নিজস্ব প্রতিবেদক
যশোরের ভবদহ অঞ্চলকে মহাবিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর দ্রুত হস্তক্ষেপের দাবি জানিয়েছে ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটি। এজন্য টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট (টিআরএম) চালু এবং সরকারকে মিথ্যা তথ্য প্রদান ও জনপদের দুঃখ-দুর্দশা, নদী হত্যা, সরকারি নীতিমালা লঙ্ঘনের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়েছে।
রোববার দুপুরে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর দেয়া স্মারকলিপিতে নেতারা এসব দাবি তুলে ধরেন। জেলা প্রশাসকের পক্ষে স্মারকলিপি গ্রহণ করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মাসুদ আলম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির প্রধান উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদ, আহ্বায়ক রনজিত বাওয়ালি, অধ্যাপক অনিল বিশ্বাস, তসলিমুর রহমান, পলাশ বিশ্বাস প্রমুখ।
স্মারকলিপিতে বলা হয় গত ২৬ মে ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির নেতৃবৃন্দ নদী পরিদর্শনকালে জানতে পারেন বারোয়াড়িয়া ৪ নদীর মোহনায় ভাটির সময় ধু-ধু চর জেগে ওঠে। মানুষ নদীর মাঝে সুন্দরবন থেকে ভেসে আসা কাঠ কুড়াতে যায়। বারোয়াড়িয়া মোহনায় ৪টি নদী একটি ভদ্রা গেছে রূপসায়, হাবরখানা নদী গেছে শিবসায়, জিরাবুনিয়া নদী কপোতাক্ষ হয়ে মিলিত হয়েছে শিবসায়, যেটির সংযোগ স্থান বর্তমানে বন্ধ করে রাখা হয়েছে।
অপরটি গ্যাংরাইল নদী ভবদহ অঞ্চল থেকে মোহনায় মিশেছে। গ্যাংরাইল মোহনার মিলনস্থলে ভাটির সময় পানি থাকে ১০/১২ ফুট। সৃষ্ট পরিস্থিতির অবসান না হলে রূপসা-শিবসা নদী ও চালনা পোর্ট মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে চলে যাবে। ভবদহ স্লুইচ গেট থেকে ৬০ কিলোমিটার নদী হত্যা করা হয়েছে। ফলে যশোর ক্যান্টনমেন্ট থেকে বারোয়াড়িয়া মোহনা পর্যন্ত যশোর-খুলনা-সাতক্ষীরা জেলাধীন নদী অববাহিকার ১০০ কিলোমিটার জনপদের চার শতাধিক গ্রাম, হাট বাজার, রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ-মন্দির, বাড়িঘর, আবাদ ফসল স্থায়ী জলাবদ্ধতার শিকার হতে চলেছে।
অপরদিকে, ভবদহ স্লুইচ গেট থেকো পর্যন্ত নদী গর্ভে ৫টি সরকারি আবাসন প্রকল্প, ২৪/২৫টি ইটভাটাসহ নানা ধরনের স্থাপনা সরকারি নীতিমালা লঙ্ঘন করে স্থাপন করা হয়েছে। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, পানি উন্নয়ন বোর্ডের ভূমিকা নেই। জেলা প্রশাসকগণ নদী রক্ষা কমিশনের সভাপতি, নদী সম্পদ রক্ষা ও নদীর উপর ব্রিজ নির্মাণের ক্ষেত্রে বিআইডব্লিউটিএ’র নীতিমালার মান্যতা দেখার দায়িত্বে থাকলেও রহস্যজনকভাবে নিরবতা পালন করছেন। যা সরকার গৃহিত নীতিমালার পরিপন্থি এবং সরকারকেই প্রশ্নবিদ্ধ করছে। এক্ষেত্রে সরকার গৃহিত নদী তট আইন মানা হচ্ছে না।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, ভবদহ জনপদের পানিবন্দি মানুষের দীর্ঘ আন্দোলনের পর ১৯৯৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পানিসম্পদ মন্ত্রীর উপস্থিতিতে সরকার আয়োজিত এক কনভেনশনে নীতিগতভাবে পর্যায়ক্রমের বিলগুলোতে টি.আর.এম প্রকল্প গ্রহনের সিদ্ধান্ত হয়। সে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০০২ সালে বিল কেদারিয়ায় এবং পরবর্তী বিল হিসাবে ২০০৬ সালে বিল খুকশিয়ায় টিআরএম এর সফলতায় স্রোতের ভরবেগ বৃদ্ধি পাওয়ায় দ্রুত নদীগর্ভের পলি কেটে কাট পয়েন্ট থেকে নদী ২৫-৩০ ফুট গভীর ও মোহনা সচল হয়েছিল। সরকার পরবর্তী নির্ধারিত বিল কপালিয়ায় টিআরএম কার্যকর করার উদ্যোগ গ্রহণ করে। কিন্তু দুঃখজনক হলো সরকারি দলের একাংশ স্থানীয় রাজনৈতিক শক্তির সাথে জোটবদ্ধ হয়ে ২০১২ সালে হুইপ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের ওপর হামলা করে। সরকার তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে টিআরএম প্রকল্প বাতিল করে দেয়। ফলে ওই চক্র ও সিন্ডিকেট স্থায়ী লুটপাটের সরকারি মদদ পেয়ে বসে। পরে পুনরায় নিরঙ্কুশ জনমতের ভিত্তিতে ২০১৭ সালের ১৬ মার্চ যশোরে একটি জাতীয় কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানেও টিআরএম প্রকল্প গ্রহণ নিয়ে মতামত দেয়া হয়। যা ডেল্টা প্লান ২১০০ এর সুপারিশের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। কিন্তু দুঃখজনক হলো ২০১৮ সালের ১২ সেপ্টেম্বর টিআরএম প্রকল্প বাস্তবায়ন না করে সিন্ডিকেটের স্বার্থ রক্ষায় সরকারকে মিথ্যা তথ্য প্রদান করে সেচ প্রকল্পের নামে কোটি কোটি টাকা অপচয় ও নদী হত্যার স্থায়ী ব্যবস্থা করে। ফলে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এমতাবস্থায় প্রস্তাবিত টিআরএম প্রকল্প চালু করে ভবদহ অঞ্চলকে মহাবিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের দাবি জানানো হয়েছে।