শিশু-কিশোরদের আড্ডায় এক সময় অনাষ্ঠানিক ধাঁধাঁ প্রতিযোগিতা হতো। তার একটি হলো ‘হিল-বিল শুকালেও গাছের মাথায় পানি’। অন্যটি ‘হিল-বিল শুকালেও গাছের মাথায় কাদা’। চর্চা নেই বলে এখনকার শিশু-কিশোররা এ ধাঁধাঁর উত্তর দিতে পারবে না। এর প্রথমটির উত্তর গাছে থাকা ডাব/নারকেল এবং পরেরটির উত্তর গাছে থাকা পাকা তাল। যশোরের মণিরামপুরের গৃধরনগর প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে এই শুষ্ক মৌসুমেও নৌকা বাধা থাকে। মাঠ-ঘাট যখন শুকিয়ে চৌচির তখনো স্কুলটির এ দৃশ্য আজব বলে মনে হয়। স্মৃতিতে ভেসে ওঠে ওই ধাঁধাঁর কথা। গৃধরনগর প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠ পানিতে থৈ থৈ করছে। যশোরের দুঃখ ভবদহের অভিশাপ অর্ধ শতাব্দিকালের কষ্টের চিত্র এটি। একটি দৈনিকে এমন একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে ২১ জানুয়ারি। ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত স্কুলটি ভবদহের করাল গ্রাসে বিপর্যস্ত এখন। বছরের ১০ মাস ধরে পানিবন্ধী থাকে বিল খুকশিয়া পাড়ে অবস্থিত স্কুলটি। শুধু এই স্কুল কেন? মণিরামপুরের পূর্বাঞ্চলের বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় উপাসনালয়, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নিমজ্জিত। আর এলাকার সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের কথা তো বলাই বাহুল্য। বছরের পর বছর এ দুর্ভোগের কোন শেষ নেই এ অঞ্চলে। সমস্ত দুর্ভোগের কারণ হচ্ছে একটাই ভবদহ স্লুইস গেট। যশোরের মরণ ফাঁদ খ্যাত ভবদহ স্লুইস গেটের সৃষ্টি ১৯৬১ সালে।
বছর বিশেক এর সুফল পাওয়া গেলেও আশির দশকে যশোরের মণিরামপুর, কেশবপুর, সদর (আংশিক), অভয়নগর উপজেলা ও খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার মধ্যবর্তী ভবদহ এলাকার কৃষকরা জলাবদ্ধতার কারণে বিপর্যস্ত হতে থাকেন। ১৯৮৮ সাল থেকে এই জলাবদ্ধতা প্রকট আকার ধারণ করে। ওই এলাকার ২৭ বিলের পানি শ্রীহরি নদী দিয়ে অপসারিত হয় ভবদহ স্লুইস গেটের মাধ্যমে। এরপর হাজার হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে। কিন্তু দুর্ভোগের শেষ হয়নি এ অঞ্চলের মানুষের। সর্বশেষ বিএডিসি’র ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ের সেচযন্ত্রের মাধ্যমে পানি সেচের প্রকল্প চলছে। যাকে এলাকার ভুক্তভোগী জনসাধারণ বলছেন, ‘প্রহসন’।
গত অর্ধ শতাব্দি ধরে ভবদহের কারণে মানুষ দুর্বিসহ কষ্ট ভোগ করছে। এ নিয়ে আন্দোলন-সংগ্রাম কম হচ্ছে না। সরকারও প্রতিশ্রুতি দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু মানুষের সমস্যা সমস্যাই থেকে যাচ্ছে। তাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিশেষ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং বিএডিসি’র কার্যকরী ভূমিকা দরকার। এখন সরকারি সহযোগিতা দরকার। আর তা না হলে অস্তিত্ব রক্ষায় তাদের কঠোর আন্দোলনে নামা ছাড়া উপায় থাকবে না। কারণ এটা তাদের বাঁচা-মরার বিষয়।