেকেই অনলাইনে টিকিট কেটে রেখেছিলাম। স্টেডিয়ামে পৌঁছে পড়লাম বিপাকে, এই অনলাইন টিকিটে স্টেডিয়ামে ঢোকা যাচ্ছে না; নতুন করে নিতে হবে টিকিট। লাইনে দাঁড়িয়ে ১২-১৪ জন পার করে কাউন্টারে পৌঁছে টিকিট সংগ্রহ করতে দেরি হয়ে গেল। নতুন শহর, নতুন জায়গা, গেট খুঁজে পেতে দেরি হলো। আবারও লম্বা লাইন শেষ করে স্টেডিয়ামে ঢুকতে ঢুকতে খেলা বেশ কয়েক ওভার হয়ে যায়। জেনে নিলাম বিশ্বকাপের প্রথম পর্বের তৃতীয় ম্যাচে টস জিতে আফগানদের ব্যাটিংয়ে পাঠিয়েছে বাংলাদেশ অধিনায়ক।
চারিদিকে পাহাড়ে ঘেরা, পাহাড়ের উপর সবুজ সুন্দর একটি চমৎকার স্টেডিয়াম ধরমশালা। কিন্তু গ্যালারিতে তীব্র রোদের চোখ রাঙ্গানি আর হালকা গরম আমাদের বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। বাংলাদেশ থেকে অনেক দর্শক এসেছেন, প্রথমে সবাই নিজেদের মতো দূরে দূরে বসলেও কিছুক্ষণের মধ্যেই আমরা একটি জায়গায় বসে বাংলাদেশ দলকে উৎসাহ দিতে লাগলাম।
এদিকে আফগানিস্তান তাদের স্কোর বাড়িয়ে বাংলাদেশকে চাপে ফেলতে লাগলো। দর্শক হিসেবে আমরাও আফগান সমর্থকদের কাছে চাপে পড়তে লাগলাম। তবে সময় যত গড়িয়েছে মাঠে টাইগার দাপট দেখিয়েছে। তাতে আমরা দর্শকরা যোগ দিয়েছিলাম। চুপ হয়ে গিয়েছিল আফগান সমর্থকরা। আফগানরা ১৫৬ রানে গুটিয়ে যায়।
গ্যালারিতে সবচেয়ে বেশি ছিল ইন্ডিয়ান দর্শক, সবচেয়ে অবাক করার ব্যাপার হলো প্রায় সকল ইন্ডিয়ান দর্শকই ছিল আফগানিস্তানের দলের সমর্থক। দু-দশজন স্কুল বাচ্চাকে দেখেছি বাংলাদেশকে সমর্থন করতে। আর প্রকৃত আফগানী দর্শক ছিল মোট বাংলাদেশী দর্শকের তিন ভাগের একভাগেরও কম।
যাইহোক, জবাবে ব্যাটিংয়ে নেমে ৯২ বল বাকি থাকতেই ছয় উইকেটে ম্যাচ জিতে নিল বাংলাদেশ। আর ম্যান অব দ্যা ম্যাচ মেহেদী মিরাজ। এই অসাধারণ ম্যাচটির মাঠে সবে উপভোগ করেছি। যে আত্মবিশ্বাসের সাথে বাংলাদেশকে খেলতে দেখেছি, সেটা ধরে রাখলে সেমিফাইনাল স্বপ্ন আমাদের থেকে বেশি দূরে নয়। শুভকামনা রইল টিম বাংলাদেশ।
জহির ইকবাল নান্নু
সহ-সভাপতি, জাতীয় যুব কাউন্সিল বাংলাদেশ।
বিতার্কিক, যুব সংগঠক ও সাংস্কৃতিক কর্মী।