জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক: এবার বাজারে উত্তাপ ছড়াচ্ছে চিনি। যশোরে সপ্তাহের ব্যবধানে পণ্যটি কেজিতে বেড়েছে অন্তত ১০ টাকা। গত সপ্তাহেও প্রতিকেজি চিনির খুচরা দাম ছিল ৮০ টাকা। গত দুইদিন যশোরের বাজার ঘুরে দেখা যায় প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ৮৮ টাকা থেকে ৯০ টাকা। ক্রেতা সাধারণের অভিযোগ- এক বছরের ব্যবধানে চিনির দাম প্রায় ডাবল করা হয়েছে। এতে অসাধু ব্যবসায়ী চক্রের কারসাজি রয়েছে বলেও মনে করেন তারা।
চাল-ডাল ও ভোজ্য তেলের উর্ধ্বগতির লাগাম টেনে ধরা যায়নি। শেষ পর্যন্ত ব্যবসায়ীদের দাবি মেনে সরকার ভোজ্য তেলের দাম বাড়িয়েছে। নতুন দাম নির্ধারণ প্রসঙ্গে সরকারের পক্ষে বলা হয়েছে দাম সমন্বয় করা হয়েছে। এরই মধ্যে বাড়লো চিনির দাম। মাসখানেক আগেও চিনির কেজি ছিল ৬৫ থেকে ৭০ টাকা। তখন টিসিবি চিনি বিক্রি করেছে ৫৫ টাকা কেজি দরে। গত এক মাস টিসিবির পণ্য বিক্রি বন্ধ রয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাতে বড়বাজারের হাটচান্নিতে কথা হয় উজ্জল বসু নামে এক ক্রেতার সাথে। তিনি বলেন, নিত্যপণ্যের উর্ধ্বগতির বাজারে দুর্মূল্য এখন চিনির দাম। চাল, ডাল ও ভোজ্য তেলেসহ বেশিরভাগ পণ্যের দাম বাড়তে শুরু করে গত রমজানের আগমুহূর্তে। বছরখানেক আগে চিনির দাম ছিল ৬০ থেকে ৬৩ টাকা কেজি।
খাদিজা নামের এক ক্রেতা জানান, রমজানের ভেতরে চিনির দাম বেড়ে হয়েছিল ৭৮ থেকে ৮০ টাকা। তবে প্যাকেট চিনি প্রতি কেজিতে ৫/৭ টাকা বেশি ছিল। তিনি বলেন, একের পর এক নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে নি¤œবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের সংসার চালাতে নাভিশ^াস উঠেছে। তিনি বলেন, আমার ৪ সদস্যের সংসার। গত এক বছরে ব্যয় বেড়েছে ৭ হাজারের বেশি, যা সামাল দিতে হিমসিম খেতে হচ্ছে।
এদিকে বেজপাড়া, বারান্দি মোল্লাপাড়া, উপশহর, পালবাড়ির মোড় এলাকার ছোট-বড় খুচরা দোকানে চিনির দাম ১শ’ ছাড়িয়ে গেছে। এ বিষয়ে বেজপাড়ার মুদি দোকানি রজত জানান, ২০/৩০ টাকার চিনি বেচাবিক্রি করে লাভের মুখে দেয়া যায় না। বাকিতেও পণ্য বিক্রি করতে হয়। যেকারণে একটু বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
হাটচান্নির মা-কালি ভান্ডারের সত্ত্বাধিকারী মধুসূদন পাল জানান, হঠাৎ-ই চিনির সরবরাহ কমে গেছে। যেকারণে বেশি দামে কিনে সামান্য লাভে বিক্রি করতে হচ্ছে। ইয়াছিন স্টোরের মালিক ইয়াছিন আলী একই কথা বলেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বড়বাজারের এক পাইকারি ব্যবসায়ী জানান, বিশ^বাজারে প্রায় সবপণ্যের দাম বেড়েছে। তবে দেশের বাজারে এখনো চিনির দাম বৃদ্ধি করার মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি। তিনি বলেন, আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিমণ চিনিতে ৪শ’ থেকে ৫শ’ টাকা পর্যন্ত মুনাফা করছেন। যেকারণে খুচরা বাজারে তার প্রভাব পড়েছে। তিনি মনে করেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ছুতোয় দাম বাড়ছে আমদানি পণ্যের।
তিনি আরও বলেন, এরআগে গত বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি এক আদেশে আমদানি পর্যায়ে আগাম কর ৫ শতাংশ করে এনবিআর। গত ৯ সেপ্টেম্বর নতুন করে চিনির দাম নির্ধারণ করে দেয় সরকার।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশে চিনির চাহিদা বছরে ১৮ থেকে ২০ লাখ টন। এরমধ্যে মাত্র ৫০ থেকে ৬০ হাজার টন চিনি বিএসএফআইসি উৎপাদন করে বাজারে ছাড়ছে।