জেমস রহিম রানা ও আব্দুল্লাহ আল মামুন সোহান: করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন সংক্রমণের হার বৃদ্ধি পাওয়ায় শিক্ষার্থীদের সুরক্ষায় ২১ জানুয়ারি থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশের সব স্কুল কলেজ বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। একই সাথে পরিস্থিতি মোকাবেলায় ১১ দফা নির্দেশনামূলক প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। সরকারি নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে সমাগম এড়াতে কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখতে হবে। কিন্তু সেই নির্দেশনা মণিরামপুরে সর্বত্র উপেক্ষিত। কিছু কিছু সেন্টার প্রকাশ্যে চালানো হলেও অনেক কোচিং সেন্টার ও বাসায় প্রাইভেট পড়ানো হচ্ছে দরজা বন্ধ করে। সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কোচিং চলায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সচেতন মহল।
মণিরামপুরে সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কতিপয় শিক্ষক নানা কৌশলে প্রশাসনের নজরদারি এড়িয়ে প্রাইভেট বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। সকাল ও বিকেলে পৌরশহরের অনেক কোচিং সেন্টার ও বাসা বাড়ির সামনে শিক্ষার্থীদের ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
প্রতিমাসে জন প্রতি এক থেকে দেড় হাজার টাকা দিতে হয় সরকারি ওই স্কুল শিক্ষককে।
একজনের দেখাদেখি, বসে নেই অন্যান্য শিক্ষকরাও। তাহেরপুর গ্রামে রয়েছে কয়েকটি কোচিং সেন্টার ।
পোড়াডাঙ্গার একটি বাড়িতে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের ৪টি ব্যাচ পড়াচ্ছেন সকাল ও বিকেলে। সেখানে একটি কক্ষে গাদাগাদি করে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী পড়ানো হয়। তাহেরপুর আকুঞ্জি মসজিদ সংলগ্ন বাড়িতে পড়ানো হয় সকাল বিকেল দুটি ব্যাচ। গ্রামীণ ব্যাংকের পাশে প্রতিদিন দুবেলা ৪০-৫০ জন ছাত্র-ছাত্রী নিয়ে পড়ানো শুরু হয়েছে। থেমে নেয় পাইলট স্কুল সংলগ্ন কলেজ শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য। রীতিমত ব্যাচ আকারে খোলা ছাদ কিংবা চারদেয়ালের দরজা বন্ধ করে পড়ান্ োহচ্ছে ৩০ জন ছাত্রীকে। মোহনপুর বটতলায় কলেজ বন্ধের সুযোগে মহিলা কলেজের এক শিক্ষক সকালে দুটি ব্যাচ পড়ানো নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কামালপুর সড়কে আরেক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকের বাসা। রোজ বিকল ৪ টায় তিনিও পড়াচ্ছেন ২৫ জন ছাত্রীর সমন্বয়ে একটি ব্যাচ।
সম্মিলনী আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বিকেল ৩টায় স্কুল কক্ষেই ব্যাচ আকারে পড়াচ্ছেন ছাত্রছাত্রীদের। কেউ বা পড়াচ্ছেন স্কুলের ক্লাস রুমে। আবার, অনেক শিক্ষক তাদের প্রাইভেট ব্যাচগুলোর ক্লাসের নির্ধারিত স্থান থেকে সরে গিয়ে ভিন্ন বাসায় ক্লাস নিচ্ছেন। বিভিন্ন বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের অনেকে ব্যক্তিগতভাবে সাইনবোর্ডবিহীন অনেক কোচিং সেন্টারে পড়াচ্ছেন। এছাড়াও কলেজ ও ভার্সিটির ছাত্রদের দিয়ে যেনতেনভাবে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয় কয়েকটি কোচিংয়ে। যেখানে স্বাস্থ্যবিধি না মানার অভিযোগ রয়েছে।
অনেকেই বলছেন, জনসমাগম এড়াতে যেখানে সরকার দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছে, সেখানে মণিরামপুরে এই নির্দেশনা উপেক্ষা করে কোচিং সেন্টার খোলা রাখা হয়েছে।
অভিভাবক আসাদুজ্জামান আসাদ অভিযোগ করে বলেন, একাধিক শিক্ষার্থীদের নিয়ে কোচিং চলায় বজায় থাকছে না সামাজিক দূরত্ব। যেখানে সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ কোচিং সেন্টার বন্ধের নির্দেশ দেন। সেখানে কিভাবে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে কোচিং সেন্টার চালায় এমন প্রশ্ন সর্বত্রই।
এদিকে কোচিংয়ের ব্যাপারে কথা বলতেই একজন শিক্ষক রীতিমত অন্যজনকে দূষছেন।
মণিরামপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বিকাশ চন্দ্র সরকার বলেন, শিক্ষকদের কোচিং করানোর বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। এখন যেহেতু জেনেছি দ্রুত এ ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মণিরামপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সৈয়দ জাকির হাসান বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে মণিরামপুরের সব কোচিং সেন্টার বন্ধ রয়েছে। যদি কেউ খোলা রাখে আমরা তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেব। তবে যদি কোন স্কুলের শিক্ষক ব্যক্তিগতভাবে ছেলেমেয়েদের প্রাইভেট পড়ান সেক্ষেত্রে সেই প্রতিষ্ঠান থেকে বা অভিভাবকের পক্ষ থেকে অভিযোগ আসলে আমরা তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।