রমজান আলী, জীবননগর (চুয়াডাঙ্গা) প্রতিনিধি: চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার মানিকপুর গ্রামে মাল্টাসহ সমন্বিত ফলের চাষ করে স্বাবলম্বী হওয়া এক সফল যুবকের নাম সজল আহমেদ (৩২)।
এলাকায় তিনি সবার কাছে সজল নামেই বেশি পরিচিত। তিনি উপজেলায় এখন বেকার যুবকদের কাছে এক অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব। তাকে দেখে এলাকার শিক্ষিত বেকার যুবকরা চাকরির আশায় বসে না থেকে মিশ্র বাগান করে নিজেদের পায়ে দাঁড়িয়ে সফলতা অর্জন করছেন।
উপজেলার মানিকপুর গ্রামের সজল আহমেদ মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। তিনি লেখাপড়ায় খুব বেশি দূর এগোতে না পারলেও জীবনকে সুখি সমৃদ্ধ করতে প্রথমদিকে নিজেদের পাঁচ বিঘা জমিতে ফলদ বাগান তৈরির পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। যে পরিকল্পনা,সেই কাজ। আগে পিছে কোন কিছু না ভেবে নিজেদের জমিতেই মাল্টা চাষের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তিনি বর্তমানে এলাকায় একজন সফল মাল্টা চাষি ও উদ্যোক্তা হিসাবে ব্যাপকভাবে পরিচিত। তাকে দেখে এলাকার শিক্ষিত-অর্ধশিক্ষিত বেকার যুবকেরা মাল্টা চাষসহ বিভিন্ন ফলজ বাগান করে আত্ম-কর্মসংস্থানের ব্যাপারে উৎসাহিত হচ্ছেন।
সজল আহমেদের বাগানে চায়না মাল্টার পাশাপাশি ডার্জিলিং কমলা, মাল্টা বারি-১, বারোমাসি ভিয়েতনামী মাল্টা, থাই টক কুল, বল সুন্দরী কুল, রেড আপেল কুল,টক-মিষ্টি কুল রয়েছে। বারোমাসি আমের মধ্যে কাটিমন আম, গৌরমতি আম, সূর্য ডিম আম ও বেনানা আমের বাগান করা হয়েছে। অন্যদিকে গড়ে তোলা হয়েছে খেজুর বাগান। ইতোমধ্যেই সজল আহমেদের চায়না সিডলেস লেবুর বাগান এলাকায় বেশ দর্শনীয় হয়ে উঠেছে। এ লেবু ভাতে খাওয়া লেবু হিসাবে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
তার ৩০ বিঘা জমিতে থাই পেয়ারা রয়েছে। এলাকায় মাল্টার চারার চাহিদার কথা চিন্তা করে সজল আহমেদ মাল্টা ও কমলা লেবুসহ বিভিন্ন ফলদ গাছের নার্সারিসহ সমন্বিত ফল বাগানের সাথে বিভিন্ন ফলের নার্সারি গড়ে তুলেছেন। যেখান থেকে এলাকার সৌখিন বাগান মালিকেরা চারা সংগ্রহ করে থাকে। সজল আহমেদ প্রতি বছর তার নার্সারি থেকে চারা বিক্রি করে মোটা অংকের টাকা আয় করেন।
সজল আহমেদ বলেন, এলাকায় বর্তমানে আমার ৩০ বিঘা জমিতে বিভিন্ন ফলের সমন্বিত বাগান গড়ে তোলা হয়েছে। বারি-১ ও দার্জিলিং লেবু অত্যন্ত সুস্বাদু ও লাভজনক। বর্তমানে বাজারে থাই টক কুলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। প্রতি কেজি থাই টক কুল ১০০-১৫০ টাকা,বল সুন্দরী কুল ৬০-৮০ টাকা, রেড আপেল কুল ৮০-১০০ টাকা, টক মিষ্টি কুল ১০০-১২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সব খরচ বাদে প্রতি মাসে বাগান থেকে তার কয়েক লাখ টাকা আয় হয় বলে জানান।
সজল আহমেদ আরো বলেন, মাল্টা চাষে এলাকার কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি হলেও এলাকার কয়েকজন নার্সারি মালিক কৃষকদের মধ্যে মানসম্মত চারা বিক্রি না করায় অনেক বাগান মালিক বাগানে ফল না আসায় বাগান কেটে ফেলছেন।
ফলে আগের মত আর কেউ মাল্টার চাষ করতে চাচ্ছে না। এতে আমাদের মত প্রকৃত নার্সারি মালিকেরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি। তবে এখনও আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে কমলা, মাল্টাসহ বিভিন্ন ফলজ বৃক্ষের চারা বিক্রি করছি। তিনি চলতি বছর ৩-৪ লাখ টাকার চার বিক্রি করবেন বলে ধারণা করছেন। সজল আহমেদের দাবি তার সফলতার পেছনে এলাকার ফুল বাবু ভাইয়ের অবদান সবচেয়ে বেশি। অন্যদিকে উপজেলা কৃষি বিভাগও তাকে নানা ভাবে সহযোগিতা দিয়ে থাকেন। তার মাল্টা বাগান দেখতে প্রতিদিনই অনেক দূর দূরান্ত দেখে লোকজন ছুটে আসেন এবং বাগান দেখার এক পর্যায়ে তার বাগান থেকে চারা কিনে যায়।
দেশের শিক্ষিত বেকার যুবকদের নিকট সজলের পরামর্শ চাকরির জন্য ছুটে না বেড়িয়ে মাল্টাসহ বিভিন্ন ফলজ বাগান করে স্বল্প পুঁজিতে খুব সহজের ভাগ্যের চাকা ঘুরানো সম্ভব।
উপজেলা কৃষি অফিসার সারমিন আক্তার বলেন, মানিকপুর গ্রামের সজল আহমেদ উপজেলায় একজন অনুকরণীয় মাল্টাসহ বিভিন্ন ফলজ উৎপাদনকারি যুবক। কৃষি বিভাগে তাকে যথাসাধ্য সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। উপজেলার মাটি,আবহাওয়া আর পরিবেশ অনুকূলে থাকায় সরকারি সহযোগিতায় উপজেলার কৃষক ও শিক্ষিত বেকার যুবকেরা আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহার করে দিন দিন মাল্টাসহ বিভিন্ন ফলদ বাগান বাণিজ্যিক ভাবে গড়ে তুলছেন এবং তারা সফলতাও অর্জন করছেন। উপজেলায় বর্তমানে ১৩০ হেক্টর জমিতে মাল্টার আবাদ হয়েছে। মাল্টা চাষ লাভজনক হওয়ায় এ চাষে কৃষকদের মধ্যে দিন দিন আগ্রহ বাড়ছে।