এ. এস. সাগর: তেলের বাজার এখন ঊর্ধ্বমুখী। সরকারের পক্ষ থেকে দুই সপ্তাহ দামের হেরফের না হওয়ার কথা থাকলেও বাজারে দেখা গেছে উল্টো চিত্র। এখন থেকেই বাড়তে শুরু করেছে ভোজ্য তেলের দাম। সয়াবিন ১৫৭/১৫৮, সরিষা ১৯০, পাম ১৪০, সুপার ১৫০ টাকা লিটার দরে বিক্রি হচ্ছে। এখনই প্রতি লিটারেই ২ থেকে ৩ টাকা বাড়িয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
বড় বাজারের ব্যবসায়ী বিজন দত্ত বলছেন, বোতলজাত ভোজ্য তেলের দাম আরো ৭ থেকে ৮ টাকা বাড়তে পারে। সেক্ষেত্রে খোলা তেলের দামও বাড়বে ৩ থেকে ৪ টাকা।
এদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০ টাকা কমেছে। পেঁয়াজের দাম কমলেও ভরা মৌসুমে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে সবজি। সপ্তাহের ব্যবধানে বেশিরভাগ সবজির দামে তেমন হেরফের হয়নি। একই সঙ্গে দাম অপরিবর্তিত রয়েছে মুরগির। মাছের দামেও পরিবর্তন আসেনি খুব একটা।
শনিবার যশোরের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা ভালো মানের দেশি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি করছেন ২৫-৩০ টাকা। ছোট আকারের দেশি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকা।
পেঁয়াজের দামের বিষয়ে যশোরের বাজারের ব্যবসায়ী আলিম বলেন, মৌসুম শেষেও এবার পেঁয়াজের দাম খুব একটা বাড়েনি। এখন নতুন পেঁয়াজের ভরা মৌসুম। দিন যত যাচ্ছে বাজারে ভালো মানের নতুন পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়ছে। আর বাজারে পেঁয়াজের আমদানি বেশি হওয়ায় দাম কমেছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, আলু লাল ১৫, সাদা ১০, রসুন ৬০, আদা ৬০, কাঁচা মরিচ ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া শসা ৬০-৭০ টাকায় বিক্রি করছেন। পাকা টমেটোর কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকা, যা গত সপ্তাহে একই ছিল। গাজরের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকা।
এই তিন সবজির দাম কিছুটা কমলেও অন্যান্য সবজির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। শীতের অন্যতম সবজি ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। শিমের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। এছাড়া বরবটির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। লাউয়ের পিস বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। ব্রোকলি ৫০ টাকা, লালশাকের আঁটি ১০ থেকে ১৫ টাকা, সবুজ শাকও ১০ থেকে ১৫ টাকা। পালংশাকের আঁটি বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ১৫ টাকা। বেগুন ৫০-৬০, পেঁপে ২০, পাতা কপি পিস ১০-১৫ টাকা। এগুলোর দাম সপ্তাহের ব্যবধানে অপরিবর্তিত রয়েছে।
সবজির দামের বিষয়ে বড় বাজারের ব্যবসায়ী ওমর বলেন, এবার ফুলকপি চাষ অন্যান্য বছরের তুলনায় কম হয়েছে। যে কারণে চাহিদার তুলনায় বাজারে ফুলকপির সরবরাহ কম। সরবরাহ কম থাকায় দাম কমছে না। আর ফুলকপির দাম না কমার কারণে অন্যান্য সবজির দামও এবার তুলনামূলক বেশি।
চালের বাজারে দেখা গেছে অন্যরকম এক চিত্র। চালের দাম নিয়ে পাইকারী ও খুচরা ব্যবসায়ীরা একে অপরের দোষারোপ করছেন। পাইকারী বিক্রেতারা চালের দাম বাড়াননি বলে দাবি করছেন। অপরদিকে খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন পাইকারী বাজারে চালের দাম বেড়েছে এজন্য তারাও বর্ধিত দামেই চাল বিক্রি করছেন।
বাজারে দেখা গেছে, মিনিকেট ৬০-৬২, বাসমতি ৭০-৭২, কাজললতা ৫৪-৫৬, আঠাশ ৪৬-৪৮, সর্ণা ৪০-৪২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। চাল ব্যবসায়ী সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি চালের দাম ১ থেকে ২ টাকা করে বেড়েছে। উত্তম ট্রেডার্সের সত্ত্বাধিকারী চিত্ত রঞ্জন সাহা বলেন, ভরা মৌসুমে এভাবে দাম বৃদ্ধি পাওয়া অস্বাভাবিক। চালের বাজার মিল মালিকদের মর্জির উপর নির্ভর করে দাম বাড়ে ও কমে। যদি আমদানিকৃত চালের উপর সরকার ভ্যাট তুলে দেয় ও বাজার মনিটরিং সঠিকভাবে হয় তাহলে চালের দাম আর বাড়বে না বলে জানান এ ব্যবসায়ী।
মুরগির বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা গত সপ্তাহের মতো ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি করছেন ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকা। পাকিস্তানি কক বা সোনালী মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৩০ থেকে ২৪০ টাকা। আর লাল লেয়ার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা।
মাছ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রুই মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা। একই দামে বিক্রি হচ্ছে কাতল মাছ। টেংরা ৪৫০, মায়া ৪০০, বেলে ৪০০, বাইন মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকা। তেলাপিয়া ও পাঙাস মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৫০ টাকা। এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ টাকা। ছোট ইলিশের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। চিংড়ি বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকা কেজি। সপ্তাহের ব্যবধানে মাছের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।