সুনীল ঘোষ
বিএনপির গণসমাবেশকে ঘিরে যশোর শহরের রাস্তা-ঘাট ছিল প্রায় জনশূন্য। সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালত ও ব্যাংক-বীমা খোলা ছিল। তবে ভেতরে প্রবেশে ছিল কড়াকড়ি। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে প্রধান ফটক বন্ধ রাখা হয়েছিল। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা থাকলেও বেচা-বিক্রি ছিল কম। পুলিশের বাধার কারণে শহরে ইজিবাইক ও রিকশাসহ যানবাহন চলাচলে ছিল সীমিত। যেকারণে নেতাকর্মীদের অনেকটা পথ পায়ে হেঁটে সমাবেশস্থলে আসতে দেখা যায়। টাউনহল ময়দানের চারপাশের গেটে আগে থেকেই বিপুল সংখ্যক পুলিশ অবস্থান নেয়। পুলিশের বাধা পেয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা ছড়িয়ে পড়ে। অনেকে পিছু হটে হোটেল-রেস্তোরায় অবস্থান নেন। দুপুরের মধ্যে হোটেলগুলোর খাবার ফুরিয়ে যায়।
খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার দাবিতে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে টাউনহল ময়দানে গণসমাবেশের ডাক দেয় বিএনপি। বুধবারের গণসমাবেশ সফল করতে ব্যাপক প্রস্তুতিও ছিল। বিপুল জনসমাগম ঘটাতে শহরের বিভিন্ন পাড়া-মহল্লা ও পার্শ¦বর্তী জেলা-উপজেলাসহ গুরুত্বপুর্ণ স্থানসমূহে গত কয়েকদিন ধরে সভা-সমাবেশও করেন দলটির নেতৃবৃন্দ।
যদিও সমাবেশ করার অনুমতি পাওয়া নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে ছিল সংশয়। মঙ্গলবার মধ্যরাত পর্যন্ত প্রশাসনের পক্ষ থেকে অনুমতির বিষয়ে কিছুই জানানো হয়নি।
বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত জানান, আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমতি না দিলেও প্রশাসনের সাথে ভালোই যোগাযোগ ছিল। সেকারণে ধারণা জন্মেছিল পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী গণসমাবেশে বাধা সৃষ্টি করবে না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পুলিশ কথা রাখেনি।
বুধবার কাকডাকা ভোর হতে বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে গাড়িভরে নেতাকর্মীরা যশোরে আসতে শুরু করেন। কিন্তু শহরের ভেতর গাড়ি ঢুকতে না পারায় তাদের কয়েক পথ পায়ে হেঁটে টাউনহল অভিমুখে আসতে দেখা যায়। ঝিকরগাছা যুবদলের নেতা সুজন মিয়া অভিযোগ করেন, তারা গাড়িভরে সমাবেশে আসছিলেন কিন্তু শহরের ভেতর গাড়ি আনতে না পারায় ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন নেতাকর্মীরা। তাদের অনেকে ধরপাকড়ের ভয়ে বাড়ি ফিরে যান।
মণিরামপুর যুবদলের সদস্য সচিব সাইদুল অভিযোগ করেন, দুপুরের সমাবেশে যোগ দিতে সকাল ৭টার ভেতর মণিহার চত্বরে পৌঁছান তিনিসহ কয়েকশ’ নেতাকর্মী। তারা শহরে গাড়ি নিয়ে আসতে পারেননি । অনুরুপ অভিযোগ করেন কাশিমপুর ইউনিয়ন বিএনপির নেতা আইয়ুব হোসেন।
সকাল ৯টার দিকে বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিতের নেতৃত্বে একটি মিছিল সমাবেশস্থলে ঢুকে পড়ে। এরপরই নেতাকর্মীরা প্রধান প্রবেশপথ দিয়ে টাউনহল ময়দানে জড়ো হতে থাকেন। এ সময় তারা খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি, বিদেশে চিকিৎসার ব্যবস্থা ও তারেক জিয়ার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সকল মামলা প্রত্যাহারের দাবি তুলে স্লোগান দেন।
বিএনপি নেতা-কর্মীরা টাউনহল ময়দানের পুরোটা দখলে নেয় দুপুর ১২টার দিকে। যদিও সমাবেশ শেষ হওয়ার আগেই সমাবেশ স্থল প্রায় কর্মীশুন্য হয়ে পড়ে। যেকারণে সমাবেশের প্রধান অতিথি মীর্জা আব্বাস তার বক্তব্য সংক্ষিপ্ত করেন।
কোতোয়ালি থানার ওসি তাজুল ইসলাম জানান বিএনপির গণসমাবেশে পুলিশ কোন বাধা সৃষ্টি করেনি। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছিল।