যশোরের নির্বাচনী এলাকা
তবিবর রহমান
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে ছোট দলের বড় নেতারা এমপি হওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন। যশোরে রাজনীতি করে কেন্দ্রের বড় পদ বাগিয়ে নেওয়া নেতারা এমন স্বপ্ন দেখলেও বাস্তবায়নে তৎপরতা নেই। দল থেকে মনোনয়নের গ্রিন সিগন্যাল পেলেও ভোটাররা তাদের খুঁজে পাচ্ছে না। কালেভদ্রে নির্বাচনী এলাকায় দেখা মিললেও কর্মী-সমর্থকদের জোয়ার লক্ষ্য করা যায়নি।
নির্বাচনী রোড ম্যাপ অনুযায়ী চলতি বছরের শেষে অথবা নতুন বছরের শুরুতে দ্বাদশ সংসদের ভোট গ্রহণ। এ হিসেবে মাঝখানে সময় রয়েছে মাত্র তিন মাস। ফলে ভোট আর সম্ভাব্য প্রার্থীতার বিষয়ে ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে আলোচনা। যারা নিজ দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী তারা মাঠে যেমন তৎপর, তেমনি কেন্দ্র্রেও যোগাযোগ রেখেছেন সুদৃঢ়ভাবে। যশোরে আওয়ামী লীগ, বিএনপির মতো বড় দুই দলের নেতাদের এ চিত্র দৃশ্যমান হলেও ভিন্ন অন্য দলের ক্ষেত্রে। বিশেষ করে যারা যশোরে থেকেও কেন্দ্রে বড় পদে আসীন হয়েছেন তারা ভোটের রাজনীতিতে সেভাবে তৎপর নয়। যদিও দল থেকে তারা মনোনয়ন পাবেন বলে মোটামুটি নিশ্চিতই আছেন।
যশোর শহরের ষষ্ঠীতলাপাড়া বিপি রোডের বাসিন্দা নিজামদ্দিন অমিত। বসবাস করেন এই শহরেই। বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠানে যুক্ত অমিত জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি জাগপা’র প্রেসিডিয়াম সদস্য ও খুলনা বিভাগীয় প্রধান সমন্বয়কারীর দায়িত্ব পালন করছেন। গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে (২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর) যশোর-৫ (মণিরামপুর) সংসদীয় আসন থেকে দলের প্রতীক হুক্কা মার্কায় ভোট করেছিলেন। এবারও তিনি ভোট করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ছোট দলের বড় পদে থাকা এই নেতার মনোনয়নও ‘নিশ্চিত’। তবে এখনো তিনি ভোটের মাঠে নামেননি। গত ৫ বছরে তিনি কয়েকবার মণিরামপুরে গেলেও রাজনৈতিক গণসংযোগ করতে দেখা যায়নি।
অবশ্য নিজামদ্দিন অমিতের দাবি জনগণের সাথে তার যোগাযোগ আছে। ভোটের প্রস্তুতি নিচ্ছি ও গণসংযোগ করছি যাচ্ছি। তিনি আরো বলেন, জাগপা ২০ দলীয় জোটে রয়েছে। গতবার জোট থেকে মনোনয়ন না পেলেও ভোট করেছি। এবারও জোট থেকে মনোনয়ন চাওয়া হবে। জোট থেকে না পেলেও ভোট করতে হতে পারে। সবই হবে দলের সিদ্ধান্তে। এখনই সব বলা যাচ্ছে না। তবে নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে।
যশোর শহরের রেলগেট এলাকার বাসিন্দা মুহাদ্দিস শহিদুল ইসলাম ইনসাফী। তিনি ইসলামী ঐক্যজোট যশোর শাখার সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির (খুলনা বিভাগ) সাংগঠনিক সম্পাদক। