যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল
নিজস্ব প্রতিবেদক: যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের ভর্তি রোগীরা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের দেখা পায়না। এতে মানসম্মত চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ইন্টার্ন চিকিৎসক নির্ভর হয়ে পড়েছে চিকিৎসা ব্যবস্থা। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের অনুপস্থিতিতে চিকিৎসাসেবার পাশাপাশি নিয়ম বহির্ভুতভাবে রোগীকে রেফার্ড করাসহ মৃত্যু ঘোষণাও করছেন তারা। বিশিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, চিকিৎসকরা রোগীর সেবা নিয়ে ভাবেন না, তারা টাকার নেশায় মত্ত হয়ে পড়েছেন। এজন্য ক্লিনিক প্রীতি পেয়ে বসেছে তাদের।
যশোর আড়াইশ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে যশোর ছাড়াও নড়াইল, মাগুরা ও ঝিনাইদহ জেলার রোগীরা চিকিৎসরা নেন। প্রতিদিন বহিঃবিভাগে এক হাজার রোগী চিকিৎসা নিয়ে থাকে। আর ভর্তি থাকে গড়ে সাড়ে ৩শ রোগী। জরুরি চিকিৎসা সেবা মূলত এখানেই হয়ে থাকে। যে কারণে সাধারণ রোগীদের ভরসার জায়গা হাসপাতালটি। কিন্তু দিন দিন ভেঙ্গে পড়ছে চিকিৎসা ব্যবস্থা।
সম্প্রতি যশোরের বাঘাপাড়া উপজেলার নারকেলবাড়িয়ার রিতা খাতুন ভর্তি হন হাসপাতালের সার্জারি ওয়ার্ডে। ব্রেস্ট টিউমার সমস্যা নিয়ে ভর্তির পর ইন্টার্ন চিকিৎসকরা তাকে একই পরীক্ষা করিয়েছেন বারবার। কিন্তু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা তার কাছে আসছেনা। এতে তিনি সঠিক চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তিনি বলেন, রাতে কোন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের দেখা মেলেনা। অনকলে কেউ আসেন মাঝে মধ্যে।
গত ২৮ জানয়ারি প্রতিপক্ষের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে জখম হন নড়াইল জেলার বাসিন্দা জহিরুল ইসলাম। তাকে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কোন বিশেষজ্ঞের চিকিৎসা তিনি পাননি। তামান্না নামে একজন ইন্টার্ন রোগীর চিকিৎসা দিয়েছেন।
ওয়ার্ডে দায়িত্বরত একাধিক জ্যেষ্ঠ সেবিকা জানান, নিয়ম অনুযায়ী রোগী ভর্তির পর একজন ইন্টার্ন আসবেন। তিনি রোগীর অবস্থা দেখে সহকারী রেজিস্ট্রারকে জানাবেন। সহকারী রেজিস্ট্রার রোগী দেখে অবস্থা অনুযায়ী অনকলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে ডাকবেন। কিন্তু এসব নিয়ম মানেন না ইন্টার্নরা। আবার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরাও ইন্টার্ন নির্ভর হয়ে পড়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের দায়িত্বে রোস্ট্রার করে দিয়েছেন। কিন্তু তারা সঠিকভাবে ওয়ার্ড রাউন্ডে আসেননা। একাধিক রোগীর স্বজনরা জানিয়েছেন, দুপুরের পর থেকে পরের দিন সকাল পর্যন্ত বিশেষজ্ঞদের সরকারি হাসপাতালে দায়িত্ব পালনে আসেননা। ইন্টার্নদের ওপর ভর করে তারা ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে বাণিজ্যে ব্যস্ত থাকেন। সরকারি হাসপাতালে রোগী ভর্তি হয়ে বিশেষজ্ঞদের পরিবর্তে ইন্টার্নদের চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরছেন।
বিশেষজ্ঞরা মাঝে মাঝে ওয়ার্ড রাউন্ডে গেলেও তড়িঘড়ির কারণে রোগীরা ঠিকমতো কথা বলতে পারেন না। তাদের অনিয়মের কারণে রোগীরা সরকারি হাসপাতালে সঠিক চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাই অনেকেই সরকারি হাসপাতাল ছেড়ে ক্লিনিকে চলে যেতে বাধ্য হন। এতে চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত বাণিজ্য আরও বেড়ে যায়।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, বর্তমানে হাসপাতাল চলছে ইন্টার্ন দিয়ে। সাধারণ রোগীদের সাথে তারা খারাপ আচরণ করেন। তাদের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাননি হাসপাতালের কর্মচারি মেহেদি হাসান।
হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আরিফ আহমেদ জানান, ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মকান্ড নিয়ে নানা কথা শোনা যাচ্ছে। ইন্টার্নদের ওপর ভর করে সরকারি হাসপাতালে দায়িত্ব পালন না করে ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিকে ব্যস্ত থাকার বিষয়টি খোঁজ নেয়া হবে।
সরকারি হাসপাতালে বিশেষজ্ঞরা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন না করার বিষয়ে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আখতারুজ্জামান জানান, যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে সংযুক্তিতে আসা চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে আমার ব্যবস্থা নেয়ার এখতিয়ার নেই। তারপরও জেলা স্বাস্থ্যসেবা কমিটির সভায় এগুলোর সমাধান করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। রোগীরা যাতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সেবা সঠিকভাবে পায়, সেই ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সাবেক সভাপতি ও কলাম লেখক এম আর খায়রুল উমাম জানান, মানুষ অসুস্থ হলে চিকিৎসকের দ্বারস্থ হন। কিন্তু সরকারি হাসপাতলগুলোর চিকিৎসকরা টাকার পেছনে ছুটছেন। ভর্তি রোগীদের সঠিকভাবে চিকিৎসা না দিয়ে দায়িত্ব পালন করছেন ক্লিনিকে।
সচেতন নাগরিক কমিটির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক সুকুমার দাস জানান, আমাদের চিকিৎসকরা সেবাকে বাণিজ্যিক রুপ দিয়েছেন। তাদের কাছে এখন মূখ্য হয়ে উঠেছে টাকা। এজন্য স্বচ্ছলরা ভারতমুখি হচ্ছেন।