প্রকল্প কার্যালয় হতে বাধ্য করা হচ্ছে সরবরাহকৃত মালামাল ব্যবহারে
আব্দুল্লাহ সোহান, মণিরামপুর: যশোরসহ চার জেলায় ‘বীর নিবাস’ নিমার্ণকাজে প্রকল্প কার্যালয়ের কর্ণধরের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তিনি ঠিকাদারদের চাপে রেখে নান্দনিকতা নষ্টের দোহাই দিয়ে এ কাজে প্রকল্প কার্যালয় হতে সরবরাহকৃত মালামাল ব্যবহারে বাধ্য করছেন। প্রকল্প কার্যালয় নির্ধারিত লোকবল দিয়েই এ কাজ করানো হচ্ছে। যা সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারসহ স্থানীয় দায়িত্বশীলদের অবগত করা হচ্ছে না।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে চার জেলায় অসচ্ছল বীরমুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আবাসন নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ১৫৭ ‘বীর নিবাস’ প্রকল্প কাজে এ অভিযোগ উঠেছে। নির্দেশনাটি প্রকল্প কার্যালয় হতে আসায় প্রকল্প পরিচালকের ভয়ে টু শব্দ করতে পারছেন না সংশ্লিষ্ট ঠিকাদাররা। সংশ্লিষ্টরা বলছে এটি দরপত্রের নিয়ম বহির্ভূত। অবশ্য প্রকল্প পরিচালক এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না বলে দাবি করেছেন। কিন্তু প্রকল্প পরিচালক স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত একটি পত্র নির্মাণাধীন এলাকায় দায়িত্বশীলদের কাছে দেয়া হয়েছে (যার একটি কপি এ প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত)।
সংশ্লিষ্ট অফিস সূত্র জানায়, এলটিএম (লিমিটেড টেন্ডারিং মেথড-সীমিত দরপত্র) পদ্ধতিতে গত সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যশোর, নড়াইল, মাগুরা ও ঝিনাইদহ জেলায় অসচ্ছল বীরমুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আবাসন নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ‘বীর নিবাস’ নির্মাণে দরপত্র আহবান করা হয়। যার দেখভাল করবে সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস।
সে মোতাবেক অসচ্ছল বীরমুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ১৫৭টি বাড়ি (বীর নিবাস) নির্মাণে যথাযথ নিয়ম মেনে ঠিকাদাররা কাজ পান। কিন্তু টেন্ডারের পরেই নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধিতে ক্ষতির আশংকায় রয়েছেন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদাররা। এরমধ্যে সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. বিপুল রায়হান (যশোর, নড়াইল, মাগুরা ও ঝিনাইদহ জেলার দায়িত্বে) আবাসন নির্মাণ কাজের মধ্যে সাব-মার্সিবল পানির পাম্প বোরিং, মার্বেল পাথরে লেজার প্রিন্টের নির্মিত সাহসের প্রতীক বঙ্গবন্ধুর তর্জনি সমৃদ্ধ প্রতিকৃতি স্থাপন এবং আবাসনের বাইরে ওয়েদার কোট রং-এর কাজ প্রকল্প কার্যালয় হতে সরবরাহের কথা বলেন। এক প্রকার ঠিকারদারদের জিম্মি করেই এসব নির্মাণ উপকরণ দেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়। ইতোমধ্যে যশোর জেলার মণিরামপুর উপজেলার ৮টি বীর নিবাসের স্থলে সাব-মার্সিবল বোরিং করা হয়েছে। কিন্তু কারা, কিভাবে এবং কাদের তত্ত্বাবধানে কাজ সম্পাদন হয়েছে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারদের কেউ অবগত নন। এমনকি সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাদেরও জানার বাইরে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রতিটি ‘বীর নিবাস’ নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩ লাখ ৪৩ হাজার ৬১৮ টাকা। ‘বীর নিবাস’ নির্মাণ কাজের সাব-মার্সিবল বোরিং-এর এস্টিমেট (প্রাক্কলন ব্যয়) ৭৯ হাজার ৭৯ টাকা, মার্বেল পাথরে লেজার প্রিন্টের নির্মিত বঙ্গবন্ধুর তর্জনি সমৃদ্ধ প্রতিকৃতি স্থাপন ব্যয় ১৫ হাজার এবং আবাসনের বাইরে ওয়েদার কোট রং সংক্রান্ত এস্টিমেট (প্রাক্কলন ব্যয়) ৩০ হাজার টাকা। যার মূল্য সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারদের প্রকল্প কার্যালয় হতে সরবরাহকৃতদের প্রদান করতে হবে। অথচ দরপত্রে এ সংক্রান্ত কোন কিছুই উল্লেখ ছিল না। দরপত্রের নিয়ম বহির্ভূতভাবেই প্রকল্প কার্যালয় হতে এসব করা হচ্ছে বলে অভিযোগ। প্রকল্প কার্যালয়ের কথামত কাজ না করলে বিল আটকে দেয়াসহ কাজে নানা প্রতিবন্ধকতারও হুমকি দেয়ার কথা বলা হচ্ছে। বাধ্য হয়েই প্রকল্প কার্যালয়ের এ অন্যায় আবদার মেনে নিতে হচ্ছে ঠিকাদারদের।
ঠিকাদার এসএম মনিরুজ্জামান বলেন, বিভাগীয় উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. বিপুল রায়হান প্রকল্প কার্যালয় হতে কিছু মালামাল সরবরাহ করা হবে বলে জানান। এরপর থেকে তাকে অন্ধকারে রেখেই সাব-মার্সিবল বোরিং কাজ করা হয়েছে। এরপর বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি এবং বাইরের ওয়েদার কোটের রং করা হবে। এ অভিযোগ শুধু তার একার নয়; এমন অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ‘বীর নিবাস’ এলাকার ঠিকাদারদের।
মণিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ জাকির হাসান জানান, তাকে শুধু তদারকির জন্য বলা হয়েছে। এর বাইরে কি হচ্ছে তিনি তা জানেন না।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এসএম আবু আব্দুল্লাহ বায়েজিদ জানান, দরপত্র বহির্ভূত সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে বাইরে রেখে কিভাবে এসব কাজ করা হচ্ছে তা তিনিও জানেন না।
অবশ্য বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. বিপুল রায়হান জানান, কেন্দ্রীয়ভাবে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে এসব কাজ করা হচ্ছে। অবাক বিষয় এই প্রকৌশলীও বলেন নির্মাণাধীন ‘বীর নিবাস’ এলাকায় সাব-মার্সিবল বোরিং কারা করেছেন আমার জানা নেই। অপর এক প্রশ্নের জবাবে এ প্রকৌশলী বলেন, এটি প্রকল্প কার্যালয় হতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক এম ইদ্রিস সিদ্দিকী বলেন, এ ধরনের নির্দেশনা প্রকল্প কার্যালয় হতে দেয়ার প্রশ্নই আসে না। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী ভাল বলতে পারবেন বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
