শহিদুল ইসলাম, বাঘারপাড়া
নানা অনিয়মে চলছে বাঘারপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। বেলা একটার পর আউটডোরে আর ডাক্তারের দেখা মিলছে না। হাসপাতালের ফার্মেসিও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ফলে দূর থেকে আসা অসহায় রোগীরা চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন।
উপজেলার জামালপুর গ্রামের আফরোজা বেগম (২৫) কয়েক বছর ধরে ডায়াবেটিস রোগে ভুগছেন। বাঘারপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তিনি নিয়মিত চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। সেই ধারাবাহিকতায় সোমবার তিনি হাসপাতালে আসেন চিকিৎসা নিতে। আউটডোরে টিকিট কেটে তিনি ডাক্তারও দেখান। পরামর্শ পত্রে কিছু পরীক্ষার নাম লিখে ডাক্তার আফরোজাকে পাঠান হাসপাতালের প্যাথলজিতে। প্যাথলজি বিভাগে রক্ত দেয়ার পর এ বিভাগের দায়িত্বরতরা জানান দুপুর ১ টা ৩০ মিনিটের পর রিপোর্ট দেয়া হবে। যথাসময়ে আফরোজা রিপোর্ট সংগ্রহ করেন। তখন আর আউটডরে কোন ডাক্তার নেই। হাসপাতালের ফার্মেসিও বন্ধ হয়ে গেছে।
আফরোজাকাকে আবার আগামীকাল ডাক্তারের কাছে আসতে হবে। পরামর্শপত্র দেখাতে হবে, এরপর ফার্মেসি থেকে ওষুধ সংগ্রহ করতে হবে। বাঘারপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এমন চিত্র প্রতিদিনকার।
দোহাকুলা গ্রামের জোসনা খাতুন উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। গতকাল তিনিও এসেছিলেন চিকিৎসা নিতে। প্যাথলজি থেকে রিপোর্ট নেয়ার পর আউটডোরে গিয়ে আর ডাক্তার পাননি। উপায় না পেয়ে জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত ডাক্তারের কাছ থেকে পরামর্শপত্র লেখান। কিন্ত ফার্মেসি বন্ধ হওয়ায় আর ওষুধ নিতে পারেননি। বাইরের দোকান থেকে তাকে ওষুধ কিনে বাড়ি ফিরতে হয়। জোসনা জানান, এখানে সেবা নিতে আসা সবাই দরিদ্র মানুষ। সরকারি ওষুধ পেলে সকলের জন্য ভালো হয়। কিন্ত ফার্মেসি বন্ধ থাকায় অনেকে বাইরের দোকান থেকে ওষুধ কিনে নেন। যা তাদের জন্য কষ্টকর।
ইন্দ্রার বর্নি, খলশীর আনোয়ারাসহ প্যাাথলজীর সামনে ভিড় জমিয়ে আছেন অন্তত ২০ জন। তারা সকলেই রিপোর্ট সংগ্রহ করে ডাক্তাররের কাছ থেকে পরামর্শ নেবেন। কিন্ত এদের কেউই আর এদিন না পারছেন ডাক্তার দেখাতে, না পারছেন ওষুধ নিতে। জরুরি বিভাগে নিয়োজিত ডাক্তারও এ সময় নামাজ ও দুপুরের খাবার নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। ফলে দীর্ঘ অপেক্ষার পর অনেকে জরুরি বিভাগের ডাক্তারের সেবা নিয়ে বাড়ি ফেরেন।
সোমবার দুপুর ১টা ৩০ মিনিটের পর জরুরি বিভাগে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে দায়িত্ব পালন করছেন সাব এ্যাসিসটেন্ট কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার আনোয়ার হোসেন। প্যাথলজি থেকে রিপোর্ট নিয়ে তার কাছে আসেন দোহাকুলা গ্রামের আলেয়া বেগম। আউটডোর থেকে যে পরামর্শ পত্র দেয়া হয়েছে আনোয়ার হোসেন সেইটার উপরই ওষুধের নাম লিখছেন। অথচ নিয়ম রয়েছে একজন এমবিবিএস ডাক্তারের পরামর্শ পত্রে কোনভাবেই মেডিকেল এ্যাসিসটেন্টরা লিখতে পারবেন না। এ হাসপাতালের শিশু রোগ বিশেজ্ঞ ডা. মনিরুজ্জামান বলেন, কোন ভাবেই একজন মেডিকেল এ্যাসিসটেন্ট এ কাজটি করতে পারেন না। একজন এমবিবিএস ডাক্তারের পরামর্শ পত্রে তার লেখার কোন অধিকার বা এখতিয়ার নেই।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, নীতিমালা অনুযায়ি আউডডোরে রোগী দেখার কথা সকাল নয়টা থেকে। অথচ কোন কোন ডাক্তার সাড়ে দশটায়ও আউটডোরের চেম্বারে আসেন না। আবার একটা বাজলেই বেরিয়ে যান। আউটডোরের রোগীদের ওষুধ দেয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত ফার্মেসি খোলা রাখার নিয়ম থাকলেও একটা বাজতে না বাজতেই ফার্মেসি বন্ধ হয়ে যায়।
এ বিষয়ে কথা হয় বাঘারপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান ডা. অরুপ জ্যোতি ঘোষের সাথে। তিনি জানান, এ মুহূর্তে আমি ঢাকায় একটি প্রশিক্ষণে আছি। এসে বিষয়টি খতিয়ে দেখব। আর দুপুর দুইটা পর্যন্ত আউটডোরে ডাক্তার থাকা ও ফার্মেসি খোলা রাখার নির্দেশনা দেয়া আছে।