বাগেরহাট প্রতিনিধি
বাগেরহাটের শরণখোলায় ৬ বছরের বেশি সময় ধরে দুই কিলোমিটার কাঁচা সড়কে চলাচল জনদুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন বান্দাঘাটা থেকে রাজৈর মারকাজ মসজিদ পর্যন্ত দুই কিলোমিটার সড়ক মানুষ ও যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
খোন্তাকাটা ইউনিয়নের রাজৈর গ্রামে মাটির সড়কটিতে সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য খনাখন্দ। বর্ষায় সামান্য বৃষ্টি হলেই সড়কটিতে জমে থাকে হাঁটু পানি। কর্দমাক্ত হয়ে পড়ে আছে পুরো সড়ক। এ কারণে বর্ষাকালে চলাচলের অনুপযোগী থাকে সড়কটি।
এছাড়াও বর্তমানে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা চলমান থাকায় শরণখোলা সরকারি ডিগ্রি কলেজ ও রায়েন্দা-রাজৈর ফাজিল মাদরাসার পরীক্ষা কেন্দ্র দুটি এই সড়কের পাশেই অবস্থিত। যার ফলে পরীক্ষার্থীদের চলাচলেও চরম দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। কাদা পানি মাড়িয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে যেতে হচ্ছে তাদের। এমন বেহাল অবস্থার কারণে সড়কটি এখন দুর্ভোগের মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে।
এলাকাবাসী জানায়, এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন জনসাধারণের পাশাপাশি ১০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কয়েক হাজার ছাত্র-ছাত্রী আসা যাওয়া করে। সড়কের দুই পাশে রয়েছে শরণখোলা সরকারি ডিগ্রি কলেজ, রায়েন্দা-রাজৈর ফাজিল মাদরাসা, আনোয়ারা হোসেন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, রাজৈর মারকাজ মসজিদ ও মাদরাসা, সুন্দরবন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ পাঁচটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। রয়েছে তিনটি বরফ কল, একটি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র, কয়েক হাজার পরিবার ও অসংখ্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। পার্শ্ববর্তী রায়েন্দা বাজারে রয়েছে রায়েন্দা সরকারি পাইলট হাই স্কুল, আরকেডিএস গার্লস হাই স্কুল, শরণখোলা আইডিয়াল ইন্সটিটিউট, রায়েন্দা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ভাসানী কিন্ডার গার্টেন স্কুল। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কয়েক হাজার ছাত্রছাত্রীসহ হাজার হাজার সাধারণ মানুষ এবং পণ্য ও যাত্রীবাহী বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করে এই সড়ক দিয়ে।
এছাড়া উপজেলা পরিষদ এবং উপজেলা শহর রায়েন্দা বাজারে দৈনন্দিন প্রয়োজনে যাতায়াত করে আরও হাজার হাজার মানুষ। কিন্তু এই কাঁচা সড়কটি পাকা না হওয়ায় সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসীকে। জন গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি বেহাল অবস্থায় পড়ে থাকলেও পাকা সড়কের জন্য সরকারিভাবে কোনো উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না।
সড়কের এই দুই কিলোমিটার অংশটি বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৩৫/১ পোল্ডারের আওতাধীন। বাঁধের এই অংশটি আগে এলজিইডির মাধ্যমে কার্পেটিং সড়ক ছিল। ২০১৬ সালে বিশ্ব ব্যাংকের ঋণ সহায়তায় উপকূলীয় বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্পের (সিইআইপি) মাধ্যমে নির্মাণ হয় শরণখোলা উপজেলার ৬২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ। সেই সঙ্গে কলেজ রোড হিসেবে পরিচিতি সড়কের এই অংশটিও মাটির উঁচু বাঁধ নির্মাণ করা হয়। ২০১৬ সালে প্রকল্পের কাজ শুরু থেকেই চলছে জনভোগান্তি।
এ ব্যাপারে শরণখোলা সরকারি ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মো. নূরুল আলম ফকির ও রায়েন্দা-রাজৈর ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ আব্দুল জলিল আনোয়ারী বলেন, সড়কটি মাত্র ২ কিলোমিটার হলেও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি কমপক্ষে ১০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরা প্রতিদিন এই সড়ক দিয়ে চলাচল করে। শুষ্ক মৌসুমে সড়কটির ধুলোবালি মাড়িয়ে শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ কোনোরকমে চলতে পারলেও বর্ষার সময় আর চলাচল করতে পারে না। বড় বড় গর্তে পানি জমে থাকে। পুরো সড়কে থাকে কাদাপানি। বর্তমানে এইচএসসি ও আলীম পরীক্ষা চলছে। এই কাদাপানি ভেঙে পরীক্ষার্থীদের আসতে হচ্ছে কেন্দ্রে। এমনকি কেউ অসুস্থ হলে চিকিৎসার জন্য রোগীকে হাসপাতালে নেয়ারও উপায় থাকে না। বর্ষা মৌসুমে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতিও কমে যায়। তাই জনদুর্ভোগ নিরসনে সরকারের কাছে সড়কটি দ্রুত পাকা করার দাবি জানান।
শরণখোলা উপজেলা প্রকৌশলী মো. ফেরদৌস আলম আশ্বাস দিয়ে বলেন, বান্দাঘাটা থেকে রাজৈর মারকাজ মসজিদ পর্যন্ত ২ কিলোমিটার কাঁচা সড়কের একটি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রকল্পটি অনুমোদন পেলেই দ্রুত সড়কটি নির্মাণ কার্যক্রম হাতে নেয়া হবে।