ঢাকা অফিস
বিরোধী মতের রাজনীতি ও মানবাধিকার সুরক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, প্রতিশোধ নয়—সমাধানের পথে এগোতেই চায় তাঁর দল। তিনি বলেন, “কোনো বাংলাদেশিকেই রাষ্ট্রের ভয়ে বাঁচতে হবে না—সে সরকারপন্থী হোক বা বিরোধী।”
বুধবার (১০ ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে ফেসবুকে দেওয়া এক বিবৃতিতে তিনি এসব মন্তব্য করেন।
তারেক রহমান বলেন, বাংলাদেশের জন্য এখন রাজনীতির চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো একটি “ঐক্যবদ্ধ দেশ” গড়া—যেখানে সবার জন্য মানবাধিকার নিশ্চিত থাকবে, যেখানে কথা বলার স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠিত হবে এবং বিরোধী মতকে গণতন্ত্রের অংশ হিসেবে দেখা হবে।
“ভিন্ন মতের কারণে কাউকে নিপীড়িত হতে হবে না বা গুম হয়ে যেতে হবে না,”—যোগ করেন তিনি।
‘১৬ বছরের অন্ধকার, ভয় আর নিপীড়নের সংস্কৃতি’
গত ১৬ বছরের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে “একটি কালো মেঘের নিচে চাপা পড়া সময়” হিসেবে বর্ণনা করেন তিনি। তারেক রহমান বলেন, যারা সে সময় সরকারবিরোধী অবস্থানে ছিলেন, তাদের জন্য ভয়, হয়রানি, মিথ্যা মামলা এবং গুমের শঙ্কা ছিল নিত্যদিনের বাস্তবতা।
“রাতের বেলা দরজায় কড়া নাড়া, ভয়কে সংস্কৃতি বানিয়ে ফেলা, আর অসংখ্য পরিবার প্রিয়জনের অপেক্ষায় ছিল—যারা আর ফিরে আসেনি”—বলেন তিনি।
তিনি দাবি করেন, এই সময়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিএনপি নেতা–কর্মীরা। বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, হেফাজতে মৃত্যু ও মিথ্যা মামলার বড় অংশই তাদের ওপর নেমে এসেছিল।
২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানেও বিএনপি “সবচেয়ে বেশি রক্ত দিয়েছে” বলে উল্লেখ করেন তিনি।
‘নিপীড়নের শিকার শুধু বিএনপি নয়’
তারেক রহমান বলেন, রাজনৈতিক সহিংসতার অভিঘাত বহন করেছে ছাত্র, সাংবাদিক, লেখক থেকে শুরু করে সাধারণ পথচারীও। মত প্রকাশ, নিরাপত্তা ও মর্যাদার মতো ন্যূনতম মানবাধিকারও ছিল হুমকির মুখে।
‘আমার কথা বলার অধিকারও কেড়ে নেওয়া হয়েছিল’
বিবৃতিতে তিনি উল্লেখ করেন, ২০১৫ সাল থেকে তার নিজের বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রকাশে বাধা দেওয়া হয়।
“দেশের কোনো পত্রিকা, টিভি বা সোশ্যাল মিডিয়ায় যেন আমার কোনো বক্তব্য প্রকাশ না হয়—এমন নির্দেশনা জারি ছিল,”—দাবি তারেকের।
খালেদা জিয়ার ভূমিকা : ‘ ধৈর্য ও প্রতিরোধের প্রতীক’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে “ধৈর্য ও প্রতিরোধের সর্বোচ্চ প্রতীক” হিসেবে উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, মিথ্যা মামলা, কারাবাস ও রাজনৈতিকভাবে নিঃশেষ করার প্রচেষ্টার মধ্যেও তিনি গণতান্ত্রিক আদর্শ থেকে সরে যাননি।
নিজ পরিবারের ভোগান্তির কথাও উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমার মা খালেদা জিয়া নিজ হাতে সহ্য করেছেন তাঁর ছেলেকে জেলে নেওয়া, নির্যাতনের মানসিক যন্ত্রণা। তাঁর আরেক ছেলেকে আমরা চিরতরে হারিয়েছি।”
‘কষ্ট মানুষকে মহান করে’
তারেক রহমান বলেন, কষ্ট মানুষকে সবসময় তিক্ত করে না—বরং অনেক সময় আরও মহান করে তোলে।
“যে অন্যায় আমরা সহ্য করেছি, তা যেন আর কারও জীবনে না আসে—এটাই আমাদের অঙ্গীকার,”—বলেন তিনি।
মানবাধিকারভিত্তিক ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতি
বিবৃতির শেষ অংশে তিনি বলেন, বিএনপি কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গেলেও ভেঙে যায়নি; বরং আরও দৃঢ় হয়েছে।
“আমরা এমন একটি বাংলাদেশ গড়তে চাই, যেখানে প্রতিটি মানুষের কণ্ঠ, অধিকার ও জীবন মূল্যবান—যেখানে মানবাধিকার হবে ভবিষ্যতের ভিত্তি।”
