নিজস্ব প্রতিবেদক
নির্দিষ্ট সময়ের আগেই ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে আসেন। সকাল আটটায় শুরু হয় ভোট গ্রহণ। কিন্তু ভোট সকাল থেকে শান্তিপূর্ণ ভোট চললেও যশোরের বেনাপোল পৌরসভা নির্বাচনে সবকেন্দ্রেই ভোট গ্রহণে ধীরগতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। ইভিএমে ভোটারা ভোট দিতে বুঝতে না পারার কারণে এমনটি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
সকাল ৮টায় বেনাপোল বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের ভোটে দিতে আসেন নুরজাহান বেগম (৪৫)। ভোটের লাইনে এসে দাঁড়িয়েছিলেন তিন ঘন্টা। ঘড়ির কাটা ১০ টা পার হলেও তিনি ভোট দিতে পারেননি তিনি।
ক্ষোভ প্রকাশ করে নুরজাহান বলেন, ‘তাড়াতাড়ি ভোট দিয়ে চলে যাওয়ার জন্য ঘরের কাজ ফেলে সকালেই এসেছিলাম। কিন্তু তিন ঘণ্টা রোদের মধ্যে লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও ভোট দিতে পারিনি। লাইন এগুচ্ছেই না।’শুকুর আলী নামে আরেক ভোটার বলেন, জীবনে প্রথম ইভিএম মেশিনে ভোট দেওয়ার জন্য আসলাম। তবে দীর্ঘলাইন। ভোটের লাইন কমছে না। দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে আমার চোখের সামনে মাথা ঘুরে পড়ে যাচ্ছে। তাই ভোট পরে দিবো বলে চলে যাচ্ছি।
ভবেরবেড় এলাকা থেকে ভোট কেন্দ্রে আসা তহমিনা খাতুন বলেন, ইভিএমে ভোট দিতে ঝামেলা হয়েছিলো। দুই মিনিট ধরে ভোট দিয়েছি। সঠিকভাবে না বোঝার কারণে এমনটি হয়েছে। ভোট দেওয়ার পরে দেখলাম সহজ।
এই কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার তৌহিদুর রহমান বলেন, সকাল থেকে শান্তিপূর্ণ ভোট গ্রহন চলছে। তবে ভোট গ্রহনে ধীরগতি। ভোটারা কিভাবে ভোট দিতে হয় আমরা দেখিয়ে দিচ্ছি। তার পরেও গোপন কক্ষে যেয়ে তিন চারটা মেশিন দেখে ভোট দেওয়ার প্রক্রিয়া ঘুলিতে ফেলছে। প্রথম দুই ঘন্টায় দুই শ’ ভোটও পড়েনি। অথচ কেন্দ্রের বাইরে শত শত মানুষ অপেক্ষামান।
একযুগ পর বেনাপোল পৌরসভায় ভোট উৎসব আজ। ইভিএম পদ্ধতিতে পৌরসভার ১২টি কেন্দ্রে সকাল ৮ টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতি ছাড়াই ভোটগ্রহণ হবে। সীমানা জটিলতায় দীর্ঘদিন এ পৌরসভায় ভোট বন্ধ ছিল। অনেক দিন পর ভোট হওয়ায় পৌরবাসীর মাঝে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে। সকাল থেকে ভোট কেন্দ্রে ভোটাদের দীর্ঘ লাইন লক্ষ করা গেছে। নির্বাচন সুষ্ঠু ও মডেল নির্বাচন করতে ছয় স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এছাড়া মাঠে থাকছে সাদা পোশাকে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও। ফলে কাউন্সিলর ও মেয়র পদে প্রভাব দেখানোর সুযোগ নেই বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সকাল সাড়ে ৯ টায় বেনাপোল বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র পরিদর্শনে আসেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী নাসির উদ্দিন। এসময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘ভোট উৎসব মুখর ও শান্তিপূর্ণভাবে চলছে। সবকেন্দ্রেই ভোটারদের দীর্ঘ লাইন। দীর্ঘদিন পর ভোট হওয়াতে মানুষের ভিতর উৎসব উদ্দীপনা কাজ করছে। একপ্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘প্রথমবারের মতো ইভিএম মেশিনে ভোট গ্রহন হওয়াতে অনেককের ভোট প্রদানে সমস্যা হচ্ছে। নিয়মকানুন না জানাতে ভোট দিতে সমস্যা হচ্ছে। এই সমস্যার পড়ছে কম লেখাপড়া জানা মানুষ ও বয়স্করা। যদিও আমরা প্রচারণা কালে ভোটাদের কিভাবে ভোট দিতে হয় সেটা দেখিয়ে দিয়েছি।
নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং অফিসার আনিচুর রহমান বলেন, ৯টি বিদ্যালয়ে ১২ টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহন শান্তিপূর্ণ ভোট হচ্ছে। ইভিএমে ভোট দিতে পেরে ভোটারা খুশি। নির্বাচন সুষ্ঠু করতে ১১ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সব সময় উপস্থিত রয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্রে ৮জন পুলিশ ও ১২ জন আনসার সদস্য রয়েছে। তিন প্লাটুন র্যাব দুই প্লাটুন বিজিবির সঙ্গে মাঠে টহল দিচ্ছে।
প্রতিটি বুথে বসানো হয়েছে একাধিক সিসি ক্যামেরা। যা রির্টানিং কার্যালয় ও নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) বেলাল হোসাইন বলেন, সকাল থেকে শান্তি পূর্ণ ভোট দিচ্ছে। ভোটারা যাতে নির্বিঘ্নে ভোট কেন্দ্রে আসতে পারে পুলিশ সেই ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছে। কোথাও কোন অপ্রতিকর ঘটনার সম্ভবনা নাই।
প্রসঙ্গত, ২০০৬ সালে বেনাপোল ইউনিয়নের ১১টি গ্রামের অংশ নিয়ে বেনাপোল পৌরসভা গঠনের পর ২০১১ সালের ১৩ জানুয়ারি প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর সেখানে আর কোনো নির্বাচন হয়নি। সে নির্বাচনে বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল আলম মেয়র নির্বাচিত হন। ২০১৫ সালের ১৩ জানুয়ারি ওই পরিষদের মেয়াদোত্তীর্ণ হলেও আর নির্বাচন হয়নি। প্রথম শ্রেণির এই পৌরসভার নির্বাচন মামলার কারণে বন্ধ ছিল। বেনাপোল পৌরসভা নির্বাচনে ৩০ হাজার ৩৮৫ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।
