নিজস্ব প্রতিবেদক
যশোরের চৌগাছা উপজেলার হিজলী ক্যাম্পের বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যদের বিরুদ্ধে নিরীহ ইজিবাইক চালককে ফেনসিডিল মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ উঠেছে। বাড়ির উঠান থেকে চুরি হয়ে যায় ইজিবাইকটি। মাঠের মধ্যে পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধারের পর মালিকের বিরুদ্ধে ২৫ বোতল ফেনসিডিলের মামলা দিয়েছে বিজিবি।
গত মঙ্গলবার চৌগাছা থানায় এই মামলা করেছেন হিজলী বর্ডার আউট পোস্ট (বিওপি) নায়েক মো. শামীম আহম্মেদ। নিরীহ দরিদ্র ইজিবাইক চালককে মামলায় ফাঁসানোর ঘটনায় হতবাক হয়েছেন এলাকাবাসী। ভুক্তভোগী আবদুর সালাম যশোরের চৌগাছা উপজেলার সুখপুকুরিয়া গ্রামের বাসিন্দা। মামলায় তাকে পলাতক দেখিয়েছে বিজিবি।
বাদী হিজলী বিজিবি ক্যাম্পে নায়েক মো. শামীম আহম্মেদ মামলার এজাহারে উল্লেখ করেছেন, ১০ জানুয়ারি ভোর ৪টা ২০ মিনিটে চৌগাছা থানার বল্লভপুর গ্রামস্থ মেইন পিলার ৪১ হইতে আনুমানিক ৫শ’ গজ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বল্লভপুরের জনৈক সন্তোষ ঘোষের জমির দক্ষিণ পাশের মাঠের মধ্যে কাঁচা রাস্তার উপর ইজিবাইকটি থামানোর সংকেত দেয়া হয়।
চালক আবদুস সালাম ইজিবাইকটি ফেলে পালিয়ে যায়। তার ইজিবাইক তল্লাশি করে পিছনের সিটে ব্যাটারির পাশে বিশেষ কায়দায় সাজানো ভারতীয় ফেনসিডিলের ২৫ বোতল উদ্ধার করা হয়।’ এই মামলার বিজিবির তিন সদস্যকে সাক্ষী করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানান, বিজিবি মামলার এজাহারে উল্লেখ করেছে বল্লভপুর গ্রামের সন্তোষ ঘোষের জমির পাশ থেকে ইজিবাইক ও ফেনসিডিল উদ্ধার করেছে। প্রকৃতপক্ষে বল্লভপুর গ্রামে সন্তোষ ঘোষ নামে কোন ব্যক্তি নেই। প্রকৃতঘটনাস্থল সুখপুুকুরিয়া হইতে সাঞ্চাডাঙ্গা সড়কের বাগেরমাঠ। যা সীমান্ত থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার ভিতরে বাগেরমাঠের অবস্থান।
অথচ এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে ঘটনাস্থল সীমান্তের ৫শ’ গজের মধ্যে। যা মিথ্যা ও কাল্পনিক দাবি করেছেন এলাকাবাসী।
এ বিষয়ে মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে মামলার বাদী ও বিজিবি হিজলী ক্যাম্পের নায়েক মো. শামীম আহমেদ বলেন, সুখপুুকুরিয়া হতে সাঞ্চাডাঙ্গা সড়কের বাগেরমাঠ এলাকা থেকে ইজিবাইকটি উদ্ধার করা হয়। চালক পালিয়ে যাওয়া চিনতে পারিনি। এজন্য মালিকের নামে মামলা হয়েছে।
এজাহারের ঘটনাস্থল বল্লভপুর উল্লেখ ও অসঙ্গতির বিষয়ে জানাতে চাইলে নায়েক মো. শামীম আহমেদ বলেন, ভোরে অভিযান চালানো হয়। ঠিকমত স্থান চিনতে পারিনি, এজন্য হয়তো ঘটনাস্থল ভুল হতে পারে। পাল্টা প্রশ্নের এক পর্যায়ে ফোন কেটে দেন তিনি।
জানা যায়, আবদুর সালাম পৈত্রিক ১৭ শতক জমি বন্ধক রেখে একটি ইজিবাইক কিনেছিলেন। সেই ইজিবাইক চালিয়ে সংসার চলে। বাড়ির উঠানে ইজিবাইকটি তালা মেরে সোমবার রাতে ঘুমিয়ে পড়েন আবদুর সালাম। চোরেরা তার ঘরের বাইরে থেকে দরজা আটকে রেখে ইজিবাইকটি নিয়ে যায়। প্রতিবেশিরা তাকে উদ্ধার করে।
