চারিদিকে যে অশনি সংকেত তাতে মনে হচ্ছে আমরা যেন বন্য জীবনের দিকে ধাবিত হচ্ছি। আর তাদের আস্কারা দিয়ে সমাজটাকে এই কুপথে ধাবিত করছে, তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করছে সভ্য সমাজের মুখোশধারাী এক শ্রেণির সমাজপতিরা। মণিরামপুরের মনোহরপুর গ্রামের ঋষিপল্লিতে সম্প্রতি যা ঘটেছে তাতে এই সমাজটা মানুষের বাসোপযোগী আছে বলে ভাবতে কষ্ট হয়। গত ৫ মার্চ ঋষিপাড়ার এক গৃহবধূকে ধর্ষণের চেষ্টা করে ওই গ্রামের এক দুর্বৃত্ত । সংঘটিত ঘটনার বিচার না হওয়ায় ওই গৃহবধূ বিষপানে আত্মহত্যা করেছেন। ওই এলাকার তথাকথিত সমাজপতিরা বিচার করতে চেয়ে ক্ষতিগ্রস্তকে মামলা করতে না দিয়ে থানা থেকে ফিরিয়ে এনেছিল। কিন্তু শালিসে দৃর্বৃত্ত হাজির না হওয়ায় সেই বিচার হয়নি।
একজন ধর্ষক, যে এই চক্রের দাপটধারী সদস্য তার বিচার বলতে সমাজপতিরা কি করতে চেয়েছেন তা আমাদের জানা নেই। ধর্ষককে আইনের হাতে তুলে দেয়া ছাড়া স্থানীয় বিচারের প্রশ্নই আসে না। যারা বিচার করে দেয়ার আশ্বাস দিয়েছিল তারা নিঃসন্দেহে ঋষি পরিবারটির সাথে প্রহসন করেছে। নতুবা দুর্বৃত্ত শালিসে হাজির না হওয়ায় তারা থেমে গেল কেন? হাজির না হওয়ার পেছনে তাদের ইঙ্গিত ছিল কিনা সেটাও ভাববার বিষয়। যারা সমাজপতি হয়েছেন বলে ধর্ষণের শালিস স্থানীয়ভাবে করে দেবেন এ আইন তারা কোথায় পেয়েছেন? সমাজের এসব সমাজপতি নামধারী দুর্বৃত্তদের আস্কারায় সমাজটা আজ রসাতলে যেতে বসেছে। ধর্ষক তথা অপরাধীদের শাস্তি হওয়ার আগে এ সব পৃষ্ঠপোষকদের শাস্তি হওয়া দরকার।
কিছুটা আশার কথা জানা যায় সমাজপতিদের মধ্যে এক ইউপি সদস্যকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে। জানিনে ওই জিজ্ঞাসাবাদে কি বেরিয়ে আসবে। আমরা বলবো মণিরামপুরের এ ধর্ষক যেন কোনোক্রমেই কোনো অজুহাতে পার না পায়। ঋষিরা এমনিতেই এ সমাজে অবহেলিত। তারা সামাজিক বৈষম্যের শিকার এবং অনেক অধিকার থেকে বঞ্চিত। ব্যথায় তাদের বুক ফাটে, অব্যক্ত বেদনায় তারা ছটফট করে। কিন্তু সমাজের কাছে, আইনের কাছে যেতে পারে না। ধর্ষণের জ্বালা নিয়ে একজন যখন আইনের কাছে যেতে চেয়েছিল কিন্তু তাও যেতে পারেননি। কেউ যেন আইনের সেবা থেকে বঞ্চিত না হন আমরা কামনা করি। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর নেতাদের প্রতি সবিনয় নিবেদন তারা যেন ঋষি পরিবারটির পাশে শক্তিশালি অবস্থান নিয়ে দাঁড়ান। এ সমাজটাকে বাসযোগ্য করে তুলতে হবে। দুর্বৃত্তরা মাথা উঁচু করে দাপিয়ে বেড়াবে তা হতে পারে না।