নিজস্ব প্রতিবেদক
যশোরের মণিরামপুরের রোহিতা ইউনিয়ের কোদলাপাড়া ও গাঙ্গুলিয়া গ্রামের দুটি রাস্তা সংস্কারে স্থানীয় চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। পাশাপাশি ওই রাস্তার পুরনো ইট তুলে চেয়ারম্যান নিয়ে গেছেন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
স্থানীয়রা জানান, কোদলাপাড়া ও গাঙ্গুলিয়া গ্রামের দুটি সোলিং রাস্তা ভেঙে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছিল বেশ কিছু দিন আগে। জন দুর্ভোগ কমাতে স্থানীয় দুই ইউপি সদস্যর অনুরোধে উপজেলা রাজস্ব তহবিলের দুই লাখ টাকা বরাদ্দে রাস্তার পুরনো সোলিং তুলে নতুনভাবে সংস্কার কাজ শুরু করেন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন। কিন্তু চেয়ারম্যান রাস্তা সংস্কারে মানহীন ইট ব্যবহার করছেন। আর পুরোনো ইট নিয়ে তিনি নিয়ে গেছেন। এই ইট ইউনিয়নের অন্য এলাকার রাস্তা পাকা করার জন্য খোয়া তৈরি করছেন তিনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রোহিতা ইউনিয়নের গাঙ্গুলিয়া জামতলা মোড়ের মতিয়ার রহমানের বাড়ি হতে ময়েজ ডাক্তারের বাড়ি অভিমুখী সোলিং রাস্তা সংস্কারে এক লাখ টাকা ও গাঙ্গুলিয়ার ইউপি সদস্য শরিফুল ইসলামের বাড়ির সামনে সোলিং রাস্তা সংস্কারে এক লাখ টাকা করে উপজেলা রাজস্ব তহবিলের বরাদ্দ পান ইউপি চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন। ইউনিয়নের কোদলাপাড়া ও গাঙ্গুলিয়া দুই ওয়ার্ডে রাস্তা দুটির অবস্থান হওয়ায় স্থানীয় ইউপি সদস্য রেজাউল ইসলাম ও শরিফুল ইসলামকে সভাপতি করে রাস্তা দুটির সংস্কার কাজ চলার কথা ছিল। কিন্তু দুই ইউপি সদস্যকে সভাপতি করা হলেও তাদের দিয়ে কাজ না করিয়ে চেয়ারম্যান নিজে রাস্তা দুটির সংস্কার করাচ্ছেন। রাস্তার পুরনো ইট তুলে সেখানে নতুন মানহীন ইট ব্যবহার করে সংস্কার কাজ চললেও চেয়ারম্যানের ভয়ে প্রতিবাদ করতে পারছেন না সংশ্লিষ্ট দুই ইউপি সদস্যসহ এলাকাবাসী।
উপজেলা প্রকৌশলী দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রোহিতা ইউনিয়নের নোয়াপাড়া এলাকায় এক কোটি ৩০ লাখ টাকায় এক হাজার ৩৫০ মিটার রাস্তা পাকাকরণের কাজ কিনে নিয়েছেন চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন।
সরেজমিন দেখা গেছে, নিম্নমানের ইট দিয়ে গাঙ্গুলিয়া ও কোদলাপাড়ায় রাস্তার পুরনো সোলিং সংস্কার করাচ্ছেন চেয়ারম্যান। এই রাস্তার পুরনো ইট তুলে সেই ইট চেয়ারম্যান পিচের রাস্তায় খোয়া করার কাজে ব্যবহার করছেন।
গাঙ্গুলিয়া ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শরিফুল ইসলাম বলেন, আমার বাড়ির সামনে ৫৫ ফুট সোলিং রাস্তা সংস্কার হয়েছে। আমি সভাপতি ছিলাম কিন্তু চেয়ারম্যান কাজ করিয়েছে। এতটুকু কাজে এক লাখ টাকা খরচ হওয়ার কথা না। কোদলাপাড়া ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য রেজাউল ইসলাম বলেন, পুরনো সোলিং ভেঙে চলাচলে ভোগান্তি হওয়ায় চেয়ারম্যানকে ভাঙা অংশ ঠিক করে দিতে অনুরোধ করেছিলাম। চেয়ারম্যান নিজে দায়িত্ব নিয়ে কাজ করাচ্ছেন। এলাকাবাসী বলছেন, নিম্নমানের ইট দিয়ে সোলিং কাজ করাচ্ছেন চেয়ারম্যান। এই রাস্তার ইট তুলে গাড়িতে করে নিয়ে অন্য রাস্তায় দিচ্ছেন চেয়ারম্যান। ইঞ্জিনিয়ার অফিসের লোক এসে কাজ দেখে যাচ্ছে। তারা কিছু বলে না। এই ইটে রাস্তা টেকবে না।
অভিযোগের বিষয়ে চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন বলেন, ‘নতুন ইটের মান কিছুটা খারাপ হতে পারে। ইট একেবারে খারাপ না। চেয়ারম্যান বলেন, দুই মেম্বরের অনুরোধে পুরনো সলিং ভেঙ্গে ৩৭০ ফুট রাস্তা নতুনভাবে করতে গিয়ে লাভ হচ্ছে না। এজন্য এখানকার ইট অন্য রাস্তায় নিয়ে ফেলেছি।
উপজেলা প্রকৌশলী দপ্তরের কার্যসহকারী আশিকুর রহমান রাস্তার সোলিং সংস্কার কাজ দেখভালের দায়িত্বে ছিলেন। রাস্তায় ব্যবহৃত ইটের মান জানতে চাইলে তিনি কাজের মান নিয়ে কোন মন্তব্য করতে চাননি।
উপজেলা প্রকৌশলী বিদ্যুৎ দাস বলেন, সোলিং রাস্তা সংস্কার করার সময় সেখানকার পুরনো ইট ব্যবহারের উপযোগী হলে তা একই রাস্তায় ব্যবহার করতে হবে। ব্যবহারের অনুপযোগী ইট রাস্তার পাশে রেখে দিতে হবে। এই ইট অন্য রাস্তায় ব্যবহার করা যাবে না। সব রাস্তায় আলাদা বাজেট থাকে। আমি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি।