কামরুল ইসলাম, প্রিয়ব্রত ধর ও গাজী লাল্টু
যশোরের দুঃখ বলা হয় ভবদহকে। ষাটের দশকের পর থেকে আস্তে আস্তে শুরু হয় ভবদহ জলাবদ্ধতা। বর্তমানে যশোরের অভয়নগর, কেশবপুর ও মনিরামপুর উপজেলার প্রায় ২ লাখ মানুষ এখন পানিবন্দী। নানা আন্দোলন সংগ্রামের মধ্যদিয়ে সরকার এবার নজর দিয়েছে ভবদহ জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধানের। এরই ধারাবাহিকতায় রোববার (১০ নভেম্বর) ভবদহ জলাবদ্ধ অঞ্চলসহ আমডাঙ্গা খাল ও ভবদহ স্লুইসগেট সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
এ সময় তিনি বলেন, ভবদহের জলাবদ্ধতা সম্পর্কে আমার জানা আছে। আমি ২০ বছর পূর্বে এ এলাকায় এসেছি। তখনও জলাবদ্ধতা দেখেছি। এখনো সেই জলাবদ্ধতা রয়ে গেছে। ভবদহের পানি নিষ্কাশনে স্থায়ী সমাধানের দিকে যেতে চাই। দ্রত টিআরএম চালু এবং নদীগুলো খনন করে নাব্যতা বৃদ্ধি করার কাজ করা হবে।
এদিন দুপুর ১২টার দিকে অভয়নগর উপজেলার আমডাঙ্গা খাল পরিদর্শন শেষে এক সুধী সমাবেশে অংশগ্রহণ করেন অন্তর্বর্তী সরকারের এই উপদেষ্টা। এ সময় জলাবদ্ধ মানুষের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাদের ভোগান্তির কথা শোনেন। কীভাবে ভবদহের জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধান করা যায় এ বিষয়ে নানা পরামর্শ নেন।
ভুক্তভোগীদের এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, পাঁচ লাখ মানুষের ভোগান্তির সমাধান আগে করতে হবে। আমরা ভবদহ জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধানের দিকে যেতে চাই। ভুক্তভোগীদের পরামর্শ নেওয়া প্রকল্প অনুযায়ী জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ করা হবে।
তিনি আরও বলেন, ভবদহের জলাবদ্ধতা সমস্যা সমাধানের জন্য সময়মতো কাজ না করায় সমস্যাটা আরো গাঢ় হয়ে গেছে। আমি এখানে এসে যেটা বুঝেছি তা হলো আমডাঙ্গা খালের পানির প্রবাহ আরো বাড়াতে হবে। সেই সাথে মুক্তেশ্বরী, টেকা, শ্রীহরি নদীর পানির প্রবাহও বাড়াতে হবে।
তিনি আরও বলেন, পানি একদিনে সরানো সম্ভব নয়। খনন যন্ত্র পাঠিয়েছি। শুনেছি সেটা নাকি কাজ করছে না। সেজন্য দেখতে এসেছি। ভবদহ জলাবদ্ধ এলাকার মানুষের পরামর্শ নিয়ে কাজ করা হবে। এবার যাতে স্থায়ী সমাধান হয় সে চেষ্টা করবো।
সমাবেশে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমুল আহসান, যশোর জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম, যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ ব্যানার্জী, অভয়নগর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ফারাজী মতিয়ার রহমান, সাধারণ সম্পাদক গোলাম হায়দার ডাবলু, ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক রণজিত বাওয়ালী ও ভুক্তভোগী ফারুক হোসেন।
পরে সৈয়দা রিজওয়ানা ভবদহ ও তৎসংলগ্ন বিল এলাকার (মনিরামপুর, কেশবপুর, অভয়নগর উপজেলার অংশবিশেষ) জলাবদ্ধতা সরেজমিন পরিদর্শন করেন। এর আগে উপদেষ্টা রিজওয়ানা সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটের দিকে যশোর বিমানবন্দরে পৌঁছালে তাকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়। তাকে শুভেচ্ছা জানায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা।
উল্লেখ্য, গত আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসের ভারি বৃষ্টির পানিতে প্লাবিত হয়েছে এ অঞ্চলের অন্তত ৫০টিরও বেশি গ্রাম। এসব গ্রামে পানি ঢুকে তলিয়েছে বাড়িঘর, স্কুল, কলেজ, রাস্তাঘাট, ধর্মীয় উপাসনালয়। তলিয়ে আছে কয়েক হাজার মাছের ঘের। গোখাদ্য, সুপেয় পানির অভাব আর নাজুক স্যানিটেশন ব্যবস্থাসহ নানাবিধ কারণে অনেকেই এলাকা ছেড়ে আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে, উঁচু রাস্তার উপর, আবার অনেকে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন বিদ্যালয় ভবনে। এছাড়া অভয়নগর উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের ২৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার নির্দেশে গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে ২ মাস যাবত পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।