শাহারুল ইসলাম ফারদিন
আসছে পহেলা বৈশাখ আর ঈদুল ফিতর ঘিরে অন্যরকম আনন্দধারা বইছে উৎসবপ্রেমী বাঙালির মনে। রমজানের প্রথম সপ্তাহজুড়ে বিপণী বিতানগুলোয় তেমন ভিড় না থাকলেও এসপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে যশোর শহরের মার্কেটগুলোতে ক্রেতাদের আনাগোনা লক্ষ্যণীয় ছিল। পছন্দের রং, ডিজাইন ও উপাদানের পোশাক ক্রয় করতে বিভিন্ন শপিংমলে ঘুরছেন ক্রেতারা। মার্কেটগুলোতে পুরুষের চেয়ে নারী ক্রেতার উপস্থিতি বেশি দেখা গেছে। এদিকে পোশাকের মান নিয়ে ক্রেতাদের মধ্যে দেখা গেছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। তাদের দাবি, বেশির ভাগ দোকানে খুঁজে পাচ্ছেন না ভালো মানের পোশাক। দাম নিয়েও রয়েছে অসন্তুষ্টি।
প্রতি ঈদেই শৌখিন নারীদের ভিড় দেখা যায় শাড়ির দোকানগুলোয়। এবারও শাড়ির দোকানগুলোয় ক্রেতাদের ভিড় বাড়ছে। দোকানিরা নিজেদের সংগ্রহে থাকা শাড়ি মেলে ধরছেন ক্রেতাদের সামনে। শহরের শাড়ি হাউজের বিক্রয় প্রতিনিধি জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, এ সপ্তাহের শুরু থেকে ভালোই ক্রেতা পাচ্ছি। দুই-একদিনের মধ্যে শাড়ির বাজারে ভিড় আরো বাড়বে। যেহেতু পহেলা বৈশাখ ও ঈদুল ফিতর সামনে। এখনো অনেকে শাড়ি পছন্দ করে রেখে যাচ্ছেন দুয়েক দিন পরে কিনবেন বলে জানাচ্ছেন ক্রেতারা।
থ্রিপিসের দোকান ইউনিক ফ্যাশানে কথা হয় সদরের নুরপুর গ্রাম থেকে আসা সোনিয়া আক্তার মিমের সঙ্গে। তারা ৩ বান্ধবী এসেছেন থ্রিপিস কিনতে। সোনিয়া জানান, ফেসবুকে অনেক শোরুম তাদের পোশাক নিয়ে লাইভ করে। ফেসবুকে লাইভ দেখে এখানে এসেছেন সরাসরি দেখে কেনার জন্য। সোনিয়ার সঙ্গে থাকা তার বান্ধবী তাশফি জানালেন, ড্রেস কেনা হয়ে গেলেই তারা ছুটবেন নতুন কসমেটিকস কী এসেছে তা দেখতে। শারমিন আক্তার তুলি ও সুরাইয়া আক্তার শান্তা জানান, শেষের দিকে মার্কেটগুলোতে প্রচুর ভিড় থাকে। দামও থাকে চড়া। তাই এবার আগেভাগেই টুকটাক কেনাকাটা সেরে ফেলছেন। আরেক ক্রেতা পপি সুলতানা জানান, গতবারের তুলনায় এ বছর পোশাকের দাম অনেক বেশি। এ ছাড়া নতুন কালেকশন এখনও তেমন আসেনি। বাজারে নতুন ডিজাইনের পাশাপাশি এখনও বেশির ভাগই পুরাতন ডিজাইনের পোশাকই বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে আড়ং, ইউনিক ফ্যাশান, সুতোয় বোনা, সেইলর, ঝিলিকসহ বেশকিছু ব্যবসায়ীরা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের দাবি, ঈদ উপলক্ষে বাহারি সব ডিজাইনের পোশাক নিয়ে এসেছেন তারা। বিক্রেতারা বলেন, ঈদে নারীদের কেনাকাটার তালিকায় এবার রয়েছে কুর্তি, টপস, ওয়ান-পিস, টু-পিস, নাইরা, সারারা, ঘারারা। তবে গরমে আরামের কথা মাথায় রেখে তারা বেছে নিচ্ছেন নানা বুটিক, সুতি ও লিলেন জামা।
মুজিব সড়কের আড়ং’র আউটলেট ম্যানেজার সাইমন রহমান বলেন, সপ্তাহজুড়ে তেমন ভিড় না থাকলেও আজ (গতকাল) আশাতীত সমাগম ঘটেছে। বিক্রিও বেশ ভালোই হচ্ছে। এইচএমএম রোডের ইউনিক ফ্যাশানের সত্ত্বাধিকারী রিয়াজুল ইসলাম শাওন জানান, ভারতীয় পোশাকের চাহিদা বেশি। প্রথম দিকে তুলনামূলক ক্রেতা উপস্থিতি কম। তবে সামনে বিক্রি বাড়বে। এ ছাড়া শেষের দিকে ক্রেতারা পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে গহনার দিকেও ঝুঁকবে। বড় বাজারের থ্রিপিচ হাউজের দোকানি আব্দুল্লাহ বলেন, রোজার শুরুতে এখন থ্রিপিস, শর্ট-টপস, লং-টপস আসছে। এ ধরনের পোশাকে ক্রেতাদের আগ্রহ রয়েছে। এছাড়াও ঈদ উপলক্ষে প্রতিদিনই বাজারে আসছে নতুন ডিজাইনের সব পোশাক।
এদিকে এ বছর পরিবহনসহ সব খাতে খরচ বেড়ে যাওয়ায় দাম কিছুটা বাড়তি বলে জানান ব্যবসায়ীরা। তারা জানান, দেশে সব জিনিসের দাম বেড়েছে। ফলে বেড়েছে পোশাকের দাম। পাশাপাশি এলসি সমস্যার কারণে ক্রেতাদের চাহিদামতো পণ্যের জোগান দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে দিন যত গড়াবে কেনাকাটা আরও জমে উঠবে বলে আশা সবার। আর পছন্দের পোশাক নিয়ে হাসিমুখে ঘরে ফিরবেন ক্রেতারা–এমনটাই প্রত্যাশা সবার।
যশোরের পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার জানান, মানুষ যাতে স্বাচ্ছন্দে কেনাকাটা করে বাড়ি ফিরতে পারেন সে জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। সকাল থেকেই মার্কেট, গুরুত্বপুর্ণ রাস্তার মোড়ে পুলিশ মোতায়েন থাকছে। এর বাইরেও রয়েছে পুলিশের মোবাইল টিম। আশা করছি ক্রেতারা ভালভাবেই কেনাকাটা করতে পারবেন।