নিজস্ব প্রতিবেদক
বেনাপোল যশোর হয়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত ছয় লেন সড়ক নির্মাণে জমি অধিগ্রহণে করণীয়সহ অন্যান্য কার্যক্রম বিষয়ে রোববার প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির সভা হয়েছে। সভায় সভাপতিত্ব করেন পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান।
এসময় উপস্থিত ছিলেন সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী মো. ইসহাক, যশোরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আহমদ শরিফ সজিব, নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ, জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা (নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট) কেএম আবু নওশাদ প্রমুখ।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ জানান,রোববার পরিকল্পনা কমিশনে বেনাপোল যশোর হয়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত সড়ক নির্মাণে জমি অধিগ্রহণের জন্য রোববার প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির সভা হয়েছে। সেখানে সড়কের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ করা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। শিগগিরই প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা একটি প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে। সেটি যাচাই বাছাই শেষে জমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু করা হবে।
তিনি জানান, ১২৯ কিলোমিটারের এ সড়কও সার্ভিস লেনসহ ছয় লেনের হবে। এজন্য প্রাথমিকভাবে ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ১১ হাজার ৭২ কোটি টাকা। ভূমি অধিগ্রহণে প্রস্তাবিত ব্যয় ধরা হয়েছে চার হাজার ২৩৬ কোটি ৬০ লাখ টাকা।
ফরিদপুরের ভাঙ্গা, নগরকান্দা, গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর, কাশিয়ানী, নড়াইলের লোহাগড়া, নড়াইল সদর, যশোরের বাঘারপাড়া, যশোর সদর, ঝিকরগাছা ও শার্শা উপজেলায় জমি অধিগ্রহণ করা হবে। ভাঙ্গা-যশোর- বেনাপোল মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করতে সহায়ক প্রকল্প হিসেবে সড়কের দুই পাশে প্রয়োজনীয় ভূমি অধিগ্রহণ এবং ইউটিলিটি স্থানান্তরের কাজ সম্পন্ন করা।
সওজ জানায়, ভাঙ্গা-যশোর-বেনাপোল সড়ক এক হাজার ৭৬১ কিলোমিটার বিশিষ্ট এশিয়ান হাইওয়ের (এএইচ) অংশ। এশিয়ান হাইওয়ে এএইচ-১ এবং এএইচ-২ রুট দুইটি বাংলাদেশের ওপর দিয়ে অতিক্রম করেছে। এএইচ-১ তামাবিল দিয়ে বাংলাদেশ প্রবেশ করে সিলেট-ঢাকা-পদ্মা সেতু-যশোর-বেনাপোল দিয়ে অতিক্রম করেছে। ২০০০ সাল থেকে দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বাণিজ্যিক সম্পর্ক সম্প্রসারিত হওয়ায় এবং বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্তমানে এই অঞ্চলের মোট বাণিজ্যের প্রায় ৪০ শতাংশ বিকাশ ঘটেছে। সীমান্ত সংযোগ স্থাপনের ফলে প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্যে নতুন সম্ভাবনার দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। পদ্মা সেতু নির্মাণ হওয়ায় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলসহ উপ-আঞ্চলিক যোগাযোগের জন্য ভাঙ্গা-যশোর-বেনাপোল মহাসড়ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের মতে দেশের প্রায় ৯০ ভাগ আমদানি পণ্য ভারত থেকে বেনাপোল হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। প্রতিবছর বেনাপোল দিয়ে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ হারে আমদানি বাড়ছে।
এছাড়া সড়কটি মোংলা বন্দরে যাতায়াতেও ব্যবহৃত হয়। ১২৯ দশমিক ১৭ কিলোমিটার সড়কটি ছয় লেনে নির্মিত হলে বেনাপোল হয়ে ভারতের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য বছরে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ বাড়বে। প্রকল্পে ১২৯ দশমিক ১৭ কিলোমিটার সড়ক উভয় পাশে সার্ভিস লেনসহ ছয় লেনে উন্নীত করা হবে। এক দশমিক ৯২ লাখ ঘন মিটার সড়ক বাঁধে মাটির কাজ ও ৮ হাজার ৬৯২ দশমিক ১৬ মিটার স্ট্রাকচার নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে থাকবে ফ্লাইওভার, ওভারপাস, ফুটওভার ব্রিজ, ব্রিজ, কালভার্ট ও আন্ডারপাস। এক হাজার ২৮ কোটি ৫৫ লাখ টাকার সাইট ফ্যাসিলিটিজের কাজ করা হবে। প্রকল্পে পরামর্শক সেবা ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫৪ কোটি টাকা।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ বলছে, সড়কটি ছয় লেন হলে অনেক জেলা লাভবান হবে। জেলাগুলো হলো- খুলনা, বাগেরহাট, যশোর, সাতক্ষীরা, নড়াইল, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, মাগুরা, ফরিদপুর ও গোপালগঞ্জ। এ অঞ্চল থেকে দ্রুত সময়ে পণ্য ও সেবা ঢাকায় আসবে। জেলাগুলোর সঙ্গে বেনাপোল হয়ে ভারত ও ঢাকার সঙ্গে যাতায়াতে সময় কমবে।
যশোর জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহন কর্মকর্তা (নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট) কেএম আবু নওশাদ জানান, আমরা সভায় বলেছি সড়কটি নির্মাণের সব ধরণের সহযোগিতা প্রশাসনের পক্ষ থেকে করা হবে। প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের সাথে যাতে আমাদের একটি সমন্বয় থাকে সেই প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে। জমি অধিগ্রহণের জন্য আমরা নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করব।
২ Comments
Pingback: বেনাপোলে ভারতগামী যাত্রীর পেটের ভেতর মিলল ৫টি স্বর্ণের বার - দৈনিক কল্যাণ
Pingback: আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একটি মহল ইসলামকে হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করতে চাই - দৈনিক কল্যাণ