সফিয়ার রহমান: ১৪ ফেব্রুয়ারি এখন পৃথিবী ব্যাপী ‘ভ্যালেনটাইনস ডে’ বা ভালবাসা দিবসের প্রচলন হয়েছে। এ কাহিনী অনেক আগের হলেও আশির দশকের মাঝামাঝি ব্যাপকভাবে প্রচলিত হয়। আমাদের দেশে এসে পৌছায় ১৯৯৩ সালে। অল্প ব্যবধানে এই দিনে আমাদের পত্রিকা গুরুত্ব দিয়ে দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে লেখালেখি করে। প্রেমিক প্রেমিকারা দিবসটি গুরুত্বের সাথে নিয়েছে। বাবা-মা, গাছ-পালা, নেতা-নেত্রী, ভাই-বোন, স্ত্রী-কন্যা সহ সবাইকে নিয়ে আমাদের ভালবাসা দিবস।
সেন্ট ভ্যালেনটাইনস ডে’র ইতিহাস এখন অনেকেই জানে। তবে অনেক রকমে। রোমান ক্রিশ্চিয়ান সেন্ট ভ্যােিলনটাইন। তিনি ছিলেন একজন পাদরি এবং চিকিৎসক। কিন্তু সে সময় রোমাদের দেব-দেবী পূজার বিষয়টি ছিল মুখ্য। তারা ক্রিশ্চিয়ান ধর্মে বিশ্বাসী ছিল না। ক্রিশ্চিয়ান ধর্ম প্রচারের অভিযোগে ২৭০ খ্রিস্টাব্দে রোমের স¤্রাট দ্বিতীয় ক্লাডিয়াসের আদেশে তার মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়। জেলে বন্দী থাকা অবস্থায় তখন ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা তাকে ভালবাসার কথা জানিয়ে জেলের জানালা দিয়ে চিঠি ছুড়ে দিতো। ওই জেলের জেলারের মেয়ে ছিল অন্ধ। ভ্যালেনটাইন চিকিৎসা করে তার দৃষ্টি শক্তি ফিরিয়ে দেয়। মেয়েটির সঙ্গে তার সখ্যতা হয়। মৃত্যুর আগে মেযেটিকে লেখা এক চিঠিতে তিনি জানান, ‘ফ্রম ইয়োর ভ্যালেনটাইন’। অনেকের মতে সেন্ট ভ্যালেনটাইনে নাম অনুসারেই পোপ প্রথম জুলিয়াস ৪৯৬ খ্রিস্টাব্দের ১৪ ফ্রেব্রুয়ারিক সেন্ট ভ্যালেনইনস ডে হিসাবে ঘোষণা করেন।
দ্বিতীয়ত আরো একজন ভ্যালেনটাইনের নাম পাওয়া যায়। ইতিহাসে যুবকদের বিয়ে করতে রোমাম স¤্রাট ক্লাডিয়াস নিষেধ করেন যুদ্ধের জন্য ভালো সৈন্য সংগ্রহের উদ্দেশ্য। ভ্যালেনটাইন নিয়ম ভেঙে প্রেম করেন এবং আইন ভেঙে বিয়ে করেন। এই অপরাধে তার মৃত্যুদন্ড হয়। পরবর্তীতে তাকে অমর করে রাখার জন্য ভ্যালেনটাইন ডে পালিত হয়।
এছাড়া আরো জানা যায়, প্রাচীন রোমেস খুব নেকডের উৎপাত ছিল। দেবতা লুপারকাস ১৪ এবং ১৫ ফ্রেব্রুয়ারি রোম শহরকে নেকড়ের আক্রমণ থেকে রক্ষা করতেন। এই সুযোগে তরুণ তরুণীরা প্রেম বিয়ে ও সন্তান উৎপাদন উৎসব হিসাবে পালন করতো। তরুণরা নগ্ন হয়ে দৌড়াদৌড়ি করতো আর নববিবাহিতাকে চাবুক দিয়ে পেটাতো। এতেই নাকি সন্তান উৎপাদন সহজ হতো। ৪০০ খ্রিস্টব্দে দুই দিনের পরিবর্তে একদিন করা হয়। ১৪ ফেব্রুয়ারিকে তাকে রোমান কনে করে পাখিদের সঙ্গী জোগাড়ের দিন। ফলে এ দিনটি নিবেদনের সবচেয়ে উপযুক্ত। মোটামটি ইতিহাস বলে ভাবেই এল সেন্ট ভ্যালেনটাইনস ডে বা ভালবাসা দিবস।
শিল্পবোধ থেকেও ভালবাসার সৃষ্টি হয়। শিরি-ফরহাদের প্রেম কাহিনী এখনো সরল প্রাণের জীবন্ত উৎস। অথচ ফরহাদ ছিল একজন সুতার মিস্ত্রী। শিরির ঘরের দরজা তৈরি করেছিল ফরহাদ। দরজার শিল্পবোধ দেখে মোহিত হয়ে প্রেমে পড়েছিল। অসম প্রেমের ইতিহাস লাইলি মজনু এখন জীবন্ত। যা আমাদের জীাবনে নতুনের দোলা দিয়ে যায়।