বাইরে এসে দেখেন তার ইজিবাইকটা নেই। এক পর্যায়ে জানতে পারেন সুখপুকুরিয়া-পুড়াপাড়ার সড়কের বাগেরমাঠ নামক স্থানে ইজিবাইকটি ফেলে রেখে যায় চোরেরা। সেই ইজিবাইক উদ্ধার করেছে বিজিবি’র টহল দল। খবর পেয়ে মঙ্গলবার স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান হবিবর রহমান, মেম্বর জাহাঙ্গীর আলমসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে হিজলী বিজিবি ক্যাম্পে যান আবদুর সালাম। তখন বিজিবি ক্যাম্প থেকে জানানো হয়, ইজিবাইকটি থানায় হস্তান্তর করা হবে।
সেখানে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেয়া হয়। বুধবার আবদুর সালাম খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, ইজিবাইক থেকে ২৫ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার দেখিয়ে তার বিরুদ্ধে মাদকের মামলা দেয়া হয়েছে। বিজিবির সাজানো মিথ্যা মামলায় একজন নিরীহ মানুষকে ফাঁসানোর ঘটনায় হতবাক হয়েছে এলাকাবাসী। আবদুর সালাম এলাকায় একজন ভাল মানুষ হিসেবে পরিচিত। তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নেই।
ভুক্তভোগী আবদুর সালাম বলেন, আমার ইজিবাইক চুরি হয়েছে। খবর পেয়ে চেয়ারম্যান, মেম্বরসহ স্থানীয় গণ্যমাণ্য ব্যক্তিদের নিয়ে বিজিবি ক্যাম্পে গিয়েছিলাম। তখনো বলেনি ইজিবাইকে ফেনসিডিল পাওয়া গেছে। আমাদের বলেছে থানা থেকে ইজিবাইক নিয়ে নিতে। পরে শুনছি আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। আমি খেটে খাওয়া মানুষ। কোন অপরাধের সঙ্গে জড়িত নই। মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। সুষ্ঠু তদন্ত করার দাবি জানাচ্ছি। দোষী হলে যেকোন শাস্তি আমি মাথা পেতে নেবো।
এ বিষয়ে সুখপুকুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হবিবর রহমান বলেন, আবদুর সালাম এলাকায় ভাল মানুষ হিসেবে পরিচিত। তার ইজিবাইকটি চুরি হয়েছিল। খবর পেয়ে স্থানীয় মেম্বর, গণ্যমাণ্য ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে আমিও বিজিবি ক্যাম্পে গিয়েছিলাম। তখন বিজিবি বলেনি ওই ইজিবাইকে ফেনসিডিল পাওয়া গেছে। পরে শুনছি আবদুর সালামের নামে মাদক মামলা হয়েছে।
এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চৌগাছা থানার উপপরিদর্শক শাহীনুর রহমান শাহীন বলেন, প্রাথমিক তদন্তে ঘটনার সত্যতা পেয়েছি। তদন্ত করে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
যশোর ৪৯ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল শাহেদ মিনহাজ সিদ্দিকী বলেন, ইজিবাইকের মাধ্যমে মাদক চোরাকারবারিরা নতুন কৌশলে মাদক পরিহন করে। সেই কৌশলের অংশ হিসাবে ইজিবাইক মালিকও জড়িত।
কোন নিরীহ মানুষকে ফাঁসানো হয়নি। যদি ইজিবাইক চুরি হত; তাহলে মালিক নিকটস্থ থানাতে অভিযোগ দিতো। তিনি কিন্তু থানায় কোন অভিযোগ দেননি। এর আগেও এই আবদুর সালামের বিরুদ্ধে থানায় মাদক সংশ্লিষ্ট মামলা রয়েছে বলে জানান তিনি।