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যশোর-২ (ঝিকরগাছা-চৌগাছা) আসন থেকে ভোট করার ইচ্ছা রয়েছে তার। দলের দায়িত্বশীল পদে থাকা এ নেতা মনোনয়নের ‘গ্রিন সিগ্যানল’ পেয়েছেন। কিন্তু তাকেও এখনো ভোটের মাঠে দেখা যায়নি। বড় দুই দলের একাধিক নেতা যেখানে প্রতিযোগিতা দিয়ে মাঠ চষছেন; সেখানে ‘মনোনয়ন চূড়ান্ত’ হলেও মুহাদ্দিস শহিদুল ইসলাম ইনসাফীর নির্বাচনী এলাকায় দেখা যাচ্ছে না। তবে তিনি বলছেন ভিন্ন কথা। গত ঈদুল ফিতরের ঈদ উৎসবে তিনি শুভেচ্ছা পোস্টার করেছিলেন। এছাড়া নিজেরা-নিজেরা ভোটের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কাজ করছেন দলীয়ভাবে। কর্মীসভা করছেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘খুলনা বিভাগে দল থেকে কেউ ভোট করলে তিনিই করবেন। এজন্য দলের মনোনয়ন নিয়ে অসুবিধা নেই। জোটগত হলে আলোচনার বিষয় আছে।’
যশোর শহরের চাঁচড়া ডালমিল এলাকার বাসিন্দা শরিফুল ইসলাম সরু চৌধুরী। জাতীয় পার্টির (জাপা) যশোর শাখার সভাপতিসহ বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। এখন কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি প্রার্থী হতে চান। তবে কোন আসন থেকে লড়বেন এখনো ঠিক করতে পারেননি তিনি। জোটগতভাবে নাকি এককভাবে জাপা নির্বাচন করবে সেটার জন্য অপেক্ষা করছেন তিনি।
শরিফুল ইসলাম সরু চৌধুরী বলেন, আমি প্রার্থী। তবে কোন আসন সেটা এখনই প্রকাশ করছি না। যশোরের ৬টি আসন থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের লিস্ট কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। এ তালিকায় একক প্রার্থী আছেন যশোর-১ (শার্শা) আসনে ডা. আকতারুজ্জামান। তার মনোনয়ন চূড়ান্ত বলা যায়। তবে সিদ্ধান্ত দেবে কেন্দ্র।
এদিকে ডা. আকতারুজ্জামান একক প্রার্থী হলেও তার কোন কার্যক্রম নেই। ঈদ পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিময় পর্যন্ত করতে দেখা যায়নি। সাধারণ মানুষের সুখে-দুখেও তাকে পাশে দেখা যায় না। তবে জাপা নেতা সরু চৌধুরীর দাবি ডা. আকতারুজ্জামান প্যানা বানাতে দিয়েছেন। দুই-একদিনের মধ্যে শার্শার হাট-বাজারে টাঙিয়ে দিবেন।
জেলার বাঘারপাড়ার বাসিন্দা অ্যাডভোকেট জহিরুল হক জহির। তিনি জাপা চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা। যশোর-৪ আসন থেকে তিনি একাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোট যুদ্ধে নেমেছিলেন। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনেও প্রার্থী হতে চান। মহাজোট কিংবা একক যেটাই হোক জাপার হয়ে তিনি নির্বাচন করতে আগ্রহী। জেলার ৬টি আসনে যারা জাপার মনোনয়ন প্রত্যাশী তাদের মধ্যে জহির-ই মাঠে আছেন। অন্যরা ঘরে বসে স্বপ্ন বুনছেন বলে দলের কর্মীদের অনেকেই দাবি করেছেন।
যশোরের চাঁচড়া ইউনিয়নের বাসিন্দা মারুফ হাসান কাজল। বিকল্প ধারা বাংলাদেশ’র সম্মেলন প্রস্তুত কমিটির (কেন্দ্রীয়) যুগ্ম আহ্বায়ক। একাদশ নির্বাচনে তিনি দলের প্রার্থী হয়েছিলেন। গেল জেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনি চেয়ারম্যান পদে ভোট করে জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে নাড়া ফেলে দেন। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি যশোর-৩ আসনে বিকল্প ধারা’র প্রার্থী। ছোট দলের বড় পদে আসীন কাজল তার মনোনয়ন নিশ্চিত বলে এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন। তবে এখনো ভোটের মাঠে নামেননি। তাড়াতাড়িই নামবেন বলে জানিয়েছেন।