শাহারুল ইসলাম ফারদিন
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচারণার কাজ শুরু হবে প্রতীক বরাদ্দের পর। প্রচারণার প্রধান দুই মাধ্যম হচ্ছে পোস্টার ও মাইকিং। এজন্য যশোরে প্রস্তুতি নিচ্ছেন ছাপাখানা এবং মাইক ব্যবসায়ীরা। নির্বাচন উপলক্ষে পোস্টার এবং লিফলেট ছাপার জন্য ছাপাখানার মালিক কাগজ-কালিসহ ছাপার উপকরণ মুজদ করছেন। আর মাইক ব্যবসায়ীরা তাদের মাইক মেরামতের পাশাপাশি নতুন মাইক সংগ্রহ করেছেন। অনেকে পোস্টার ও লিফলেটের ডিজাইনের কাজ আগেভাগে সেরে রেখেছেন। সবমিলিয়ে এই দুই সেক্টরের ব্যবসায়ীরা নির্বাচন ঘিরে বাণিজ্যের স্বপ্ন দেখছেন। কাগজ-কালিসহ ছাপার উপকরণের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় লাভ কম হবে বলে ব্যবসায়ীরা জানান।
প্রিন্টিং প্রেসের মালিকরা বলছেন, সব দল নির্বাচনে এলে ছাপাখানায় কাজের পরিমাণ বাড়বে। তাই মৌসুমী শ্রমিকদের সাথেও চলছে যোগাযোগ। ইসি ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হবে আগামী ১৮ ডিসেম্বর। সেদিনই শুরু হবে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা। যা চলবে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত।
নির্বাচন উপলক্ষে কাজের প্রস্তুতি ছাড়াও ছাপাখানাগুলোতে এখন চলছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ক্যালেন্ডার, ডায়েরি ছাপানোর কাজ। শহরের জামে মসজিদ লেনসহ বিভিন্ন এলাকায় এমন চিত্রের দেখা মিলে। তবে এবারে নির্বাচনী প্রচার ব্যয়ের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলে যাবে বিভিন্ন প্রার্থীর কর্মীরা জানান। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলসহ (বিএনপি) তাদের সমমনা অনেক দল দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীদে
র পাশাপাশি অন্যদের জন্যও নির্বাচন উন্মুক্ত রেখেছে। এই সুযোগে মনোনয়ন না পাওয়া নেতাদের অনেকেই ভোট দাঁড়িয়েছেন।
ছাপাখানার কয়েকজন কর্মচারী বলেন, কাগজের দাম আগের চেয়ে দ্বিগুণ। হয়তো আগের চেয়ে কম ছাপাবে পোস্টার। তবে কাজ পাওয়া যাবে। আর যদি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হয়, তাহলে কাজের পরিমাণ দ্বিগুণ হবে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বছরের ব্যবধানে কাগজ, কালি ও বিভিন্ন উপকরণের দাম বেড়েছে প্রায় ২৫ শতাংশ। খরচও বেড়েছে পোস্টার তৈরির।
শহরের জামে মসজিদ লেনের ইমি প্রির্ন্টার’র স্বত্বাধীকারী ইনামুল হক জানান, তারা প্রার্থীদের চাহিদা অনুযায়ী কাজের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তারা আশা করছেন- প্রতীক বরাদ্দের পর পুরোদমে কাজ শুরু হবে। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী ভোটে সাদাকালো পোস্টার করা হবে। বাজারদর অনুযায়ী (৫৫ গ্রাম কাগজ) লিফলেট প্রতি হাজার ছাপা যাবে ৯৫০ টাকা, ১৫ ইঞ্চি বাই ২০ ইঞ্চির পোস্টার প্রতি হাজার ছাপা যাবে দুই হাজার টাকায়। এছাড়া ১৮ ইঞ্চি বাই ২৩ ইঞ্চির পোস্টার ছাপা যাবে প্রতি হাজার ৩২শ’ টাকায়। অনন্যা প্রিন্টার্সের স্বত্বাধিকারী শফিয়ার রহমান শফি বলেন, এখন কাজের মৌসুম। কিন্তু দেশি কাগজ ও কালির দাম বাড়ায় লাভ হচ্ছে না। নির্বাচনী পোস্টারের আকার ও ওজন নির্ধারণ করা থাকে।
শহরের মাইকপট্টি এলাকার মাইক ব্যবসায়ী নিউ সুর ও সাথী’র স্বত্বাধিকারী আফতাব উদ্দীন মিন্টু জানান, নির্বাচন উপলক্ষে নভেম্বর থেকে তারা আশায় ছিলেন ভালো ব্যবসা হবে। কিন্তু ডিসেম্বর শুরু হলেও কোন ব্যবসা নেই। ব্যবসা মন্দা হওয়ার আশংকা করছেন তিনি। তবে প্রতিদ্বন্দিতামূলক নির্বাচন হলে ভালো ব্যবসা হবে বলে আশা ব্যাক্ত করেন তিনি। একই কথা জানান, সুর ও বাণী’র স্বত্বাধিকারী শেখ এরশাদুল ইসলাম ও সংগীতা’র স্বত্বাধিকারী নজরুল ইসলাম। তারা বলেন, এবার প্রতিদিন প্রচারণার জন্য ফুল সেট মাইক প্রতি ভাড়া পড়তে পারে ৪ শ’ থেকে ৫ শ’ টাকা।
জনতা প্রেস’র স্বত্বাধিকারী ইমরান হোসেন মনে করেন, প্রার্থী কম থাকার প্রভাব পড়বে ছাপার ব্যবসায়ে। ডিজিটাল মেশিনে বড় ব্যানার ও ফেস্টুন তৈরির কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় সেখানেও বাড়তি খরচ গুনতে হবে। নকশা ও রঙের ওপর নির্ভর করে প্রতি ফুট ডিজিটাল ব্যানার ও ফেস্টুনের দাম পড়বে ১৫ থেকে ২৫ টাকা, যা এক বছর আগে ছিল ১২ থেকে ২০ টাকা।
নির্বাচন সামনে রেখে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি থাকার কথা জানান জেলা মুদ্রণ শিল্প সমিতির সভাপতি সাব্বির মালিক বাবু। তিনি বলেন, নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হলে ছাপার ব্যবসা ভালো হয়। যেহেতু বড় একটি দল নির্বাচনে আসেনি, তাতে স্বাভাবিকভাবেই ব্যবসা অর্ধেক হবে না। ছোট দলগুলো তো খুব বেশি পোস্টার ছাপায় না। এবার আবার উপকরণের দাম বেশি। এরপরও নির্বাচন উপলক্ষে ছাপাখানাগুলো কিছুটা প্রাণ ফিরে পাবে বলে আশা করি।
