নিজস্ব প্রতিবেদক
‘নব উল্লাসে প্রাণের উচ্ছ্বাবাসে, জানাই সাম্যের আহ্বান- প্রতিপাদ্য নিয়ে ঐতিহ্যবাহী নাট্য সংগঠন বিবর্তন যশোরের চার দিনব্যাপী নাট্যোৎসব শুরু হয়েছে। সংগঠনের ৩৪ বছরপূর্তি উপলক্ষে যশোর জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এ উৎসব শুরু হয়। উৎসবের উদ্বোধনী দিনে মঞ্চস্থ হয় ভারতের কলকাতার অনীক’র প্রযোজনায় দিব্যেন্দু পালিতের গল্প অবলম্বনে ব্রাহ্মণ নাটক। ধর্মান্ধতার বেড়াজাল পেরিয়ে সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই-এমনই বক্তব্য উপস্থাপন করেন নাটকের কুশীলবরা। তাদের অভিনয়ে মুগ্ধ করেন উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সংস্কৃতিপ্রেমী দর্শককে।
নাটক আবর্তিত হয় দাঙ্গাবিধ্বস্ত বিহারের একটি গ্রামের এক নিষ্ঠাবান, সদাচারী ও সর্বজনমান্য ব্রাহ্মণ মথুরানাথকে ঘিরে। স্ত্রী, পুত্র, কন্যা ও দয়ারামকে নিয়ে মথুরানাথের সংসার। প্রতিদিনের অভ্যাসমতো ভোরে গঙ্গাস্নান করতে বেরিয়ে মথুরানাথ রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখেন একটি বেওয়ারিশ মৃতপ্রায় মানুষ। প্রশাসন ও ডাক্তার দু’জায়গা থেকেই সাহায্যে প্রত্যাখ্যাত হয়ে অসহায় মথুরানাথ মানুষটিকে বাঁচিয়ে তোলার পথ খুঁজতে থাকেন। গোটা শরীরে মাছি, দগদগে বিষাক্ত ঘা এই মানুষটির পরিচয় কী? কি জাত তার? প্রশ্ন ঘুরতে থাকে মৃতপ্রায় লোকটিকে ঘিরে শুধু দাঁড়িয়ে থাকা জটলায়। এমনই গল্পের নাট্যরূপ দিয়েছেন গৌতম ঘোষ। অভিনয় করেছেন গার্গী ঘোষ, সন্তোষ রায়, অংশুমান দাশগুপ্ত, নিশীথ পাল, তারক মুখার্জী, প্রশান্ত দত্ত প্রমুখ।
নাটকের নির্দেশক অরূপ রায় বলেন, ব্রাহ্মণ নাটকটি বিকৃত, সংকীর্ণ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সোচ্চার ঘোষণা করে ধর্মের উদার মর্মবাণী। ধর্মের মুনাফালোভী রাজনীতির ব্যবসায়ীদের কপটতা, শঠতার প্রতিকূলে গেয়ে ওঠে মানবতার চিরকালীন জয়গান। আর প্রকাশ আর সর্বোপরি সবার উপরে মানুষ সত্য এই দর্শনের উদাত্ত দীপ্তি। নাটক মঞ্চায়নের শুরুতে উদ্বোধনী পর্বে মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্বালনের মাধ্যমে এ উৎসবের সূচনা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলে জেলা প্রশাসক আবরাউল হাছান মজুমদার। সভাপতিত্ব করেন বিবর্তন যশোরের সভাপতি নওরোজ আলম খান চপল। অতিথি ছিলেন যশোর সংবাদপত্র পরিষদের সভাপতি ও দৈনিক কল্যাণের প্রকাশক ও সম্পাদক বীরমুক্তিযোদ্ধা একরাম-উদ-দ্দৌলা, প্রেসক্লাব যশোরের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন, সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আফজাল হোসেন দোদুল, জেলা শিল্পকলা অ্যাকাডেমির সাধারণ সম্পাদক অ্যাড মাহমুদ হাসান বুলু, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি দিপাঙ্কর দাস রতন প্রমুখ।
বিবর্তন যশোরের সাধারণ সম্পাদক দীপংকর বিশ্বাস জানান, সামাজিক অসংগতির বিরুদ্ধে নাটক- এই স্লোগানকে সামনে রেখে ৩৪ বছর ধরে কাজ করে যাচ্ছে বিবর্তন যশোর। দীর্ঘ এ সময়ে নাটকের মাধ্যমে বিবর্তনের শতাধিক কর্মী সমাজের শোষকদের বিরুদ্ধে ও শোষিতদের পক্ষে নানা বার্তা তুলে ধরেছেন। দেশের বাইরেও মঞ্চ নাটকে কৃতিত্ব দেখিয়েছেন সংগঠনের কর্মীরা। তিনি আর জানান, ১৯৮৯ সালের ১২ অক্টোবর যশোর শহরের একদল প্রগতিশীল তরুণরা বিবর্তন যশোর গড়ে তোলেন। সংগঠনের ৩৪ বছর পূর্তি উপলক্ষে এ নাট্য উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। উৎসবের দ্বিতীয় দিনে ১৮ অক্টোবর মঞ্চস্থ হবে পশ্চিমবঙ্গ ভারতের কল্যাণী নাট্য চর্চা কেন্দ্রের প্রযোজনায় নাটক ভোরের বারান্দা। ১৯ অক্টোবর মঞ্চস্থ হবে বিবর্তন যশোরের নাটক মাতব্রিং এবং ২০ অক্টোবর উৎসবের সমাপনী দিনে মঞ্চস্থ হবে বিবর্তনের শিশু নাট্যদলের পরিবেশনায় নাটক পাগলা দাশু ও চিচিংগে অ্যান্ড কোং।