নিজস্ব প্রতিবেদক
যশোরের ভৈরব নদের দড়াটানা ও বারান্দীপাড়া ব্রিজ এলাকার পানি পরীক্ষা করে ভয়াবহ দূষণের তথ্য পেয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর। অক্সিজেন সংকট ও দূষণের ফলে এই এলাকার পানিতে কোন প্রাণির অস্তিত্ব থাকা সম্ভব না। একই সাথে ভৈরব নদের পাড়ে থাকা মানুষদের ব্যাপক স্বাস্থ্য ঝুঁকি রয়েছে বলেও জানিয়েছেন পরিবেশ অধিদপ্তর যশোরের উপপরিচালক এমদাদুল হক। রোববার সকালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে মাসিক নদী রক্ষা কমিটির সভায় এসব তথ্য জানিয়েছেন তিনি।
পরিবেশ অধিদপ্তর যশোরের উপপরিচালক এমদাদুল হক জানান, যশোরে ১৯টি নদীর মধ্যে ৮টি নদীর পানি পরীক্ষার জন্য সংগ্রহ করে পরিবেশ অধিদপ্তর। এরমধ্যে ৪টি নদীর ৬টি পয়েন্টের পানি পরীক্ষা করা হয়েছে। পানি পরীক্ষা করে আপার ভদ্রা, বুড়ি ভৈরব ও হরিহর নদীতে দূষণের তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে শহরের দড়াটানা ও বারান্দীপাড়া ব্রিজ এলাকার পানি পরীক্ষা করে দূষণের ভয়াবহ চিত্র পাওয়া গেছে।
তিনি জানান, ভৈরব নদের দুই পয়েন্টের পানিতে ডিজলভ অক্সিজেন’র (ডিও) মান স্বাভাবিকের থেকে নিচে রয়েছে। সাধারণত ডিজলভ অক্সিজেন’র (ডিও) মান ৫ এর অধিক থাকে। তবে দড়াটানা পয়েন্টে রয়েছে ৩.৮১ শতাংশ এবং বারান্দীপাড়া ব্রিজ পয়েন্টে আছে ৪.৬৯ শতাংশ। অন্যদিকে জৈব রাসায়নিক অক্সিজেন (বিওডি) স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি পাওয়া গেছে। সাধারণত জৈব রাসায়নিক অক্সিজেন’র (বিওডি) স্বাভাবিক মান ৬ এর নিচে থাকে। কিন্তু দড়াটানা পয়েন্টে এর মান পাওয়া গেছে ৯ এবং বারান্দীপাড়া ব্রিজ পয়েন্টে ১০।
দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে দূষণের পরিমাণ আরও বাড়তে পারে এমন উদ্বেগ প্রকাশ করে পরিবেশ অধিদপ্তর যশোরের উপপরিচালক এমদাদুল হক বলেন, দ্রুত পানি পরিষ্কারের উদ্যোগ এবং জোয়ার ভাটা না আসলে এই চিত্র আরও ভয়াবাহ হতে পারে। একই সাথে নদীর এই অংশে মানুষসহ কোন প্রাণি যাতে না নামে সে বিষয়েও সতর্ক করেছেন তিনি।
তিনি বলেন, পানিতে মাইক্রো প্লাস্টিকের উপস্থিতি অনেক বেশি, যা খালি চোখে দেখা সম্ভব না। এই প্লাস্টিক কোনভাবে মানবদেহে প্রবেশ করলে ক্যানসারসহ নানাবিধ রোগ দেখা দিতে পারে।
এবিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. আজাহারুল ইসলাম জানিয়েছেন, নদী রক্ষায় সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেয়া হবে। ভৈরব নদের আশেপাশে যারা বসবাস করছেন বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে তারা নদীতে বর্জ্য ফেললে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এবং নদীর পাড়ে সরকারি জমিতে সকল বাসাবড়ি ও প্রতিষ্ঠানে নোটিশ বোর্ড ঝুলিয়ে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন জেলা প্রশাসক। একই সাথে কিভাবে দ্রুত জোয়ারের পানি দড়াটানা পয়েন্ট পর্যন্ত পৌঁছানো যায় সেবিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে বলেছেন ।
সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সুজন সরকার, সিনিয়র সহকারী কমিশনার (জেনারেল সার্টিফিকেট, রাজস্ব) ফারজানা ইসলাম প্রমুখ।