নিজস্ব প্রতিবেদক, মণিরামপুর
যশোরের মণিরামপুরের কাশিমনগর ইউনিয়নের হরিহর নদ খুঁড়ে বালু তোলার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় একটি চক্রের বিরুদ্ধে। ক্ষমতাসীন দলের পরিচয়ে ইউনিয়নের ১০ থেকে ১৫ জন যুবক মিলে কামারঘাটা সেতুর উত্তর পাশে নদ থেকে দেদারছে বালু তুলে বিক্রি করছে। কাশিমনগর ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তার দপ্তরের অদূরে প্রকাশ্যে দিনের আলোতে নদ হতে এক্সভেটর দিয়ে চক্রের সদস্যরা এক মাস ধরে বালু তুলে বিক্রি করলেও অদৃশ্য কারণে তাদের ওই অবৈধ কর্মকাণ্ড বন্ধে কার্যকরী কোন ভূমিকা নেওয়া হচ্ছে না।
এদিকে এক্সভেটরে বালু তোলায় নদে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হচ্ছে। এতে বর্ষা মৌসুমে এ অঞ্চলের পাড় ভেঙে ফসলি জমিসহ ঘরবাড়ি বিলীন হওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছে নদের দুই পাড়ের বাসিন্দারা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ইউনিয়ন নায়েব অফিসের কাছে কয়েকজন মিলে একমাস ধরে নদ থেকে এক্সভেটর দিয়ে বালু তুলছে। তারা ক্ষমতাসীন দলের হওয়ায় কেউ বাধা দিতে সাহস পাচ্ছেন না। বালু তোলা চক্রের সদস্যরা উপর থেকে অনুমতি নিয়ে কাজ করছে বলে প্রচার দিচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, কাশিমনগর ইউনিয়নের কামরান, শরিফুল, শাওন, আব্দুর রাজ্জাক ও বিল্লালসহ ১০ থেকে ১৫ জন নদের বালু তোলার কাজে জড়িত। প্রায় ১ মাস ধরে তারা কামারঘাটা সেতুর উত্তর পাশে হরিহর নদের মাঝ বরাবর এক্সভেটর দিয়ে খুঁড়ে বালু তুলে নদের ভিতরে স্তূপ করে রাখছে। এরপর ট্রাকে ভরে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকায় বালু উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করছে। এতে একদিকে যেমন নদের ক্ষতি হচ্ছে অন্যদিকে ট্রাক ভরে নেওয়ার সময় বাতাসে বালু উড়ে আশপাশের পরিবেশ নষ্ট করছে। বালুচক্র শক্তিশালী হওয়ায় তাদের ভয়ে আমরা মুখ খুলতে পারছি না। চোখ মেলে দেখা ছাড়া আমাদের কিছু করার নেই।
খবর পেয়ে মঙ্গলবার সরেজমিনে কামারঘাটা বাজারে যেতে দূর থেকে এক্সভেটর চলার শব্দ পাওয়া গেছে। এরপর কামারঘাটা সেতুর পাশ দিয়ে উত্তরপাশে নেমে দেখা গেছে হরিহর নদে পানি নেই। সেতুর উত্তর পাশে নদের মাঝ বরাবর কয়েকশ গজ খুঁড়ে বালু তুলে পূর্বপাড়ে স্তূপ করে রাখা আছে। পাশে এক্সভেটর চালক নতুন স্থান খুঁড়ে বালু তোলার কাজ করছেন। সরেজমিনে বালু তোলার স্থানে গিয়ে চক্রের সাথে জড়িত দুই জনকে পাওয়া গেছে। তাদের এক জনের নাম শাওন। তিনি বালু তোলার কাজ পর্যবেক্ষণ করছেন। পাশে চেয়ার পেতে খাতা কলম হাতে আব্দুর রাজ্জাক নামে একজন বসে আছেন। তিনি আগত ক্রেতার সাথে দরকষাকষি করে বালু বিক্রি করছেন। বালুর স্তূপের পাশে ট্রাক রেখে চালক মহাসিন বসে আছেন। তিনি বালু কিনতে এসেছেন।
এদিকে বালু তোলার ছবি ও তথ্য নিয়ে ফিরে আসতেই এই প্রতিবেদকের মোবাইল নম্বরে একটা কল আসে। মোবাইল ফোনের অপরপ্রান্ত থেকে কামরান হোসেন পরিচয় দিয়ে ওই ব্যক্তি নিজেকে কাশিমনগর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের আহবায়ক দাবি করে বলেন, ‘ঈদ সামনে। খরচ খরচার ব্যাপার আছে। আমরা উপরে নেতার সাথে কথা বলে কাজ শুরু করেছি। বিষয়টি একটু দেখবেন’।
বালু তোলা চক্রের সদস্য শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘এক লাখ টাকা আগাম জমা দিয়ে এক্সভেটর ভাড়া করে এনেছি। প্রতিদিন এক্সভেটরের পিছনে ২১ থেকে ২২ হাজার টাকা খরচ আছে। এখন নিউজ হলে ১৪ থেকে ১৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়ে যাবে। ঈদের পরে এক্সভেটর নদী থেকে তুলে নেব’।
কাশিমনগর ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, কামারঘাটা বাজার আমার দপ্তর থেকে একটু দূরে। সেখানে এক্সভেটরে বালু তোলার বিষয়টি আমার জানা নেই। আগামীকাল অফিসে যেয়ে খবর নেব।
উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) আলী হাসান বলেন, বিষয়টি আমাকে আগে কেউ জানায়নি। আমি কাশিমনগর ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তাকে পাঠিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি।
