আব্দুল্লাহ সোহান, মণিরামপুর: যশোর-মণিরামপুর সড়কের বেগারিতলা বাজারটিতে শনিবার ছিল অন্যরকম পরিবেশ। সেখানে বিরাজ করছিল শোকের ছায়া।
শুক্রবার সকালে সেখানে কাভার্ড ভ্যান চাপায় নিহত হয় হাবিবুর রহমান ও তার শিশুপুত্র আরাবুর রহমান তাওসিন, তৌহিদুল ইসলাম, শামছুর রহমান ও জিয়াউর রহমান। এরমধ্যে নিহত জিয়াউরের বাড়ি উপজেলার জয়পুর গ্রামে। আর পিতা-পুত্রসহ চারজনের বাড়িই বাজার ঘেঁষে গড়ে উঠা টুনিয়াঘরা গ্রামে।
মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় এই গ্রামের চারজনের মৃত্যুতে মানুষের মন ছিল বেদনায় ভরা। নিহতের স্বজনদের সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা যেন হারিয়ে ফেলেছেন প্রতিবেশিরা। শোক সন্তপ্ত পরিবারের সমবেদনা জানাতে গতকাল সেখানে যান মণিরামপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার কবীর হোসেন পলাশ, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এসএম আবু আব্দুল্লাহ বায়েজিদ, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার কবীর হোসেন পলাশ জানান, জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান স্যারের নির্দেশ মোতাবেক এদিন কাভার্ডভ্যান চাপায় নিহতদের বাড়িতে যান। নিহতদের স্বজনদের সান্ত্বনার পাশাপাশি সব ধরনের সহযোগিতার আশ^াস দেওয়া হয়েছে।
তাৎক্ষণিক কিছু সহযোগিতাও দেয়া হয়। আজ রোববার নিহতদের প্রতি পরিবারে কাছে ২৫ হাজার টাকা দেওয়া হবে। এছাড়া যাদের ঘর নেই, তাদের ঘর দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তিন শিশু সন্তান নিয়ে দুঃচিন্তায় আমেনা: কাভার্ডভ্যান চাপায় নিহত তৌহিদুল ইসলামের তিন শিশু সন্তানের ভবিষ্যত নিয়ে দুঃশ্চিন্তা ভর করেছে স্ত্রী আমেনা বেগমের। দিন আনা দিন খাওয়া এ পরিবারের সহায় সম্বল বলতে কেবল ভাঙ্গা চোরা ঘর টুকুই আছে। সেই ঘরও পরের জমিতে। বেগারীতলা বাজারে বাঁশের হাটে শ্রমিকের কাজ করে সংসার চালাতেন তৌহিদুর ইসলাম। শনিবার নিহত তৌহিদুল ইসলামের বাড়িতে গেলে এসব চিত্র উঠে আসে। এদিকে কাভার্ডভ্যান চাপায় নিহতের ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে।
শুক্রবার যশোর-চুকনগর মহাসড়কের বেগারীতলা বাজারে কাভার্ডভ্যান নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাবার হোটেলে ঢুকে পড়ে। এসময় হোটেলে নাশতা সেরে পাশের চায়ের দোকানে খাটের উপর বসেছিলেন তিনিসহ একই গ্রাম টুনিয়াঘরার শামছুর রহমান ও জিয়াউর রহমান। কিছু বুঝে উঠার আগেই কাভার্ডভ্যান মহাসড়ক ছেড়ে পাশের দোকানগুলোতে উঠে পড়ে। এসময় চাকায় পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থরেই তারা প্রাণ হারান। একই সময় ৬ বছরের শিশু তাওহীদ হাবিব তাওসিকে নিয়ে তার বাবা হাবিবুর রহমান পরোটা খেতে হোটেলে আসছিলেন। নিয়ন্ত্রনহীন কাভার্ডভ্যানের চাপায় তারাও প্রাণ হারান।
সরেজমিন নিহত তৌহিদুলের বাড়িতে গেলে দেখা যায় তখনো শোকের মাতম চলছিল। এসময় প্রতিবেশি অনেকেই পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম স্বামী হারানো আমেনা বেগমকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন। নিহত তৌহিদুল ইসলামের ৪ সন্তানের মধ্যে বড় মেয়ে হাবিবার তিন বছর আগে বিয়ে হয়েছে।
এখন অবুঝ তিন সন্তানের ভবিষ্যত নিয়ে আমেনা বেগম চরম দুঃশ্চিন্তায় পড়েছেন। মেঝ মেয়ে সোহানা খাতুন ২য় শ্রেণিতে, সেজ সন্তান শাওন হোসেন ১ম শ্রেণিতে আর ৫ মাসের হাফসা খাতুন মায়ের কোলে বসে খেলা ফ্যাল ফ্যাল করে বাড়িতে উপস্থিত স্বজন আর প্রতিবেশিদের দিকে তাকাচ্ছিল।
প্রতিবেশি শামছুন্নাহার, সিরাজুল ইসলামসহ অনেকেই বলেন, নিহত তৌহিদুলের সহায় সম্বল কিছুই নেই। ভাঙ্গা চুরা বাড়িটিও পরের জমিতে। উপার্জনের একমাত্র ব্যক্তি তৌহিদুর মারা যাওয়ায় পরিবারটিতে এখন অন্ধকার নেমে এসেছে।
থানার ওসি শেখ মনিরুজ্জামান জানান, এ ঘটনায় নিহত হাবিবুর রহমানের ছোট ভাই ইব্রাহিম খলিল বাদি হয়ে থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।