নিখুত ভালবাসা পাওয়া কঠিন হয়ে গেছে। আমার এক দাদার কাছে দাদীর থেকে প্রথম ভালবাসা প্রাপ্তির গল্প শুনেছিলাম। আমার সেই দাদা-দাদী এখন পৃথিবীতে নেই। কিন্তু গল্পটা মনে আছে। দাদা জন্মসুত্রে কৃষক। জীবনে কোন দিন বিদ্যাশিক্ষা বিদ্যালয়ে করেনি। এইভাবেই যৌবনে পদার্পণ কবং বিয়ে হয়ে গেল। লাল শাড়ি পরা নতুন বৌয়ের সাথে কোন সাক্ষাৎ হলো না। বাড়ির কেউ তখন চাইতো না লজ্জা ভাঙার আগে স্বামী স্ত্রীর সাক্ষাৎ হোক। চতুর্থ দিনে দাদা লোক চক্ষুর আড়ালে লজ্জার মাথা খেয়ে বউয়ের কাছে একটা পান খেতে চায়।
স্বামীর আবদার পূরণ করার ইচ্ছা দাদীর আছে। কিন্তু সুযোগ হচ্ছে না। পরের দিন সকাল বেলা সুযোগ মত একটা পান দিল। দাদা পান লুঙ্গির খুটে গুজে লাঙল গরু নিয়ে মাঠে হাল বাইতে চলে গেল। বাসি পেটে বা খালি পেটে নতুন বউয়ের হাতের পান খেয়ে স্বর্গ সুখ উপভোগ করলো। এই পান তাকে এমন তৃপ্তি দিল সারাদিন মাাঠে কাজ করেও ক্লান্তি বোধ হয়নি। ভালবাসার এই সুখ আধুনিক সমাজে হাসির খোরাক হয়ে গেছে।
প্রমাণ ইতিহাস হয়ে আছে যশোরের গদখালী। কথিত আছে প্রাচীন জনপদ গদখালীতে প্রায়ই জল দস্যুর অক্রমণ হোত একবার জল দস্যু রডারিক গদখালী জনপদে আক্রমণ করে। খুন লুটতরাজ সামনে চলছে।
রাজবাড়িতে রডারিক গদখালী জনপদে আক্রমণ করে। খুন লুটতরাজ সামনে চলছে। রাজবাড়িতে রডারিক আক্রমণ চালালে গেটে এসে দাঁড়ালো রাজকুমারী মদালসা। মদালসার রূপে মোহিত হয়ে গেল জলগসু্যা রডারিক। দস্যুতা ছেড়ে বনে বনে ঘুরে বেড়ায়। রডারিক মদালসাকে পাওয়ার জন্যে একদিন সুযোগ এল। বাঘের উৎপাতে জনপদ বিপর্যস্ত। রাজার ঘোষণা রাজ্যময় হয়ে গেল। যে ওই বাঘকে হত্যা করতে পারবে সে যা চাইবে তাই দেয়া হবে। রডারিক বাঘ হত্যা করে মদালসাকে পেয়ে গেল। রডারিক ছিল খ্রিস্টান আর মদালসা ছিল হিন্দু। কালী মন্দিরে বসে দুই জন। যার ধর্ম পালন করে। একদিন মদালসা কঠিন অসুখে পড়লো। রডারিক ওষুধ নিয়ে ফেরার পথে শোনে মদালসা মারা গেছে। সারা পথ দৌড়ে আসছে আর তার ¯্রষ্টা গডকে একবার ডাকছে আর মদালসার কালীকে একবার ডাকছে। সারাক্ষণ তার মুখে থাকতো ‘ও গড ও কালী’ এই গডকালী রূপান্তারিত হয়ে গদখালী নাম হয়েছে বলে জানা যায়। ধুমপায়ীরা সবাই জানে বেনসন অ্যান্ড হেজেস নামে একটা সিগারেট কোপম্পানি আছে। কোটি কোটি সিগারেট প্রতিদিন উৎপাদন হুেচ্ছ। ধুমপান শুধু করলেই হবে না এর মধ্যেও একটা প্রেমের উপখ্যান আছে।
ইংরেজ কন্যা বেন আমেরিকান ছেলে হেজেসকে ভালবাসে। এ প্রণয় দুপক্ষ মেনে নিল না। শেষে বেন ও হেজেস মনের দুঃখে আগুনে জীবন বিসর্জন দিল। মৃত্যুর পরে দুপক্ষের ভুল ভাঙলো। তাদের মৃত্যুর আগুনকে জ্বালিয়ে রাখতে দুই পরিবার বেনসন অ্যান্ড হেজেস নাম দিয়ে সিগারেট কোম্পানি চালু করলো।