নিজস্ব প্রতিবেদক
সারাদেশে বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা ও লোকজ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে উদযাপিত হবে বাংলা নববর্ষ-১৪৩০। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে নির্দেশনা জারি করেছেন। পবিত্র মাহে রমজানের পবিত্রতা রক্ষা করেই এ উৎসব উদযাপন করা হবে। আর এ উৎসব বর্ণিল করতে সেইসাথে পহেলা বৈশাখে বর্ণিল সাজে ঢাক-ঢোলের বাদ্যে উৎসবে মাততে প্রস্তুত হচ্ছে যশোরবাসী; প্রস্তুতি নিচ্ছে সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো। বর্ণিল উৎসব ঘিরে সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো তৈরি করেছে ভিন্ন আঙ্গিকের দাওয়াতপত্রও।
ঐতিহাসিক টাউন হল ময়দান থেকে সকাল ৯ টায় যশোরে বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা হবে। ার জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে জেলা প্রশাসনের পৃষ্ঠপোষকতায় হবে এ শোভাযাত্রা। দুপুরের মধ্যেই সব সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সম্পন্ন হবে। এবছরও রমজান মাস উপলক্ষে বিকেলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান থাকছে না। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১ টায় যশোর জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে জেলা প্রশাসকের অমিত্রাক্ষর সম্মেলন কক্ষে বাংলা বর্ষবরণ উৎসব উদযাপন উপলক্ষে প্রস্তুতিসভায় এ তথ্য জানানো হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান। সভার শুরু একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে যশোরে গণহত্যায় শহীদ স্মরণে একমিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
সভায় জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান বলেন, ‘বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষের ঐক্যের প্রতীক সার্বজনীন উৎসব বাংলা নববর্ষ। আবহমান কাল ধরে বাঙালি অধ্যুষিত জনপদে সার্বজনীন ও অসাম্প্রদায়িক এ উৎসবটি পালিত হয়ে আসছে। তিনি আরও বলেন, পবিত্র রমজানের পবিত্রতা বজায় রেখে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হবে (বাংলা নববর্ষ ও বঙ্গবন্ধু) সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এছাড়া শিল্পকলা ও শিশু একাডেমির উদ্যোগে হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। হাসপাতাল, কারাগারে উন্নত মানের খাবার পরিবেশন। বিভিন্ন অভিযাত বাঙালির খাবার পরিবেশন করবে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফিরোজ কবীর বলেন, পুলিশের কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা মধ্যে পহেলা বৈশাখ উদযাপিত হবে।
সভায় উপস্থিত ছিলেন ও মতামত ব্যক্ত করেন যশোর পৌরসভার মেয়র মুক্তিযোদ্ধা হায়দার গণি খান পলাশ, স্থানীয় সরকার বিভাগ যশোরের উপপরিচালক হুসাইন শওকত, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রফিকুল হাসান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (উন্নয়ন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা) মাসুদ উল আলম, সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা অনুপ দাশ, যশোর সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ অমল কুমার বিশ্বাস, দৈনিক কল্যাণের প্রকাশক ও সম্পাদক বীরমুক্তিযোদ্ধা একরাম-উদ-দ্দৌলা, জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি সুকুমার দাস, সাধারণ সম্পাদক সানোয়ার আলম খান দুলু, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটি যশোরের সভাপতি হারুন অর রশীদ, জেলা শিল্পকলা একাডেমির সহসভাপতি ফারাজী আহমেদ সাঈদ বুলবুল, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাহমুদ হাসান বুলু, উদীচী যশোরের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমান খান বিপ্লব, যশোর সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক এইচআর তুহিন, চরুপীঠের সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশীদ, স্পন্দন যশোরের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম, চারুতীর্থের সভাপতি কাজী ইমদাদুল হক দুলাল, সনাক যশোরের সভাপতি শাহিন ইকবাল, বীরমুক্তিযোদ্ধা আফজাল হোসেন দোদুল, এসএম সুলতান আর্ট কলেজ যশোরের শিক্ষক কৃষি গৌতম, নাসিব যশোরের সভাপতি সাকির আলী, জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা সাধন কুমার দাস, জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক শোয়াইব হোসেন, জেলা কালচারাল অফিসার হায়দার আলী প্রমুখ। এদিকে উৎসবকে প্রাণের উচ্ছাসে মাতাতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে উদীচী, সুরবিতান ও পুনশ্চ যশোর। বর্ষবরণ উৎসব আয়োজনে মূল কমিটি গঠনের পাশাপাশি বিভিন্ন উপ কমিটি গঠন করে আগে ভাগেই শুরু করেছে মহড়া ও সাজ সজ্জা কার্যক্রম। বরাবরের মত পৌর উদ্যানে সকাল ৭টা ১ মিনিটে উদীচী যশোরের আয়োজনে হবে প্রায় আড়াই ঘণ্টার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এ বিষয়ে উদীচী যশোরের নববর্ষ উদযাপনের সদস্য সচিব সাজ্জাদুর রহমান খান বিপ্লব জানান, পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে এবছরের বর্ষবরণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সময় প্রায় অর্ধেক করা হয়েছে। আয়োজন উপলক্ষে আটটি উপকমিটি গঠন করা হয়েছে। তিনি জানান, উদীচী হত্যাক-ের ২ যুগ পেরিয়ে গেলেও বিচার না হওয়ায় এবারের নববর্ষ উৎসব স্লোগান করা হয়েছে- ‘বৈশাখের এই তীব্র দহনকাল-ছিন্ন করুক বিচারহীনতার জাল’। এ স্লোগানের সাথে মিল রেখে আমন্ত্রণ পত্রে ব্যবহার করা হয়েছে পোস্টার। বাঁশের চাটাইয়ের উপর লালকাগজে সাদা রঙে লেখা হয়েছে আমন্ত্রণপত্র। উদীচী হত্যাকা-ের বিচার কার্যকর করার আহ্বান জানিয়ে যশোরবাসীকে আনন্দে মাতিয়ে দেবে যশোরে ‘নববর্ষ উৎসবের পথিকৃৎ’ উদীচী যশোর। এছাড়া শিশু-কিশোরসহ প্রায় তিনশ’ সংগীত, নৃত্য ও অভিনয় শিল্পী বৈচিত্র্যময় নানা আয়োজনে নববর্ষ উৎসবের ৪৮ বছরে পা রাখছে এ সংগঠন। প্রতি বছরের ধারাবাহিকতার দৃষ্টান্ত রাখতে এবারও যশোরবাসীকে উপহার দেবে চমক দেয়া জমকালো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সংগঠনের সব শিল্পির মৌলিক পোষাক এ অনুষ্ঠান বর্ণিল করে তুলবে। যা বাস্তবায়নে ব্যস্ত সময় পার করছে সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও কলাকুশলীরা।
এদিকে দেশের অন্যতম প্রাচীণ সাংস্কৃতিক সংগঠন সুরবিতান সংগীত একাডেমি যশোরের উদ্যোগে সকাল সাড়ে ছয়টায় ঐতিহাসিক টাউন হল ময়দানের শতাব্দী বটমূলের রওশন আলী মঞ্চে ‘আলোকের এই ঝর্ণাধারায় ধুইয়ে দাও…’ ম্লোগানকে সামনে রেখে নববর্ষকে আহ্বান জানানো হবে। এ বিষয়ে একাডেমির সাধারণ সম্পাদক বাসুদেব বিশ্বাস জানান, প্রতিবছরের মত এবারও ভিন্ন আঙ্গিকে বাংলা নববর্ষকে স্বাগত জানানো হবে; সেই লক্ষ্যে একাডেমির শিক্ষার্থী শিল্পীদের সমন্বয়ে মহড়া চলছে। এছাড়া বাংলা বর্ষ-১৪৩০ কে স্বাগত জানিয়ে পুনশ্চ যশোর নববর্ষের প্রথম দিন সকাল ৬টা ৩১ মিনিটে মুসলিম একাডেমি প্রাঙ্গণে করবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এ বিষয়ে পুনশ্চ যশোরের সাধারণ সম্পাদক পান্না দে জানান, আয়োজনকে সামনে রেখে ‘বর্ষজুড়ে বাংলা থাকুক বাঙালির অন্তরে’ এমন স্লোগানে প্রত্যয় ব্যক্ত করে ইতোমধ্যে সংগঠনের সকল প্রশিক্ষণ কক্ষে চলছে মহড়া। চলছে মঞ্চের আনুসাঙ্গিক সজ্জা তৈরির উপকরণ তৈরির কাজ।