নিজস্ব প্রতিবেদক
আজ ১০ জানুয়ারি কমিউনিস্ট আন্দোলনের অন্যতম প্রাণপুরুষ কৃষক নেতা আব্দুল মতিন মূনীর এর ২১তম প্রয়াণ দিবস। কমরেড মূনীর ১৯৪০ সালে ঝিনাইদহ জেলার রঘুনাথপুর ইউনিয়নের নিজ তোলা গ্রামে একটি ধনী কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পারিবারিকভাবে তাঁর নাম রাখা হয়েছিলো আবুল বাশার। পরবর্তীতে নামটি ঢাকা পড়ে যায় তাঁর পার্টি টেক নামের আড়ালে।
তিনি স্কুল জীবনে থাকতেই প্রগতিশীল ছাত্র রাজনীতির সাথে যুক্ত হন। কলেজ জীবন শুরুর সাথে সাথে জেলার পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের প্রথম সারির ছাত্র নেতায় পরিণত হন। ১৯৬৪ সালে এমএম কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হন। তাঁর কেবিনেটের জিএস ছিলেন প্রয়াত বিএনপি নেতা তরিকুল ইসলাম।
১৯৬৪ সালেই তিনি তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের নিষিদ্ধ ঘোষিত পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টির সাথে সম্পর্কিত হয়ে পার্টি গ্রুপে সংগঠিত হন। কমরেড মূনীর ছিলেন জনপ্রিয় একজন ছাত্র নেতা। তিনি তাঁর পোষাক-পরিচ্ছদে ছিলেন খুবই আধুনিক। সেই সময়ে শহরের সবাই তাকে চিনতেন একজন স্টাইলিশ ছাত্রনেতা হিসাবে।
১৯৬৭ সালে তৎকালীন দেশ রক্ষা আইনে জেলার অন্যান্য ছাত্রনেতৃবৃন্দ ও শিক্ষকদের সাথে তিনিও গ্রেপ্তার হন। ১৯৬৮ সালে জেল থেকে মুক্তি পাবার পর পার্টির নির্দেশনায় ন্যাপের সাথে যুক্ত হন। ৬৮-৬৯ এর গণআন্দোলনে অত্যন্ত সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। এই সময়ে নোওয়াপাড়া বেঙ্গল টেক্সটাইল মিলের শ্রমিকদের সংগঠিত করে শ্রমিক আন্দোলনকে এগিয়ে নেবার চেষ্টা করেন।
১৯৭১ সালে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর আক্রমণের বিরুদ্ধে জনগণের প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। তাঁর নেতৃত্বে কমরেড তোজো, কমরেড আসাদ, কমরেড শান্তি, কমরেড মানিক, কমরেড ফজলুকে নিয়ে একটি বাহিনী গঠিত হয়। এরা ছিলেন সেই সময়ে শহরের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কমরেড। তাঁরা কেশবপুর-মণিরামপুর এলাকায় যুদ্ধ পরিচালনা করেন। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই এলাকা তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও পরবর্তীতে সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে এসে রাজাকাররা এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিতে থাকে।
এমন পরিস্থিতিতে কমরেড মূনীর তাঁর বাহিনীসহ খুলনার ডুমুরিয়া থানা অঞ্চলে চলে যান। অক্টোবরের মধ্যভাগে তাঁরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন যশোর শহরে ফিরে আসার। অন্য কমরেডদের আশ্রয়স্থল খোঁজার লক্ষ্যে তিনি যশোর শহরে চলে আসেন। ২৩ অক্টোবর মনিরামপুরের চিনেটোলায় কমরেড তোজো, কমরেড আসাদ, কমরেড শান্তি, কমরেড মানিক ও কমরেড ফজলু রাজাকারদের হাতে নির্মমভাবে নিহত হন।
১৯৭২ সালে পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টিকে বৃহত্তর যশোর জেলায় পুনরায় সংগঠিত করার লক্ষ্যে ৫ সদস্যের সাংগঠনিক কমিটি গঠিত হয়। পরবর্তীতে কমরেড মূনীর এই কমিটির সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ’৭৫ সালে তিনি পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হন।
২০০২ সালের ১০ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি মিলনায়তনে মাওলানা ভাসানী পরিষদের একটি আলোচনাসভায় আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন। এখানেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে প্রথমে ঢাকা কমিউনিটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে তাকে হৃদরোগ ইন্সটিটিউট হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত ডাক্তার মৃত ঘোষণা করেন। তাঁর মৃত্যুর সময় পরিবারের কেউ পাশে থাকার সুযোগ না থাকলেও তিনি তাঁর পরিবারের চেয়েও প্রিয় রাজনৈতিক সহযোদ্ধাদের কোলে মাথা রেখেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।