ঢাকা অফিস
আগামী বছরের মার্চ পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত, ইতোমধ্যেই তার প্রভাব পড়েছে প্রতিবেশী বাংলাদেশে, প্রায় ১০০ শতাংশ বেড়েও গেছে বাজারে এ সবজির দাম।
বর্তমানে দেশটিতে প্রতিকেজি ৮০ রুপি দরে বিকোচ্ছে এই সবজি। কিন্তু, ভারতে পেঁয়াজের দাম ওঠানামার প্রভাব আরও গভীর। সেটা শুধু স্থানীয় সরবরাহ বাড়ানো বা দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার বিষয়ই নয়।
ভারতে ক্ষমতায় যাওয়ার চাবিকাঠিও যেন পেঁয়াজের মূল্য নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টা। আর এ তত্ত্ব নেহাৎ কাল্পনিক নয়, ইতিহাসই যার সাক্ষী।
১৯৮০’র দশকে জানুয়ারিতে ক্ষমতায় ফেরে ইন্দিরা গান্ধীর কংগ্রস পার্টি। ভোটযুদ্ধে জিতে বীরদর্পে ক্ষমতায় ফেরার পেছনে কাজ যেসব প্রতিশ্রুতি কাজ করেছিল, তার অন্যতম একটি ছিল–পেঁয়াজের মূল্য নিয়ন্ত্রণ।
কারণ ওই নির্বাচনের আগে মূল্যস্ফীতির প্রভাবে সাধারণ অনেক ভারতীয়র নাগালের বাইরে চলে যায় পেঁয়াজ। অথচ উপমহাদেশের রান্নাবান্নায় এ সবজি অপরিহার্য, ভারতীয় রান্নাঘরে যা অন্যতম প্রধান উপকরণ। কিছু রাজ্যে খাদ্যপণ্যের দাম যদি অনেক বেড়ে যায়, তখন শুধু রুটি দিয়ে পেঁয়াজ খাওয়াও বেছে নেয় দরিদ্ররা।
ঐতিহাসিকভাবেই ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোয় বেশি জনপ্রিয় পেঁয়াজ। আর এখান থেকেই বেশি সংখ্যক সাংসদ নির্বাচিত হয়ে আসেন দেশটির পার্লামেন্টে। তাই উত্তর ভারতে কোন নিত্যপণ্যের অগ্নিমূল্য হলে, তাঁর আঁচটা সহজেই অনুভব করে কেন্দ্রীয় সরকার।
কারণ পেঁয়াজের মামলা– কেবল নির্বাচনে জয়ের বিষয়ই নয়। দর নিয়ন্ত্রণে ‘ভুলের মূল্য’ চুকাতে হতে পারে ক্ষমতা থেকে বিদায় নিয়ে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দলের ইতিহাসে শুধুমাত্র পেঁয়াজের ছলনায় হারের ঘটনাও এন্তার।
ইন্দিরা গান্ধী ক্ষমতায় ফিরেছিলেন বিভিন্ন শরিক দল নিয়ে গঠিত জোট সরকারকে পরাজিত করে। আবার ১৯৯৮ সালের রাজ্য পর্যায়ের নির্বাচনে– পেঁয়াজের চড়া দামের কারণে রাজধানী নয়াদিল্লির শাসনভার হারায় বিজেপির রাজ্য সরকার।
অবশ্য চড়া দামই একমাত্র মাথাব্যথা নয় রাজনীতিকদের। কারণ দাম যদি খুব বেশি কম হয়, তাহলে আরেকদল উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভোটার– কৃষকদের রোষানলে পড়ার দুশ্চিন্তা থাকে।
২০১৮ সালে ভারতজুড়ে বিক্ষোভ করেন কৃষকরা। প্রতিবাদ জানাতে মহাসড়ক অবরোধ করেন, রাস্তায় ফেলে দেন পেঁয়াজ, কারণ দাম নেমে গিয়েছিল কোন কোনক্ষেত্রে কেজিতে মাত্র এক রুপিতে। অথচ, প্রতি কেজি উৎপাদনে তাদের খরচ হয় ৮ রুপি।
এদিকে কৃষকদের যে দামে বিক্রি করতে হয়েছে, তার সাথে বাজারদরের মিল ছিল না। এজন্য বাংলাদেশের মতোনই এক সমস্যা – অতিলোভী মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য ছিল দায়ী।
ভারতের প্রায় ২৬ কোটির বেশি কৃষকদের মধ্যে মাত্র ৭ শতাংশ রয়েছেন সরকারের মূল্য সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায়। ফলে বেশিরভাগ কৃষক আজো মধ্যস্বত্বভোগীদের মর্জির ওপর নির্ভরশীল। এই অবস্থায় কর্মসূচিটি সংস্কার না করার জন্য মোদি সরকারকে দুষছেন অনেক কৃষক।
সামনে ২০২৪ সালেই ভারতের সাধারণ তথা লোকসভা নির্বাচন। মোদিকে কঠিন কিছু সিদ্ধান্তও তার ফলে নিতে হবে। অর্থাৎ, পেঁয়াজ যেভাবেই কাটা হোক না কেন, কারো না কারো চোখে পানি আসবেই।
