নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান আওয়ামী লীগের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেছেন, সাড়ে ১৫ বছর তারা আমাদের শোষণ করে দেশের সম্পদগুলো অত্যন্ত সুচতুরভাবে দেশের বাইরে নিয়ে গেছে। হিসাবে এসেছে, তার পরিমাণ ২৬ লক্ষ কোটি টাকা, যা বাংলাদেশের বার্ষিক বাজেটের ৫ গুণ। এই টাকা রাস্তার ভিক্ষুক থেকে শুরু করে দেশের ১৮ কোটি মানুষের টাকা। তারা সমস্ত ব্যাংক চুরি করেছে। তারা মানুষের শারীরিকভাবে নির্যাতন এবং মান-ইজ্জতের ওপর আঘাত শুধু নয়, মানুষের রিজিক নিয়েও টানাটানি করেছে। দেশের প্রতি এবং দেশের মানুষের প্রতি যদি তাদের ন্যূনতম শ্রদ্ধাবোধ ও ভালোবাসা থাকতো তাহলে জাতির প্রতি এমন নির্দয় আচরণ তারা করতেন না। এ অবস্থা থেকে দেশকে বের করে আনতে হবে। বুধবার রাতে যশোরের হোটেল ওরিয়নে এক সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধান অতিথি বলেন, এখন একটা নতুন ব্যবস্থা দরকার। সেই নতুন ব্যবস্থার জন্যেই আমাদের সন্তানেরা রাস্তায় বুক পেতে নেমেছিল। তারা ছোট্ট একটা যৌক্তিক দাবি নিয়ে নেমেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বরাবরের মতো দমন করতে গিয়ে তারা (আ. লীগ) বিপদে পড়ে গেছে। তারা ধারণা করেছিল অতীতের মতো এবারও ঠিক করে ফেলবে, কিন্তু না।
ডা. শফিকুর রহমান আরও বলেন, আমরা আমাদের স্বাধীনতার সুরক্ষা দিতে পারিনি। সেই মূল্য আমাদের পরিশোধ করতে হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। এখনও সেই যন্ত্রণা থেকে আমরা পুরোপুরি মুক্তি পাইনি।
তিনি বলেন, জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের মাধ্যমে এদেশের তরুণ সমাজ জালিমদের বিতাড়িত করেছে। তারা আমাদের জাতীয় বীর। আমরা তাদের রক্তের কাছে ঋণী। আমরা তাদের রক্তের ঋণ পরিশোধ করতে অঙ্গীকারাবদ্ধ। ইনসাফপূর্ণ সমাজ কায়েমের মাধ্যমে তাদের সেই ঋণ পরিশোধ করতে হবে। এই দেশ আমরা তরুণদের হাতে তুলে দিতে চাই।
জামায়াত আমীর আরও বলেন, আমরা চাই না কেউ এমন রাজনীতি করুক যাতে ক্ষমতার মাঝপথে বা শেষে দেশ ছেড়ে পালাতে হয়। তাদের দেশ ছেড়ে পালাবার পর আমরা ধারণা করেছিলাম এ জাতি তাদের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেয়েছে। কিন্তু না, তারা বিদেশে বসে বিদেশের বন্ধুদের সাথে এখনও ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। পালিয়ে গিয়েও এদেশকে শান্তি দিচ্ছে না। যদি জাতির বৃহত্তর ঐক্য থাকে তাহলে সকল ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়েছে এবং হবে, ইনশাল্লাহ।
তিনি আরও বলেন, তারা দেশ শোষণ করতে গিয়ে জাতিকে বিভক্ত করেছে বিভিন্নভাবে। সংখ্যালঘু, স্বাধীনতার পক্ষে স্বাধীনতার বিপক্ষে বলে গোটা জাতিকে ভাগ ভাগ করে রেখেছিল। তারা নিজেদের স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি দাবি করে নিজের দেশকে অন্যের হাতে ইজারা দিয়েছিল। তারা আত্মস্বীকৃত ইজারাদার। আমরা কি পিন্ডির হাত থেকে মুক্তি পেয়েছিলাম দিল্লির হাতের বন্দি হওয়ার জন্যে? বাংলাদেশ স্বাধীন দেশ। স্বাধীনতার মর্যাদা নিয়েই এদেশ টিকে থাকবে।
জামায়াতের যশোর জেলা আমীর অধ্যাপক গোলাম রসুলের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন দলের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। জেলা সেক্রেটারি অধ্যক্ষ আবু জাফর সিদ্দিক ও সহকারী সেক্রেটারি নূর আল মামুনের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন আদ-দ্বীন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ডা. শেখ মহিউদ্দীন, আইনজীবী সমিতির সভাপতি আবু মোর্তজা ছোট, প্রেসক্লাব যশোর সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন, যশোর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. আহসান হাবিব, লেখক গবেষক বেনজীন খান, অধ্যাপক মাহবুব মুর্শিদ, ডা. মাহফুজুর রহমান।