নিজস্ব প্রতিবেদক
যশোরের বাঘারপাড়ায় এক ইউপি সদস্যকে বেধড়ক পিটিয়েছেন যুবলীগের দুই কর্মী। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। ভিডিওটি মুহূর্তের মধ্যে ভাইরাল হয়। এ ঘটনার প্রতিবাদে রোববার দুপুরে বাঘারপাড়া প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ১১ জন ইউপি সদস্য। এছাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন তারা। মারপিটের শিকার ওই ইউপি সদস্যের নাম জাহিদ হাসান। তিনি উপজেলার নারিকেলবাড়িয়া ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ও বলরামপুর গ্রামের মৃত ওহাব বিশ্বাসের ছেলে।
এর আগে শনিবার বিকেলে নারিকেলবাড়িয়া বাজার সংলগ্ন আনসার মাস্টারের বাড়ির পাশে এ মারপিটের ঘটনা ঘটে। এদিন রাতেই হামলার শিকার ইউপি সদস্য জাহিদ হাসান ৫ জনের নাম উল্লেখ করে বাঘারপাড়া থানায় মামলা করেছেন।
ভাইরাল হওয়া এক মিনিট ৮ সেকেন্ডের ওই ভিডিওটিতে দেখা গেছে, সাদা টি-শার্ট পরিহিত স্থানীয় যুবলীগ কর্মী জাহিদুল ইসলাম টুটুল ও কালো টি-শার্ট পরিহিত শামীম হাসান শাপলা কাঠ দিয়ে বেধড়ক মারপিট করছে ইউপি সদস্য জাহিদ হাসানকে। মারপিটের একপর্যায়ে তিনি মাটিতে পড়ে যান। এ সময় স্থানীয় কয়েকজন নারী বাধা দিতে গেলে তাদেরকেও লাঞ্ছিত করা হয়। ঘটনাটি এক যুবক ভিডিও ধারণ করে শনিবার রাতে ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়। যা মুহূর্তের মধ্যে ভাইরাল হয়।
এ ঘটনার প্রতিবাদে রোববার দুপুর ২টায় বাঘারপাড়া প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। সম্মেলনে ইউপি সদস্য জাহিদ হাসানের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন নারিকেলবাড়িয়া ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য রবিউল ইসলাম। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান বাবলু কুমার সাহার মদদে এই হামলার ঘটনা ঘটে। হামলাকারী শাপলা, টুটুল, তৌহিদুল চিহ্নিত মাদকসেবী। তারা চেয়ারম্যানের বাহিনী। হামলাকারীদের সাথে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ইউপি সদস্যদের বিরোধ চলে আসছিল। এরই জের ধরে শনিবার বিকেলে হামলা চালানো হয় বলে উল্লেখ করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, ইউপি সদস্য মাসুদ কাইসার, শামছুর রহমান, ফেরদৌস খান সোহাগ, হাফিজুর রহমান, আদম আলী, সোহরাব হোসেন মন্ডল, খালেদা সুলতানা, হাসিয়া খাতুন, রেবা খাতুন, হামলার শিকার জাহিদ হাসান।
এদিকে, সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মারপিট ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী নরিকেলবাড়িয়া গ্রামের নাজমা বেগমসহ তারা তিন বোন। নাজমা বেগম সাংবাদিকদের বলেন, ‘সেদিন মারপিটের ঘটনা আমাদের সামনেই ঘটেছে। আমরা তিন বোন ঠেকাতে গেলে ওরা আমাদেরকেও ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়। মারপিটের ঘটনা এখন ভিন্নখাতে নেওয়ার চেষ্টা করছে।’ এ সময় এসব সন্ত্রসীদের বিচার দাবি করেন তারা।
সংরক্ষিত ইউপি সদস্য খালেদা সুলতানা বলেন, ‘আমি ইউপি সদস্য ছাড়াও একজন জাতীয় দলের এ্যাথলেটার। তিন মাস আগে চেয়ারম্যানের বাহিনী আমার মাথায় পাঁচটি কোপ মারে। আমি একমাস মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়েছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘ইউনিয়নের যে সদস্যই চেয়ারম্যানের সাথে বিরোধে জড়াবে, তার পিছনেই তিনি (চেয়ারম্যান) গুন্ডাবাহিনী লেলিয়ে দেবেন।’
অভিযোগের বিষয়ে যুবলীগ কর্মী জাহিদুল ইসলাম টুটুল ও শামীম হাসান শাপলার নাম্বারে যোগাযোগ করা হলে তাদের ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। তবে অভিযোগের ব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যান বাবলু কুমার সাহা বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। যারা এ ঘটনার সাথে জড়িত, তারা আমার লোক না।’ তিনি দাবি করেন, ইউপি মেম্বার জাহিদ ঐ এলাকায় একটি নারীর সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে তোলে। ঘটনার দিন জাহিদ ঔ নারীর সঙ্গে ধরা পরায় স্থানীয়রা তাকে গণধোলাই নিয়েছে। ও সময় অনেকেই মারধর করেছে। ওসময় যুবলীগকর্মীরা ছিলো কিনা জানা নেই।
বাঘারপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ উদ্দীন জানান, মামলা রেকর্ড হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত চলছে। এই ঘটনায় এখনো কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি।