সুনীল ঘোষ: ‘রূপবান’ দুধ দেয় ৩০ লিটার। ৩০ দিনে না, একদিনেই। রূপবান হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ান ফ্রিজিয়ান প্রজাতির একটি গাভীর নাম। ডেইরি মালিক সখ করে এ নাম রেখেছেন। এই নামে ডাকলে গাভীটি সাড়া দেয়। দিনে দু’দফায় দুধ দেয় ৩০ লিটার। একটি গাভী থেকে এখন ফার্মে ২২টি গরু হয়েছে। তবে লাভে নেই। গো-খাদ্যের দাম বেড়ে আকাশ ছুঁয়েছে। বেড়েছে চিকিৎসা খরচও। যে কারণে পকেট কাটা যাচ্ছে মালিকের। গো-খাদ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে না আসলে ছোট ছোট ফার্ম মালিকদের পথে বসতে হবে-এমন আশঙ্কা এসএস ডেইরি মালিক শেখ শহিদুল হকের।
যশোর শহরের নাজির শংকরপুরে এ ফার্মটি। শেখ হাসিনা আইটি পার্কের একদম পূর্বকোণে ফার্মটি গড়ে তুলেছেন শেখ শহিদুল হক। এর বাইরে বকচরেও রয়েছে তার আরেকটি ফার্ম। চলতি বছরের ১৪ মার্চ যশোরে প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনী মেলায় এসেছিল রূপবান। রূপবান পুরস্কার পাইয়ে দিয়েছে মালিককে। কুচকুচে কালো ও সাদার মিশ্রণ গাভীটির সৌন্দর্যকে করে তুলেছে আকর্ষণীয়। প্রদর্শনীতে আসা অনেকেরই নজর কাড়ে গাভীটি। ফার্ম মালিক বলেছিলেন হতাশার কথা। বলেছিলেন আসেন একদিন, কথা হবে ফার্ম নিয়ে।
৩ এপ্রিল সরেজমিনে দেখা যায়, ফার্মে রূপবানের মতো আরও ১৪টি গাভী আছে। সাপ্লাইয়ের পানি দিয়ে গোসল করাচ্ছিলেন শহিদুল হক দম্পতি। স্ত্রীর নাম সুলতানা পারভীন। ফার্ম মালিক জানান, রূপবান থেকে শুরু হয় বংশ বিস্তার। এখন পর্যন্ত গরুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২। প্রথম বছর লাভের মুখ দেখে উৎসাহ বেড়ে যায়। পরিচর্যার জন্য বাড়ানো হয় লোকবল। বিনিয়োগ করেন আরও। কিন্তু বিধিবাম, বৈশি^ক মহামারি করোনার প্রাদুর্ভাবে কপালে নেমে আসে দুর্ভোগ। প্রায় সব সেক্টরের মতো ডেইরি ফার্মেও করোনার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। চড়া দামে কিনতে হচ্ছে গো-খাদ্য। সেই সাথে নিয়মিত চিকিৎসা করাতে হয়। কিন্তু করোনা প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ার পর দুধ বেচাবিক্রি কমে যায়। সেই অবস্থা এখন আর নেই, কিন্তু লোকসানের পালা এখনো শেষ হয়নি। তিনি বলেন, রূপবান প্রতিদিন দু’বারে দুধ দেয় ৩০ লিটার। অন্যান্য গাভীও দুধ দেয়। সবমিলিয়ে প্রতিদিন ১৭০ লিটার দুধ উৎপাদন হয় ফার্মটিতে। প্রতি লিটার দুধ বিক্রি হয় ৭০ টাকা। কিছু মানুষ ফার্ম থেকে নিয়ে যান। শহরের বিভিন্ন হোটেল-রেস্তোরা ও চায়ের দোকানসহ বাসা বাড়িতেও দুধ পৌঁছে দেন মালিক শেখ শহিদুল।
দৈনিক কল্যাণকে তিনি বলেন, করোনাভাইরাস বড় ক্ষতি করে গেছে। গত দু’বছর দুধ বিক্রি করা ছিল কঠিন। ফ্রিজে রেখে পোষায় না। সেই যে লোকসান গোনা শুরু, তা অব্যাহত রয়েছে। দুধ বিক্রির টাকায় গরুর খাবার জুটলেও লাভের মুখ দেখা যাচ্ছে না ।
সুলতানা পারভীন বলেন, প্রতিমাসে মোটা অংকের টাকা গচ্চা যাচ্ছে। সরকারি প্রণোদনার ২০ হাজার টাকা পেয়েছিলাম। কিন্তু চড়া দামে গো খাদ্য কিনতে প্রতিমাসে মোটা অংকের টাকা লোকসান হচ্ছে।
তিনি আরও প্রণোদনার দাবি করেন। বলেন, গো-খাদ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে আনতে জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে। অন্যথায় ফার্ম চালানো কঠিন হয়ে পড়বে।
শেখ শহিদুল বলেন, ফার্ম চালানো কতটা কষ্টসাধ্য, তা স্বচোখেই দেখছেন। বড় বড় ফার্মের দাপটে ছোট ফার্মগুলো মুখ থুবড়ে পড়েছে। গো খাদ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে আনার বিষয়ে সরকার নজর না দিলে ছোট ফার্ম মালিকদের পথে বসতে হবে।
যশোর প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে কী ধরণের সুযোগ সুবিধা পাওয়া যায় জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রজননের বীজ পাওয়া যায়। কৃমিনাশক ওষুধ দেয়। বড় ধরণের রোগে আক্রান্ত হলে প্রাণিসম্পদ অফিসে খবর দিলে ডাক্তার স্বপন কুমার রায় আসেন। কখনো উপজেলা কর্মকর্তা ডা. শফিউল আলমও আসেন। তাদের যাতায়াতের খরচ হিসেবে ২০০ টাকা দিতে হয়।
সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. শফিউলম আলম জানান, যশোরে রেজিস্ট্রার ও নন রেজিস্ট্রার মিলে ৬’শ বেশি গরুর ফার্ম আছে। অফিস সময়ে চিকিৎসার জন্য ফিস দিতে হয় না। তবে কোন ফার্ম মালিক অফিস সময়ের পর কোন ডাক্তারকে ডেকে নিলে সেক্ষেত্রে ফি ও ওষুধের দাম দিতে হয়। গো-খাদ্যের চড়া দাম কমানোর ক্ষমতা প্রাণিসম্পদ অফিসের হাতে নেই বলেও মন্তব্য করেন-এই প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা।