হাসানুজ্জামান ঝড়ু
‘গেল তিন মাস যারা আমাকে সমর্থন করেছেন, আমার পাশে ছিলেন, তাদের জন্য এ সেঞ্চুরি’ বলেছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। আসলেই কি তাই। নাকি তার নিজের অবস্থান, কঠিন পরিশ্রম মিতব্যায়ী কথাকোপথন ও কঠোর শৃংখলার মধ্যেকার জীবনযাপনের ফলের বহিঃপ্রকাশ এই সেঞ্চুরি পরবর্তী উদযাপন তাই তো ইঙ্গিত করে। ৩৭ বছর ২৬২ দিন, ওয়ানডে বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি বয়সে সেঞ্চুরি করা এই ব্যাটারের আগে যে পাঁচজন আছেন, তিলেকরত্ন দিলশন (৩৮ বছর ১৪৮দিন), পরবর্তী চারজন যথাক্রমে সুনীল গাভাস্কার, শচীন টেন্ডুলকার, সনাথ জয়সুরিয়া, মাহেলা জয়াবর্ধনে। পরিসংখ্যানটা এইজন্য দিলাম যে উপরের যে পাঁচ ক্রিকেট লিজেন্ড’র কথা বলেছি তার ১-৪ নম্বর পজিশনে ব্যাটিং করতেন। বর্তমান মর্ডান ক্রিকেট যা টপ অর্ডার নামে বিভক্ত। মূলত মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের চতুর্থ ওয়ানডে সেঞ্চুরির পরিসংখ্যান লক্ষ্য করলে দেখা যায় সবগুলো ম্যাচের ক্রাইসিস সময়ে এবং মিডল অর্ডার ব্যাটিং লাইনআপ যখন ভঙ্গুর অবস্থায় বিরাজমান। যাই হোক মাহমুদউল্লাহর শতরান তার প্রাপ্য অভিজ্ঞতার সুফল ও কারো মোক্ষম জবাব দেওয়ার প্রতীক না বলে আমি বিশ্বাস করি।
এবার বাংলাদেশের নেদারল্যান্ডের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচটি আছে যে বিষয়ে। পয়েন্ট টেবিলের সবচেয়ে তলানীতে থাকা দলটির সাথে ম্যাচের গুরুত্ব কেন দিচ্ছি সে বিষয়টা পরিষ্কার করি। চার ম্যাচ খেলে তার ব্যাটে এসেছে সর্বমোট ৫৬ রান। বল হাতে পেয়েছেন ৬টি। তিনি সাকিব আল হাসান। নিজের নামের পাশে এর পরিসংখ্যান মোটেই যাচ্ছিল না। তাই হয়তো সবার সম্মতিক্রমে সময় দিলেন শৈশবের কোচ ফাহিম স্যার এর সাথে। দুটি লম্বা সেশন। স্কিল এর সাথে হয়তো হয়েছে অনেক মোটিভেটেড আলোচনা যা তার খারাপ সময়ের টনিকের মত কাজ করেছে সব সময়। সেরা পারফরম্যান্স তো ‘কি’ প্লেয়ারের মাধ্যমে হওয়া উচিত। প্রফেশনালিজম এর দৃষ্টি কোন থেকেই হয়তো তার এ উদ্যোগ।
নেদারল্যান্ডের এ দলটির গুনগত মান বলতে একমাত্র তাদের দলীয় পারফরম্যান্স। বিশ^কাপটা তাদের ক্রিকেট উৎসবেরই একটা অংশ। দারুন ফিল্ডিং সাইড সাথে বিক্রম সিং, ম্যাক্স ও’ডাউড, আকারম্যান, সায়ব্র্যান্ড এঙ্গেলব্রেচট, বাস ডি লিড, মারউই, লোগান ফন ভিক এবং আরিয়ান দত্ত এর মতো ব্যাটিং ও বোলিং অলরাউন্ডে ভরপুর। তাদের অধিনায়ক স্কট এডওয়ার্ডস দীর্ঘদিন ধরে দলটি পরিচালনা করছেন। তাদের সবচেয়ে বড় সাফল্যও স্থান হচ্ছে টিম বোলিং। মোস্ট অফ দি ক্রিকেটার ইংলিশ কাউন্টি খেলেন। সো তাদের লম্বা ইনিংস খেলার প্রবণতা আছে। এটা আমরা বিগত মাচগুলোতে দেখেছি।
৫ অথবা ৬ নম্বরে থেকে সাকিব আল হাসান বিশ^কাপটা শেষ করতে চাইলে এই ম্যাচটি জেতা অতিমাত্রায় জরুরি। আগের ম্যাচের ভুলত্রুটি শুধরে সঠিক টিম কম্বিনেশনের মাধ্যমে বাংলাদেশ দল ইডেনে ম্যাচটা শুরু করবে আশা করি। বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্ট হয়তো সঠিক একটা দলকে নেদারল্যান্ডের বিপক্ষে মাঠে নামাবে। যেখানে টিমের সবচেয়ে কার্যকরী বোলার, কার্যকারী ব্যাটার ও দারুন ক্রিকেট মতিস্কেও খেলোয়াড়দের প্রাধান্য দিবে বেশি। পয়েন্ট টেবিলের ৫-৬ থাকতে গেলে আপনাকে এখন থেকে ম্যাচ জিততে হবে। নেদারল্যান্ডের পরে যে ম্যাচগুলো যাদের সাথে আছে পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও অস্টেলিয়া। তারা কিন্তু দিনকে দিন ভয়ংকর ক্রিকেট খেলছে। কি পাওয়ার প্লে, কি মিডল অর্ডার, কি ডেথ ওভারে।
বাংলাদেশ যে দুর্দান্ত দল তার একটা রূপ নেদারল্যান্ডের এ ম্যাচে দেখতে চাই।