নিজস্ব প্রতিবেদক
একযুগ পর ভোট উৎসব চলছে বেনাপোল পৌরসভায়। ইভিএম পদ্ধতিতে পৌরসভার ১২টি কেন্দ্রে সকাল ৮ টা থেকে ভোট দিচ্ছেন ভোটাররা। বিরতিহীনভাবে চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। সীমানা জটিলতায় দীর্ঘদিন এ পৌরসভায় ভোট বন্ধ ছিল। অনেক দিন পর ভোট হওয়ায় পৌরবাসীর মাঝে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে। সকাল থেকে ভোট কেন্দ্রে ভোটাদের দীর্ঘ লাইন লক্ষ করা গেছে। সবকেন্দ্রেই ভোট গ্রহণে ধীরগতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। ইভিএমে ভোটারা ভোট দিতে বুঝতে না পারার কারণে এমনটি হচ্ছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। এদিকে বেনাপোল নির্বাচন সুষ্ঠু করতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে নির্বাচন কমিশন। ভোটের সার্বিক পরিস্থিতি দেখতে ভোট কেন্দ্রে পরিদর্শন করেছেন যশোরের জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান ও পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ার্দার।
বেলা ১১ টায় বেনাপোল বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান সাংবাদিকদের বলেন, সুষ্ঠুভাবে সকাল থেকে ভোট গ্রহন চলছে। কোথাও কোন অপ্রতিকর ঘটনা ঘটেনি।
পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ার্দার সাংবাদিকদের বলেন, ‘ভোটারা নিরাপদে নির্বঘ্নে ভোট দিতে আসছে। ভোটরা উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যে দিতে ভোট কেন্দ্রে আসার সকল ব্যবস্থা গ্রহন করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রতি কেন্দ্রে একজন উপ পুলিশ পরিদর্শকের নেতৃত্বে ১৫জন ফোর্স রয়েছে। পরিদর্শকের নেতৃত্বে স্ট্রাইকিং ফোস টহল দিচ্ছে। এছাড়া মোবাইল টিমও কাজ করছে।, ৪ জন এ এসপির নেতৃত্বে ৩১২ জন পোশাক পরিহিত অবস্থায় আইনশৃঙ্খলা কাজে নিয়েজিত রয়েছে। নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ছয় স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে। র্যাব ও আনসারের পাশাপাশি মাঠে সাদা পোশাকে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা নিয়োজিত রয়েছে। পাশাপাশি জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করছে। সবমিলিয়ে নিরাপত্তার চাঁদরে বেনাপোল। ভোটগ্রহনকে কেন্দ্র করে কেউ বিশৃঙ্খলা করলে তাকে ছাড় দেওয়া হবে না। সেটা যেকোন রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তি হোক।
নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনিত প্রার্থী ও বেনাপোল পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন নৌকা প্রতীক, বেনাপোল সিএন্ডএফ এসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি মফিজুর রহমান সজন মোবাইল ফোন প্রতীক ও জগ প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক আহ্বায়ক ফারুক হোসেন উজ্জ্বল। তবে ভোট গ্রহনের দুই দিন আগে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে সমর্থন দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন ফারুক হোসেন। নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেও ইভিএমে ফারুকের জগ প্রতীগ রয়েছে। নির্বাচনে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর কোনো প্রার্থী নেই। ফলে মেয়র পদে ভোটের লড়াই এখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নাসির উদ্দীন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মফিজুর রহমানের মধ্যে। তবে কয়েকটি কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে কেন্দ্রে মোবাইল প্রতীকের প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থীর কোন পোলিং এজেন্ট পাওয়া যায়নি। এই প্রার্থীর অভিযোগ নৌকার প্রতীকের কর্মী সমর্থকরা ভোটের আগে রাতে পোলিং এজেন্টদের ভয় ভীতি দেখানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০০৬ সালে বেনাপোল ইউনিয়নের ১১টি গ্রামের অংশ নিয়ে বেনাপোল পৌরসভা গঠনের পর ২০১১ সালের ১৩ জানুয়ারি প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর সেখানে আর কোনো নির্বাচন হয়নি। সে নির্বাচনে বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল আলম মেয়র নির্বাচিত হন। ২০১৫ সালের ১৩ জানুয়ারি ওই পরিষদের মেয়াদোত্তীর্ণ হলেও আর নির্বাচন হয়নি। প্রথম শ্রেণির এই পৌরসভার নির্বাচন মামলার কারণে বন্ধ ছিল। বেনাপোল পৌরসভা নির্বাচনে ৩০ হাজার ৩৮৫ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।