নিজস্ব প্রতিবেদক
নিয়ম না মেনে ভৈরব নদের উপর ৫টি ব্রিজের নির্মাণ কাজ বন্ধসহ ৩ দফা দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে ভৈরব নদ সংস্কার আন্দোলন কমিটি। রোববার যশোরে সদর উপজেলার দাইতলায় নির্মাণাধীন সেতুর পাদদেশে সংবাদ সম্মেলন করা হয়।
সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক আফসার আলীর সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে সূচনা বক্তব্য রাখেন, ভৈরব নদ সংস্কার আন্দোলনের উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদ। লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের নেতা জিল্লুর রহমান ভিটু। উপস্থিত ছিলেন, ভৈরব নদ সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম নেতা তসলিম-উর-রহমান, নাজিমউদ্দিন, মিজানুর রহমান, নাসির উদ্দিন শেফার্ড, সুজন দত্ত লাল্টু, মাস্টার অনিল বিশ্বাস, সুখদেব মজুমদার, আসাদুজ্জামান পিল্টু, পলাশ বিশ্বাস প্রমুখ। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন অধ্যাপক আফসার আলী ও ইকবাল কবির জাহিদ।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ভৈরবে নির্মাণাধীন এলজিইডি’র ৪টি ব্রিজ (দায়তলা, ছাতিয়ানতলা, রাজারহাট ও বসুন্দিয়া) এবং কাজী নজরুল ইসলাম কলেজের পাশে সড়ক ও জনপথের ব্রিজের কাজ বন্ধ করে বিআইডব্লিউটিএ’র ছাড়পত্র নিয়ে নৌ-চলাচল উপযোগী করতে হবে। নদের প্রবাহ ও এসব ব্রিজের উলম্ব ও প্রশস্থতা নিশ্চিত করতে হবে। নদী তট আইন লঙ্ঘনকারী ও প্রশ্রয়দাতা কর্তৃপক্ষের বিচার ও নদ খননে দুর্নীতির তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, সংস্কারের লক্ষ্য ছিল নদ প্রবাহমান ও নৌ-চলাচলের উপযোগী করা। কিন্তু খননের সময় নদ গর্ভেই মাটি ফেলা হয়েছে। এতে নদ ভরাট হয়ে যেতে পারে। এ ছাড়া নদী তট আইন মানা হয়নি। অবৈধ দখলদারদের সাথে যোগসাজসে তাদের রক্ষা করা হয়েছে। যশোর শহর অংশ তার সুস্পষ্ট প্রমাণ।
এ সময় আরো বলা হয়, নৌ-চলাচল ও প্রশস্থতা নিশ্চিত করে সংকীর্ণ ৫৩টি ব্রিজ পুনর্র্নিমাণ করার বিষয়টি যুক্ত রয়েছে। এক্ষেত্রে বিআইডব্লিউটিএ’র সুনির্দিষ্ট নীতিমালা উপেক্ষা করেছে এলজিইডি। বিআইডব্লিউটিএ বারবার আপত্তি করলেও তারা কর্ণপাত করেনি। শেষ পর্যন্ত থানায় জিডি করেও তাদের (এলজিইডি) নিবৃত্ত করা যায়নি। এমনকি হাইকোর্টের নির্দেশনা না পালন করে দায়তলা, রাজারহাট, ছাতিয়ানতলা ও বসুন্দিয়ায় সংকীর্ণ ব্রিজ নির্মাণ কাজ চলছে। যশোর-ঝিনাইদহ রোডের সাতমাইলে কাজী নজরুল ইসলাম কলেজের পাশে সড়ক ও জনপথ বিভাগ বিআইডব্লিউটিএ’র ছাড়পত্র ছাড়াই ব্রিজ নির্মাণ করছে। ফলে নদ-নদী সংস্কারে সরকারি লক্ষ্য সরকারি প্রতিষ্ঠানই বানচাল করে চলেছে।
সংবাদ সম্মেলনে সংস্কার আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ বলেন, উজানে মাথাভাঙ্গা-ভৈরব সংযোগ প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন। এটি বাস্তবায়নের দাবিতে ধারাবাহিক আন্দোলন চলছে। সেটি বাস্তবায়িত হলে ভৈরব নদ প্রবাহমান ও নৌ-চলাচলের প্রধান ধারা হিসেবে কাজ করবে। নীতিবহির্ভূত ব্রিজ নির্মাণে সরকার ঘোষিত নীতিমালা লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কার্যকর ব্যবস্থা নেই। পানি উন্নয়ন বোর্ড এই অনিয়মের বিরুদ্ধে কোনো ভূমিকা পালন করছে না। জেলা প্রশাসককে বারবার অনুরোধ করা স্বত্ত্বেও জেলা নদী রক্ষা কমিশনের সভাপতি ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে জাতীয় স্বার্থবিরোধী তৎপরতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছেন না।
নেতৃবৃন্দ বলেন, তিন দফা দাবি বাস্তবায়নে আগামী ২৫ এপ্রিল থেকে ২৫ মে পর্যন্ত মাসব্যাপী নদ অববাহিকার নওয়াপাড়া, বসুন্দিয়া, ছাতিয়ানতলা, রূপদিয়া, দায়তলা, রাজারহাট, যশোর, চুড়ামনকাটি, চৌগাছা, তাহেরপুর, মহেশপুর, খালিশপুর, জীবননগর ও দর্শনায় বিক্ষোভ সমাবেশ ও এলজিইডি যশোর কার্যালয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে। এরপরও দাবি মানা না হলে ২৬ মে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
এলজিইডি যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী শরিফুল ইসলাম বলেন, বিআইডব্লিউটিএ’র নির্দেশনায় যেসব নদীর কথা উল্লেখ আছে, তার মধ্যে এই নদের উল্লেখ নেই। এজন্য অনুমোদন নেয়া হয়নি। বিআইডব্লিউটিএ’র নিয়ম মেনেই এসব ব্রিজ নির্মাণ হচ্ছে।