কল্যাণ ডেস্ক
শ্রীলঙ্কার নবম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিলেন দেশটির বামপন্থী নেতা অনুরা কুমারা দিসানায়েকে। প্রেসিডেন্ট ভবনে প্রধান বিচারপতি জয়ন্ত জয়সুরিয়ার তত্ত্বাবধানে এই শপথ অনুষ্ঠান হয়। দেশটির সংবিধান অনুসারে এখন প্রেসিডেন্টকে নতুন মন্ত্রিপরিষদের সদস্যদের নিয়োগ দিতে হবে। কিন্তু দিসানায়েকে এই মুহূর্তে তা করতে পারছেন না। এই না করতে পারার কারণ দাঁড়িয়েছে কয়েকটি।
২০২২ সালে গণ আন্দোলনের মুখে প্রেসিডেন্টের পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন গোতাবায়া রাজাপাকসে। তখন প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পান রনিল বিক্রমাসিংহে। তিনি শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি পুনরুদ্ধার ও সামাজিক সমস্যা সমাধানে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার তত্ত্বাবধানে কাজ করছিলেন বিক্রমাসিংহে। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট হলেন বাম নেতা দিসানায়েকে।
শ্রীলঙ্কা একটি গণতান্ত্রিক দেশ। দেশটি প্রেসিডেন্ট শাসিত হলেও সরকারের কার্যক্রমের উপর পার্লামেন্টের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। তবে প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিপরিষদের সদস্যদের নিয়োগ দেন প্রেসিডেন্ট। দেশটির সংবিধান অনুসারে, প্রধানমন্ত্রীসহ সব মন্ত্রীকে সংসদ সদস্য হতে হয়। বিক্রমাসিংহের আগের সরকারের মন্ত্রিপরিষদে ২১ জন জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী এবং ৩৮ জন উপমন্ত্রী ছিলেন।
দিসানায়েকের জোট ন্যাশনাল পিপলস পাওয়ারে (এনপিপি) মোট রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ২৮। পার্লামেন্টে শুধু দিসানায়েকের দল জনতা বিমুক্তি পেরেমুনা (জেভিপি) পার্টির তিনজন এমপি ছাড়া বাকি দলগুলোর কোনও এমপি নেই। ফলে দেশটির ২২৫ সদস্যবিশিষ্ট পার্লামেন্টে মন্ত্রিসভা গঠন করতে সমস্যায় পড়তে হবে দিসানায়েকেকে।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে তিনি জনগণকে পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়ে আগাম নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। দেশটিতে সর্বশেষ সংসদীয় নির্বাচন হয়েছে ২০২০ সালে। এর সংবিধান অনুসারে, নির্বাচনের সাড়ে চার বছর পর প্রেসিডেন্ট চাইলে যেকোনও সময় পার্লামেন্ট ভেঙে দিতে পারেন।
শ্রীলঙ্কার সংবাদমাধ্যমগুলোর খবরে সংবিধান বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিপরিষদ ঘোষণা না করেই দিসানায়েকে পার্লামেন্ট ভেঙে দিতে পারবেন না। শ্রীলঙ্কার পার্লামেন্টের সেক্রেটারি জেনারেল কুশানি রোহানাধেরার উদ্ধৃতি দিয়ে দ্য ডেইলি মর্নিং জানিয়েছে, দিসানায়েকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পর যেকোনও সময় পার্লামেন্ট ভেঙে দিতে পারেন।
তিনি বলেন, “পার্লামেন্ট যেকোনও সময় ভেঙে দেওয়া যেতে পারে। তবে পরবর্তী সংসদ নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত সরকারের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার আগে প্রধানমন্ত্রী ও তত্ত্বাবধায়ক মন্ত্রিসভার নিয়োগ দিতে হবে।” এক্ষেত্রে দিসানায়েকেকে এমপি পদ থেকে সরে দাঁড়াতে হবে। তার জায়গায় জেভিপির অন্য একজন সদস্য স্থলাভিষিক্ত হতে পারেন। তবে এটি একটি দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়া।
এবিষয়ে কুশানি রোহানাধেরা বলেন, “যখন আমাকে দিসানায়েকের পদত্যাগ সম্পর্কে অবহিত করা হবে, আমি নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) জানাব যে, এমপি পদে একটি শূন্যপদ তৈরি হয়েছে। এরপর তারা (ইসি) গত সংসদ নির্বাচনে দিসানায়েকের পরে সবচেয়ে বেশি ভোট পাওয়া প্রার্থীর নাম উল্লেখ করে একটি গেজেট প্রকাশ করবে। তবে প্রেসিডেন্ট সেই শূন্যপদ পূরণ না করেও সংসদ ভেঙে দিতে পারেন।”
শ্রীলঙ্কার সংবিধানে সরকারের মন্ত্রিপরিষদে সর্বনিম্ন কয়জন মন্ত্রী থাকবেন তা নির্দিষ্ট নেই। মন্ত্রিপরিষদে সর্বোচ্চ কতজন মন্ত্রী থাকতে পারবেন, সে সম্পর্কে নির্দিষ্ট বিধান থাকলেও, সর্বনিম্ন সংখ্যা সম্পর্কে কোনও নির্দিষ্ট বিধান নেই।
রাজাপাকসে পরিবারের সীমাহীন দুর্নীতির কারণে দেশটি গুরুতর অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল। এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় রনিল বিক্রমাসিংহে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত অনুযায়ী করহার উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়েছিলেন। এই বছরের শুরুতে শ্রীলঙ্কা আইএমএফ থেকে একটি বেইলআউট প্যাকেজ পায়। এটি পাওয়ার শর্ত হিসেবেই করহার বাড়ানো হয়েছিল।
অপ্রত্যাশিতভাবে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিক্রমাসিংহের কর বাড়ানোর সিদ্ধান্ত তার বিরুদ্ধেই কাজ করেছে। অধিকাংশ ভোটারই দিসানায়কেকে সমর্থন করেছেন। কারণ তিনি করের বোঝা হ্রাস করার এবং আইএমএফসহ বিভিন্ন ঋণদাতার কাছ থেকে নেওয়া ঋণের শর্ত পুনর্বিবেচনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
ভোটারদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে গিয়ে দিসানায়েকে সম্ভবত একটি জটিল পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারেন। শ্রীলঙ্কার পার্লামেন্টে তার দল বা জোট যথেষ্ট সংখ্যক সদস্য না পাওয়া পর্যন্ত এই জটিলতা চলবে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
