নিজস্ব প্রতিবেদক
বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না যশোর-৪ (বাঘারপাড়া-অভয়নগর) আসনের এমপি রণজিত কুমার রায়ের। এবার আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নের আবেদনসহ একটি ছবি নিয়ে কঠোর সমালোচনা চলছে। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন ফরম হাতে নিয়ে ঢাকার ন্যাম ভবনে ওই ছবিতে নাশকতা মামলার দুই আসামিকে দেখা যাচ্ছে। পাশাপাশি গ্রুপ ওই ছবিতে বিএনপি পরিবারের আরও দুই সদস্য রয়েছেন। নিজ সংগঠনের নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে নাশকতা মামলার দুই আসামি ও বিএনপির দুই নেতাকে সাথে নিয়ে তোলা ছবিটি দেখে নানা প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে সাধারণ লোকজনের কাছে।
ইতিপূর্বেও মানবতা বিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত আমজাদ রাজাকারের পক্ষে অবস্থান নিয়ে নিজ দলীয় নেতাকর্মীদের নানাভাবে নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে এমপি রণজিত কুমার রায়ের বিরুদ্ধে। যা দৈনিক কল্যাণে একাধিক সংবাদ প্রকাশিত হয়। সর্বশেষ ওই মামলার রায় হওয়ার পর দৈনিক কল্যাণের পক্ষ থেকে বক্তব্য নেয়ার সময় বলেছিলেন ‘আমিও তো রাজাকার ছিলাম।’ এই বক্তব্য নিয়ে ভিডিও রিপোর্ট ভাইরাল হয়।
স্থানীয় ও দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। একাধিকবার যশোর-৪ আসন থেকে আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য রনজিত কুমার রায় এবারও নির্বাচনের মাঠে রয়েছেন। কিন্তু দলীয় নেতাকর্মীদের এড়িয়ে চলছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। গত ১৯ নভেম্বর দলীয় মনোনয়ন ফরম ক্রয় করেন রনজিত কুমার রায়। আর সেই মনোনয়ন ফরম নিয়ে ঢাকার ন্যাম ভবনে একটি গ্রুপ ছবি তোলেন তারা। ওই ছবিতে রনজিত রায়ের বাম পাশে রয়েছেন বাঘারপাড়ার বর্তমান পৌর মেয়র কামরুজ্জামান বাচ্চু, তার পাশেই কোর্ট পরিহিত পৌর সভার ৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং ৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম। তিনি এলাকার কড়াইতলা গ্রামের মনছের মোল্যার ছেলে। ২০১৫ সালের ২২ এপ্রিল রাতে সদর উপজেলার চান্দুটিয়া গ্রামে পেট্রোল বোমা নিয়ে নাশকতা মূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা করে পুলিশ। ওই মামলার এজাহার নামীয় ১২ নম্বর আসামি শহিদুল ইসলাম।
অপরদিকে ওই ছবিতে দেখা যাচ্ছে আরিফ খান তুর্কি নামে এক ব্যক্তি। তিনি বাঘারপাড়া পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি এবং উপজেলা বিএনপির সদস্য। আরিফ খান তুর্কি এলাকার মহিরণ গ্রামের শরিফ মাস্টারের ছেলে। তার বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের ৮ আগস্ট বাঘারপাড়া থানায় ৭ নম্বর এবং ১৪ জুন ১৫ নম্বরসহ মোট দুইটি নাশকতা মূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগে মামলা আছে। এছাড়া ছবিতে আছেন বাঘারপাড়া পৌরসভার মহিরণ এলাকার জামির হোসেন ও সাজ্জাদ খন্দকার বিএনপি পরিবারের সদস্য বলে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ জানান।
উল্লেখ্য এমপি রনজিত কুমার রায়ের বিরুদ্ধে এর আগেও দলীয় কর্মকাণ্ডকে পাশ কাটিয়ে বিএনপি এবং জামায়াতের লোকজন নিয়ে চলাফেরা করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। শুধু তাই নয়, বাঘারপাড়ার আমজাদ রাজাকারের ছেলেদের সেল্টার দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উপর অমানুষিক নির্যাতন চালিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এই বিষয়েও তার বিরুদ্ধে দৈনিক কল্যাণ পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়।
বাঘারপাড়া উপজেলার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীরমুক্তিযোদ্ধা হাসান আলী জানিয়েছেন, ‘আমাদের এমপি রনজিত বাবু তো আওয়ামী লীগ করেন না। উনি বিএনপি ও জামায়াত নিয়ে চলছেন। চাকরি দিয়েছেন বিএনপি ও জামায়াতের লোকজনদের। আমজাদ রাজাকারের পরিবারকে সমর্থন দিয়েছেন। বিল্লাল ও জুলফিকার রাজাকারদের নিয়ে থাকেন। বিষয়টি আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনাকেও জানানো হয়েছে।’ তিনি আরও জানান, ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমরা তার পক্ষে নেই। দল যদি মনোনয়ন দেয় সে ক্ষেত্রে কাজ করবো। কিন্তু এলাকার জনগণ তাকে চাচ্ছেনা। সর্বশেষ গতকাল ২০ নভেম্বর বিষয়টি দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাহেবকেও জানানো হয়েছে।’
এই বিষয়ে জানতে চাইলে রণজিত কুমার রায় মুঠোফোনে দৈনিক কল্যাণকে বলেন, তুর্কি আর শহিদুল নাশকতার মামলার আসামি কিনা আমার জানা নেই। ছবিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় সমালোচনা হচ্ছে এমন প্রশ্নে তিনি কোন মন্তব্যও করবেন না বলে সংযোগ কেটে দেন।