শাহারুল ইসলাম ফারদিন
দেশের প্রধান স্থলবন্দর বেনাপোলে চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে রাজস্ব আদায়ে ভাটার টান দেখা দিয়েছে। ভারতের কাছ থেকে পণ্য আমদানি কমে যাওয়ায় এবং কাস্টমস ক্লিয়ারেন্সে ধীরগতি থাকায় বন্দর কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছেন।
বেনাপোল কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ হাজার ৮৫০ কোটি টাকা, তবে আদায় হয়েছে মাত্র ১ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা। ফলে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৩শ কোটি টাকা।
কাস্টমস কর্মকর্তাদের মতে, ভারতীয় রপ্তানিকারকদের পণ্য পাঠানো কমেছে। বিশেষ করে ভোগ্যপণ্য, ইলেকট্রনিকস, কসমেটিকস ও গার্মেন্টস পণ্যের আমদানি আগের বছরের তুলনায় ২০-২৫ শতাংশ কমেছে। পণ্য যাচাই-বাছাই ও পরীক্ষণের প্রক্রিয়া দীর্ঘ হওয়ায় প্রতিদিনের রাজস্ব আদায়ও বিলম্বিত হচ্ছে।
বেনাপোল কাস্টমস ক্লিয়ারিং এন্ড ফরওয়ার্ডিং (সিএন্ডএফ) অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি মফিজুর রহমান স্বজন বলেন, বন্দরের অবকাঠামো সমস্যা, স্ক্যানার সংকট এবং জটিল কাস্টমস প্রক্রিয়া ব্যবসায়ীদের জন্য বড় সমস্যা তৈরি করেছে। দিনে যত পণ্য আসে, তার অর্ধেকই সময়মতো ক্লিয়ার হচ্ছে না।
বেনাপোল বন্দরে প্রতিদিন ৮শ থেকে ১ হাজার ট্রাক প্রবেশ করলেও স্থান সংকুলান ও বোঝাই, খালাসে ধীরগতি অনেক ট্রাককে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে বাধ্য করছে। এতে পরিবহন ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে এবং রাজস্ব আদান-প্রদান বিলম্বিত হচ্ছে।
বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার খালিদ মো. আবু হোসেন বলেন, আমরা ইতোমধ্যে পণ্য ছাড় প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা এবং গতি আনতে পদক্ষেপ নিয়েছি। ডিজিটাল ক্লিয়ারেন্স ও অনলাইন পেমেন্ট সিস্টেম চালু করার মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা বাড়ানো হচ্ছে।
রাজস্ব কমে যাওয়ায় স্থানীয় অর্থনীতি ও শ্রমবাজারও প্রভাবিত হচ্ছে। পণ্য খালাস কমে যাওয়ায় শ্রমিকদের কাজ কমেছে, ট্রান্সপোর্ট ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়ছেন।
স্থানীয় ব্যবসায়ী মো. মারুফ হোসেন বলেন, আগে প্রতিদিন একাধিক ট্রিপ দিতাম, এখন একটিও সময়মতো হয় না। পণ্য ক্লিয়ার না হলে ব্যবসা থমকে যায়। অন্য একজন সিএন্ডএফ কর্মকর্তা রুবেল হোসেন বলেন, আমরা প্রতিদিন শত শত কাস্টমস ফাইল প্রসেস করি। কিন্তু স্ক্যানার সীমিত এবং বন্দর পার্কিং সংকটের কারণে ধীরগতি তৈরি হয়।
বেনাপোল কাস্টমস ও বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, অক্টোবর থেকে নতুন কৌশল গ্রহণ করা হয়েছে। রাজস্ব ঘাটতি পূরণে বন্দর কার্যক্রম দ্রুততর ও আধুনিক করতে নতুন স্ক্যানার স্থাপন, ডিজিটাল ক্লিয়ারেন্স, অনলাইন পেমেন্ট সিস্টেম এবং ট্রাক পার্কিং ব্যবস্থার সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
কমিশনার খালিদ মো. আবু হোসেন বলেন, আমরা আশা করি, এই উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি কমবে এবং ব্যবসায়ীরা সহজে পণ্য আমদানি করতে পারবে।
