নিজস্ব প্রতিবেদক
দলবল নিয়ে আবারো মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে যশোরের বাঘারপাড়ার শীর্ষ সন্ত্রাসী আশকার আলী জোয়াদ্দার। উপজেলার খাজুরা এলাকায় একের পর এক ঘটছে ‘আশকার বাহিনী’র অপরাধের ঘটনা। জামিনে মুক্তি পেয়ে সহযোগীদের নিয়ে এখন নানা অপরাধকাণ্ড করছে আশকার। শনিবার দিনে-দুপুরে খাজুরা বাজারতলি এলাকায় জমি দখলের চেষ্টায় মারপিটের ঘটনা ঘটেছে। খবর পেয়ে পুলিশ আসলে ছত্রভঙ্গ হয়ে দলবল নিয়ে পালিয়ে যায় আশকার বাহিনী। এতে ভুক্তভোগী ও এলাকাবাসীর মধ্যে চরম আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী বাঘারপাড়া থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন।
স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শনিবার মোটরসাইকেল বহর ও দলবল নিয়ে খাজুরা বাজারে প্রবেশ করে সন্ত্রাসী আশকার। দেশিয় বিভিন্ন অস্ত্রে সজ্জিত এ বহরে দেখা গেছে, সদর উপজেলার ইছালী, রাজাপুর, হুদা, জগমানপুর এবং বাঘারপাড়ার খাজুরা ও কৃষ্ণনগর এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের। বেলা ১১টার দিকে বাজারতলির পার্বতীপুর এলাকায় জমি দখল শুরু করেন তারা। এ সময় জমির মালিক ভুক্তভোগী ওই এলাকার নুরজাহান বেগম ও তার পরিবারের লোকজন এগিয়ে আসলে একমাত্র সন্তান সোহরাব বিশ্বাসকে মারপিট করে। এ ঘটনায় চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক খাজুরা ক্যাম্পের পুলিশ ও স্থানীয়দের বাধার মুখে ছত্রভঙ্গ হয়ে পালায় শীর্ষ সন্ত্রাসী আশকার ও তার সহযোগীরা।
জমির মালিক ও ভুক্তভোগী পার্বতীপুরের মৃত কাঠি মাহমুদ মোল্যার একমাত্র মেয়ে নুরজাহান বলেন, ‘আমার পিতার মৃত্যুর পর ৩০ বছর আগে মেজো ভাইয়ের অংশের ৪ শতক জমি আমি ক্রয় করি। নিজেদের মধ্যের জমি হওয়ায় সেটা নামপত্তন করা হয়নি। গত ৩ বছর আগে আমার মেজো ভাই আইয়ুব মোল্যা মারা যান। তিন স্ত্রী, দুই ছেলে ও ছয় মেয়েসহ ১১ জন ওয়ারেশ রেখে গেছেন তিনি। বছর খানেক আগে আমার মেজো ভাইয়ের ছোটছেলে মহব্বত তার দ্বিতীয় পক্ষের মা ও বড়ভাই সাগরকে বাদ রেখে ভুয়া ওয়ারেশ কাইয়েমে ওই জমি নিজের নামে দলিল করে নিয়েছে। এ নিয়ে মিস কেস করেছি, কেস নং-১৯৯। যা খাজুরা ভূমি অফিসে তদন্তনাধীন।’
জমির মালিক নুরজাহান আরো বলেন, ‘ভয়ের সবচেয়ে বড় কারণ তৈরি হয় গতবছরের ২৭ ডিসেম্বর। সেদিন আমার ওই জমি মহব্বত বিনা টাকায় সন্ত্রাসী আশকারের বউ শেফালির নামে লিখে দিয়েছে। এরপর জমি দখল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে আশকার ও তার লোকজন। শুরু হয় একের পর এক হুমকি-ধামকি। গত শুক্রবার বিকেলে আমার বাড়িতে এসে আমার স্বামী ও একমাত্র ছেলেকে প্রাণনাশের হুমকি দেয় সন্ত্রাসী আশকার। পরদিন (গতকাল) আমার ওই ৪ শতক জমি দখল করবে এবং আমরা সেখানে গেলে গুলি ও বোমা মারবে বলে কড়া হুশিয়ারি দিয়ে যায়। এ ঘটনায় আমি বাঘারপাড়া থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি। এখন স্বামী-সন্তান দিয়ে চরম নিরাপত্তার মধ্যে আছি।’
এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, খাজুরা বাজারতলির ধর্মগাতী এলাকার গণি বিশ্বাসই সকল নাটের গুরু। বিরোধপূর্ণ জমি যেখানেই সেখানে গণির হাত থাকে। বিভিন্ন সন্ত্রাসীদের প্রভাবিত করে বিরোধপূর্ণ জমি দখলের চেষ্টা করে থাকে। গত ছয় মাস আগে গণির তৈরি ছকে পড়ে ধর্মগাতী মালোপাড়ার কার্ত্তিক বিশ্বাস ভয়ে বসতভিটা ছেড়ে সপরিবারে ভারতে চলে গেছেন। এলাকার সবাই গণির বিষয়ে জানলেও তার হাতে থাকা আশকারের মতো ভয়ংকর সন্ত্রাসীদের ভয়ে মুখ খুলতে পারেন না। গত মাস খানেক আগে সন্ত্রাসী আশকার জহুরপুর ইউনিয়নের মাঝিয়ালী এলাকায় এক ব্যক্তির কাছে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করেও বলে জানা গেছে।
বাঘারপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহাদত হোসেন জানান, অভিযোগ পেয়ে খাজুরা পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ওসি আরো বলেন, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড যেই করুক না কেনো, কাউকে ছাড় দেওয়া হবেনা।
